Monday, January 7

স্ত্রীকে হারিয়ে ভারাক্রান্ত রেলমন্ত্রী

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
বঙ্গভবনে আজ সোমবার নতুন রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন নুরুল ইসলাম সুজন। কিন্তু তার এই খুশির দিনে তার পাশে নেই জীবনসঙ্গিনী স্ত্রী নিলুফার ইসলাম। নির্বাচনের ঠিক আগের দিন মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হওয়ায় যিনি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হতেন, তাকে হারিয়ে আজ ভারাক্রান্ত নুরুল ইসলাম সুজন নিজেও।
তিন সন্তানের জননী নিলুফার ইসলাম ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অত্যন্ত হাসিখুশি প্রাণবন্ত একজন মানুষ। ভালোবাসতেন অতিথি আপ্যায়ন করতে। কখনো রেগে উচ্চস্বরে কেউ কথা বলতে শোনেনি তাকে।
খালার স্মৃতিচারণ করে নিলুফার ইয়াসমিনের বোনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার খালা আমাদের ভীষণ ভালোবাসতেন। খালু অনেক ব্যস্ত থাকলেও কখনো তা নিয়ে অভিযোগ করতে দেখিনি খালাকে। বাসায় সবসময়ই অনেক অতিথি থাকতেন কিন্তু তা নিয়ে কখনো বিরাগভাজন হননি খালা। খুবই নরম মনের মানুষ ছিলেন তিনি।
স্ত্রীর মৃত্যুর কষ্টকে সঙ্গী করে সোমবার নিয়েছেন নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি এবারই প্রথম মন্ত্রী হলেন। আর ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথম জাতীয় সংসদের মন্ত্রীত্ব পেলেন পঞ্চগড়বাসী।
এদিকে নিলুফার ইসলামের স্বজনদের বরাত দিয়ে জানা যায়, মো. নুরুল ইসলাম সুজন পেশায় আইনজীবি ও একইসাথে রাজনীতিবিদ হওয়ায় সংসারে খুব বেশি সময় দিতে না পারলেও নিলুফার সামলে নিতেন সব। সুখে-দুঃখে সবকিছুতেই ছিলেন স্বামীর ছায়ার মতো।
আর তাই নির্বাচনী প্রচারণায়ও থাকতে চেয়েছিলেন স্বামীর সাথে। আর এতেই যেনো বাধে বিপত্তি। পঞ্চগড়ের তীব্র ঠাণ্ডায় বাইরে থাকতে যেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আক্রান্ত হন নিউমোনিয়ায়। এরপর নিউমোনিয়ার সাথে এক সপ্তাহের বেশি লড়াই করে মারা যান তিনি।
গত ২৩ ডিসেম্বর তিনি নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে প্রথমে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ২৪ ডিসেম্বর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার আরো অবনতি হলে গত ২৮ ডিসেম্বর তাকে এ্যায়ার অ্যাম্বুলেন্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।
হাইকোর্টের মাজার সংলগ্ন মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতিসহ কয়েকজন বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের পরদিন ৩১ ডিসেম্বর পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ময়দান দিঘী ইউনিয়নের মহাজন পাড়া এলাকায় পারিবারিক গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
প্রসঙ্গত, ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নূরুল ইসলাম সুজন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ডাকসুর বিজ্ঞান মিলনায়তন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ঢাবি’র সিনেট সদস্য ছিলেন। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহআইন বিষয়ক সম্পাদক ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
আওয়ামী লীগের এ নেতা এবারসহ তিন বার পঞ্চগড়-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম অংশগ্রহণ করেন নূরুল ইসলাম সুজন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয় বিএনপির প্রার্থী মোজাহার হোসেন।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত করে প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী এমরান আল আমিনকে পরাজিত করে দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রার্থী ফরহাদ হোসেন আজাদকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নূরুল ইসলাম সুজন পেশায় সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলারও একজন আইনজীবী ছিলেন তিনি। তিনি পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের দুই বারের সভাপতি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়