Tuesday, January 1

কানাইঘাটে বছরজুড়ে আলোচিত ছিল যেসব ঘটনা

মাহবুবুর রশিদ:
‘যেতে নাহি দেব হায়, তবু যেতে দিতে হয়,তবু চলে যায়।’ বিদায় দিতে না চাইলেও কালের আবর্তে আরও একটি বছর আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। নানা কারণেই ২০১৮ ছিল কানাইঘাটবাসীর কাছে আলোচিত-সমালোচিত।  বিশেষ করে  স্বামীর হাতে স্ত্রী,চাচার হাতে ভাতিজা,ভাগ্নের হাতে মামাসহ বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকান্ডের ঘটনা বছরজুড়ে ছিল আলোচিত। এছাড়াও বছরের শেষের দিকে পুরো ডিসেম্বর মাস ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলাপ-আলোচনায় মুখরিত। বছরের সেসব আলোচিত-সমালোচিত কয়েকটি ঘটনা ক্রমানুসারে তুলে ধরা হলো-

০৩ সন্তানের জননীর লাশ সীম বাগানের নিচে:
গত ২৩শে জানুয়ারি মঙ্গলবার নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তিন সন্তানের জননী বিধবা কুলছুমা বেগম (৪৫)। পরদিন বুধবার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ভবানীগঞ্জ খালের পাশে সীম বাগানের নিচে তার লাশ পাওয়া যায়। গত বছরের শুরুতেই ৩সন্তানের জননী হত্যার ঘটনাটি ছিল কানাইঘাটজুড়ে আলোচিত। 

স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন:
স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি কানাইঘাটজুড়ে ছিল বেশ আলোচিত। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের সোনাতনপুঞ্জি গ্রামে বাড়ির পাশে একটি ছড়ায় গোসল করতে যান জাহানারা বেগম। এ সময় তার স্বামীর চাচাতো ভাই সিরাজ উদ্দিন তার শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন। তা দেখতে পেয়ে স্বামী ইমন প্তি হয়ে সিরাজকে ধাওয়া করলে সে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে স্ত্রীকে পেয়ে কুপিয়ে গুরুত্বও জখম করে স্বামী ইমন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় র‌্যাবের একটি দল ঘাতক স্বামী ইমনকে সিলেট শহর থেকে গ্রেফতার করে।

ভাগ্নের হাতে মামা খুন:
আপন ভাগ্নের দায়ের কোপে মামা নাজিম উদ্দিন খুনের ঘটনাটিও ছিলো কানাইঘাটে বেশ আলোচিত । গত ২৯মার্চ বৃহস্পতিবার  উপজেলার বড়চতুল বাজারে ধারালো দা দিয়ে ভাগ্নে আলমাছ মামা নাজিমকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন। আহত অবস্থায় নাজিম উদ্দিনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাজিম উদ্দিন মারা যান। ওই ঘটনায় ঘাতক আলমাছ উদ্দিনকে  গ্রেপ্তার করে পুলিশ । 

ডাকাতের গুলিতে নিহত ১:
ডাকাতের গুলিতে ১জন নিহত হওয়ার খবর উপজেলাজুড়ে ছিলো বেশ আলোচনায়। গত ১৯শে এপ্রিল কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের ছোটদেশ আগফৌদ গ্রামে এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতিকালে ডাকাত দলের গুলিতে ইবজাল উদ্দিন (৪০) নামে একজন নিহত হন। ডাকাতদের হামলায় বাড়ির গৃহকর্তাসহ পরিবারের আরও ৩ সদস্য আহত হন। এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ তখন বেশ ক’জন ডাকাতকে আটক করে।

সালিশি বিচারে গিয়ে খুন:
গত ২৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার জমি সংক্রান্ত বিরোধের সালিশি বিচারে গিয়ে একপরে ধারালো ছুরিকাঘাতে ফারুক আহমদ (৫৫) নামে স্থানীয় এক মুরব্বী খুন হন। উপজেলার ভাউরবাগ ৪র্থ খন্ড গ্রামের সালিশি বিচাওে সৃষ্ট গন্ডগোল থামাতে  ফারুক আহমদ এগিয়ে গেলে তার উপর একপক্ষের ফখরুল ইসলাম দেশীয় ছোরা দিয়ে গলার ডান দিকে আঘাত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় ফারুক আহমদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় ঘাতক ফখরুল ইসলামকে সেময় গ্রেফতার করে  পুলিশ।

বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু:

গত ১মে বাড়ির পাশে বজ্রপাতে আপন দুই চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনাটি ছিলো মর্মান্তিক।  উপজেলার বড়চতুল ইউনিয়নের উপরবড়াই  গ্রামের করিম আলীর ছেলে তুফায়েল আহমদ তামিম ও ফখরুল ইসলামের ছেলে সালমান আহমদ হাওরে কর্মরত তাদের বাবার জন্য খাবার নিয়ে যাওয়ার পথে আকষ্মিক বজ্রপাতে নিহত হয়। দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে তখন পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। 

চাচার ছুরিকাঘাতে ভাতিজা খুন:
আপন চাচার ছুরিকাঘাতে ভাতিজা খুনের ঘটনাটি ছিল কানাইঘাটে আলোচিত। গত ৯মে উপজেলার সাতবাঁক ইউনিয়নের জুলাই পীরনগর গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে শাহেল আহমদ (২২) আপন চাচার হাতে খুন হন। চাচা কুতুব আলী, মরম আলী ও চাচাতো ভাইদের অপছন্দে বিয়ে করা ছিল শাহেলের ‘অপরাধ’।


ইমাম নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১:
মসজিদের ইমাম রাখাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার খবর পুরো উপজেলাজুড়ে ছিল আলোচিত- সমালোচিত। গত ১১মে শুক্রবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোসাইনপুর গ্রামে জুমার নামাজের পর দুই পরে সংঘর্ষে একই গ্রামের মৃত জোয়াদ আলীর পুত্র মোহাম্মদ আলী (৬০) নিহত হন। 

২৫০ টাকার জন্য যুবক খুন:
মাত্র ২৫০ টাকার জন্য আলমগীর হোসেন (১৯) নামের এক যুবককে খুন করা হয়। গত ২০জুলাই শুক্রবার উপজেলার জয়ফৌদ গ্রমের ফারুক আহমদের ছেলে মাহবুবুর রহমান মাত্র ২৫০ টাকা পাওনা আদায়ের জন্য আলমগীরকে আটকে রেখে নির্যাতন করে বাড়ীর পাশে রাস্তায় ফেলে দেন।
পরে আত্মীয়-স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐ দিন রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় কানাইঘাট থানা পুলিশ তখন দুজনকে আটক করে।

জমির বিরোধ নিয়ে সংঘর্ষ নিহত ১:
গত ১৬ আগস্ট কানাইঘাট পৌরসভার বায়মপুর গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পরে সংঘর্ষে ফারুক আহমদ (৪২) নামে একজন নিহত হন। এ ঘটনাটিও কানাইঘাটে ছিলো আলোচিত।

মুহিবুর রহমান হত্যাকান্ড:
শুধু কানাইঘাটে নয়,পুরো সিলেটজুড়েই আলোচিত ছিল কানাইঘাটের মুহিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড। গত ৩অক্টোবর কানাইঘাট পৌরসভার রায়গড় গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন মুহিব। পরে ২৪ অক্টোবর তার ছোট ভাই শাহাব উদ্দিন কানাইঘাট থানায় নিখোঁজ মর্মে সাধারণ ডায়রি করেন। এর আগে গত ৮ অক্টোবর সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের একটি ব্রিজের নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় কানাইঘাটের মুহিব রহমানের লাশ পাওয়া যায়। সেদিন লাশটির পরিচয় না পাওয়ায় গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে মুহিবকে বেওয়ারিশ হিসেবে সিলেটে দাফন করে।

থানায়ডায়রি দায়েরের পর পরই কানাইঘাট থানা পুলিশ গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশের কাছ থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশের ছবি গত ২৮ অক্টোবর মুহিবের ছোট ভাই শাহাব উদ্দিনকে দেখালে সে লাশটি তার ভাইয়ের বলে শনাক্ত করেন।

ওই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।   
 হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার দায়ে পুলিশ মুহিবুর রহমানের শাশুড়ি ও ভায়রাকে গ্রেফতার করে।

খাসিয়ার গুলিতে যুবক নিহত:
গত ১৯ অক্টোবর শনিবার কানাইঘাট সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে মামুন রশীদ নামের এক যুবক নিহতের ঘটনাটি নিয়েও উপজেলাজুড়ে কম মাতামাতি হয়নি। উপজেলার সোনারখেওড় গ্রামের রইছ আলীর পুত্র দিনমজুর মামুন ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন। ফেরার পথে খাসিয়ারা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
পরে ময়না তদন্ত ছাড়াই তার লাশ দাফন করা হয়। লাশ দাফনের ৮দিন পর আদালতের নির্দেশে কবর থেকে মামুনের লাশ  উত্তোলন করা হয়।


কানাইঘাট নিউজ ডটকম/০১ জানুয়ারি ২০১৮ ইং

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়