Monday, January 7

পালিয়ে আসা সেই সৌদি তরুণীকে আশ্রয় দিতে চায় অস্ট্রেলিয়া-জার্মানি!

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
তুচ্ছ কারনে বাপ-ভাইয়ের হাতে খুন হওয়ার ভয়ে পালিয়ে যাওয়া এক সৌদি তরুণী ব্যাংককের একটি হোটেল কক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে স্বেচ্ছাবন্দী অবস্থায় তিনি টুইটারের মাধ্যমের জাতিসংঘের সাহায্য চেয়েছেন যেন তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ বন্ধ করা হয়। ইতিমধ্যে তাকে আশ্রয় দেবার জন্য টুইট করেছেন অস্ট্রেলিয়াসহ থাইল্যান্ডে থাকা জার্মানির রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা।
জানা যায়, নিজের পরিবারের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া এক সৌদি তরুণী ব্যাংকক বিমানবন্দরে এক হোটেল কক্ষে নিজেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। সোমবার তিনি কুয়েতে যাওয়ার ফ্লাইটে উঠতে অস্বীকার করেন।
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা চাইছেন তাকে কুয়েতে পরিবারের কাছে ফেরত পাঠাতে। কিন্তু এই তরুণী দাবি করছেন সেখানে পাঠালে পরিবার তাকে হত্যা করবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন রাহাফের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ব্যাংকক বিমানবন্দরে অবস্থানরত সৌদি নারীকে দেশে ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না। থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কাছে ওই নারীকে সৌদি ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশে ফিরে গেলে তার পরিবার তাকে হত্যা করতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা রাহাফকে আশ্রয় দেয়ার বন্দোবস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। একের এক টুইট করে সামাজিক মাধ্যমে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন এই তরুণী।
ইতিমধ্যেই তার সমর্থনে টুইট করেছেন থাইল্যান্ডে জার্মানির রাষ্ট্রদূত জর্জ স্মিডট। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর সারা হ্যানসন-ইয়াঙ অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, যাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে তড়িঘড়ি রাহাফকে অস্ট্রেলিয়ায় আনা যায়।
দক্ষিণ এশিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থী বিভাগের হাই কমিশনার ফিল রবার্টসন জানান, ‘রাহাফ যে চরম বিপদের মধ্যে রয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ওর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই বিমানবন্দরের মধ্যে হোটেলের ওই ঘরে জাতিসংঘকে ঢোকার অনুমতি দিতে হবে তাই প্রশাসনকে। আমাদের নির্দেশ মানতেই হবে। মেয়েটির বাবা সৌদি সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক। আর এমন ঘটনা নতুন নয়। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বহু দিন ধরেই হিংসার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েটির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বাড়ি ফিরলে সত্যি-ই মেরে ফেলা হতে পারে ওকে।’
মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে ইতিমধ্যেই যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে রাহাফের পরিবারের লোকজন। কিন্তু তাকে সমর্থন করেছেন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী তার এক বান্ধবী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই তরুণীও সৌদি আরব ছেড়ে পালিয়েছিলেন।
যেভাবে ঘটনার শুরু
রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনান তাঁর পরিবারের সঙ্গে কুয়েতে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। দুদিন আগে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। তিনি ব্যাংকক হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেখানে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার।
কিন্তু রবিবার ব্যাংককে নামার পরই নাকি সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে একজন সৌদি কূটনীতিক এসে তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করেন। রাহাফ দাবি করছেন, তার পাসপোর্টে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা রয়েছে এবং তিনি কখনোই থাইল্যান্ডে থাকতে চাননি।
অন্যদিকে ব্যাংককের সৌদি দূতাবাস দাবি করছে, রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনানের কোনো রিটার্ন টিকেট নেই, সেজন্যেই তাকে আটকে রাখা হয়েছে। আর যেহেতু তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য কুয়েতে থাকে, তাই তাকে সেখানেই পাঠানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, থাই কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবের সঙ্গে সহযোগিতা করছে, সে কারণেই বিমানটি ব্যাংককে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই সৌদি কর্মকর্তারা রাহাফের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান।
যেভাবে ঘটনা জানাজানি হলো
রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনান সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনার ব্যাপারে পোস্ট দিয়ে সবার নজর কাড়েন। তিনি তার এক বন্ধুকে নিজের টুইটার একাউন্ট ব্যবহার করতে দেন।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনান বলেন, ‘আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার এই ঘটনা এবং ছবি শেয়ার করি। এ কারণে আমার বাবা আমার ওপর খুবই ক্ষিপ্ত। আমি আমার নিজের দেশে পড়াশোনা এবং কাজ করতে পারি না। আমি স্বাধীনতা চাই, আমি আমার মতো করে পড়াশোনা করতে চাই, কাজ করতে চাই।’
সৌদি আরবে নারীকে ‘পুরুষ অভিভাবকত্ব আইনের’ অধীনে চলতে হয়। এর মানে হচ্ছে তাদের যে কোনো কিছু করতে একজন পুরুষ আত্মীয়ের অনুমতি নিতে হয়। চাকুরি, ভ্রমণ, বিয়ে থেকে শুরু করে একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পর্যন্ত এই অনুমতি লাগে।
রাহাফ মোহাম্মদ আল কুনান-টুইটারে লিখেছেন যে তিনি তার প্রকৃত নাম এবং বিস্তারিত তথ্য এখন প্রকাশ করছেন, কারণ তার আর হারানোর কিছু নেই। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন।
কেন তার নিরাপত্তা নিয়ে শংকা
মিস মোহাম্মদ আল-কুনান বিবিসিকে বলেছেন, তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছেন। তিনি আশংকা করছেন, তার পরিবার তাকে হত্যা করতে পারে।
থাই পুলিশের মেজর জেনারেল সুরাচাতে হাকপার্ন বিবিসিকে বলেন, মিস মোহাম্মদ আল-কুনান আসলে তাকে বিয়ে দেয়ার যে চেষ্টা চলছিল, সেখান থেকে পালিয়েছেন। তিনি এটিকে একটি ‘পারিবারিক ব্যাপার’ বলে বর্ণনা করেন।
উল্লেখ্য ২০১৭ সালের এপ্রিলে আরেক সৌদি নারীকে নিয়ে একই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। দিনা আলি লাসলুম নামের সেই নারী কুয়েত হতে ম্যানিলা হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাকে ম্যানিলা বিমানবন্দর হতেই তার পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হয়।
সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার পর তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা যায়নি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়