কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনি বর্তমানে পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম জানান, গঠিত হচ্ছে ৪৬ সদস্যের মন্ত্রিসভা। এই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী থাকছেন। এর মধ্যে আ হ ম মোস্তফা কামাল এমপিকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের ১১তম অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ক্লিন ইমেজের এ রাজনীতিবিদ ও ক্রিকেট সংগঠক।
বঙ্গভবনে আগামীকাল (সোমবার) বিকেলে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর থেকেই নতুন মন্ত্রীরা তাদের দায়িত্ব শুরু করবেন। এর আগে রোববার দুপুর থেকে শপথ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা ফোন করেন সংশ্লিষ্টদের। গণভবন থেকে বেলা দেড়টার দিকে তালিকা নিয়ে সচিবালয়ে ফেরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, অর্থমন্ত্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে অর্থ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রয়েছে। একটি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও প্রয়োগের দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে তত্ত্বীয় জ্ঞানের তুলনায় ব্যবহারিক বা বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কাউকেই নতুন অর্থমন্ত্রী বানানো জরুরি। এ জন্যই আ হ ম মুস্তফা কামালকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেয়া হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের রেকর্ড গড়েছেন ডজনখানেক প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে অনেক হেভিওয়েটের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বিপরীতে ক্ষমতাসীন দলের বহু প্রার্থী লাখ লাখ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
ভোট প্রাপ্তির দিক থেকে অতীতের যে কোনো রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছেন এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকজন প্রার্থী। স্বাভাবিকভাবেই ভোট প্রাপ্তির দিক থেকে ইতিহাস গড়া এসব প্রার্থী নৌকা মার্কার।
এরমধ্যে মোস্তফা কামালও রয়েছেন। তিনি কুমিল্লা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে ৪ লাখ ৫ হাজার ২৯৯ ভোট পেয়ে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম হাজী বাবরু মিয়া এবং মা মিসেস সায়েরা খাতুন।
তিনি ১৯৭০ সালে তদানিন্তন সমগ্র পাকিস্তানের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১ম স্থান অর্জন করেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে কমার্সে সম্মান স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া আইন শাস্ত্রেও তিনি স্নাতক ডিগ্রির অধিকারী।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে তার সাফল্যের জন্যই তিনি আলোচনায় চলে আসেন। তিনি মন্ত্রণালয়ে যেমন সফল, তেমনি একজন সফল ব্যবসায়ীও। রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছেন। মেধার স্বীকৃতি হিসেবে শিক্ষাজীবনেই তিনি 'লোটাস' উপাধি পেয়েছিলেন।
রাজনীতিতে মোস্তফা কামালের হাতেখড়ি ছাত্র জীবন থেকেই। কলেজ জীবনের পুরোসময়ই তিনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯'র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০'র ঐতিহাসিক নির্বাচনের সময় তিনি তার এলাকায় আওয়ামী লীগের একজন বিশিষ্ট সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৯৬ সালে কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময়ে তিনি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সদস্য, বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, যাকাত বোর্ডের সদস্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৪ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত আছেন। পাশাপাশি ২০০৬ সাল থেকে তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মোস্তফা কামাল বর্তমানে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগের কাউন্সিলেও তিনি দলের এই পদে আসীন ছিলেন।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোস্তফা কামাল কুমিল্লা-১০ নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৯-১৩ এই সময়কালে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার সময় বাংলাদেশে ২০১১ এ অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এই আসরটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১) আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করার গৌরব লাভ করে।
২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে তিনি আইসিসির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি আইসিসির সহসভাপতি, অডিট কমিটির সভাপতি এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সর্বশেষ মোস্তফা কামাল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১০ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন। সে মন্ত্রিসভায় তাজউদ্দীন আহমদকে দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন বঙ্গবন্ধু। তাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী। তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর ড. আজিজুর রহমান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
এরপর প্রধান সামরিক প্রশাসক লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান, ড. এম এন হুদা, এম সাইফুর রহমান, এএমএ মুহিত, এম সায়েদুজ্জামান, মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম, ড. ওয়াহিদুল হক, এসএএমএস কিবরিয়া, মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়