কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
ছোট থেকে আমৃত্যু মানুষকে ঘিরেই আমাদের জীবন। পরিবারের সদস্য ছাড়াও অসংখ্য মানুষের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আর এরপর চাকরিবাকরি—জীবনকে এমন সোজাসাপ্টা হিসেবে পর্যবেক্ষণ করলেও দেখা যাবে, এই দীর্ঘ যাত্রায় হাজারো মানুষের সঙ্গে আমরা পরিচিত হয়েছি। সবার চেহারা, রং একদম আলাদা। প্রশ্ন আসতেই পারে, কতজনের চেহারা আমাদের মনে আছে?
আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক কত জনের চেহারা ধারণ করতে সক্ষম? এর উত্তর জানলে বিস্মিত হবেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানিয়েছে, একটা মানুষ গড়ে পাঁচ হাজার চেহারা মনে রাখতে পারে।
ব্যক্তিগত জীবন ও মিডিয়া থেকে অংশগ্রহণকারীরা ঠিক কতগুলো মুখ স্মরণে আনতে পারেন, তার ওপর গবেষণা করেছেন একদল বিশেষজ্ঞ। অনেক বিখ্যাত মুখও তাঁরা দ্রুত চিহ্নিত করতে পেরেছেন।
মানুষ সাধারণত ছোট দলে ভাগ হয়ে বাস করে। তার চারপাশে শ’খানেক মানুষ তো থাকেই। গবেষণা নিবন্ধটি বলছে, মানুষের মুখাবয়ব চিহ্নিতকরণ সক্ষমতা অনেক। হাজারো চেহারা মনে রাখতে পারে মানুষ।
আধুনিক যুগে আমরা শুধু প্রত্যেক্ষ বা মুখোমুখি যোগাযোগই করি না, আন্তর্জালিক যোগাযোগও করি। সেখানে বহু মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম... ভার্চুয়াল এ যুগে অনেকের সঙ্গে আমাদের খুব সখ্য, কিন্তু কখনো দেখা হয়নি একটিবারও! তবুও তাঁদের চেহারা চিহ্নিত করতে পারে মানুষ। চেহারা চিহ্নিতকরণের জন্য একটি সফটওয়্যারও আছে, যা বিমানবন্দর ও পুলিশি তদন্তে ব্যবহার করা হয়।
গবেষক দলটির প্রধান ড. রব জেনকিনস বলেছেন, ‘আমাদের গবেষণার মূল ফোকাস ছিল, প্রকৃতপক্ষে মানুষ কত সংখ্যক চেহারা মনে রাখতে পারে—আমরা এখনো জানি না, আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক কী পরিমাণ অবয়ব স্মরণে রাখতে সক্ষম।’ তবে একেকজনের সামর্থ্য একেক রকম, এটাও বলেন তিনি।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা এক ঘণ্টা ব্যয় করেন তাঁদের স্মরণে থাকা মুখগুলোর নাম লিখতে। যেমন স্কুলে যাঁদের সঙ্গে মেশা হয়েছিল, চাকরিতে সহকর্মীরা অথবা পরিবার বা আত্মীয় ইত্যাদি। পরে তাঁরা ধীরে ধীরে বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী, রাজনীতিকসহ অন্যান্য মাধ্যমের আইকনদের নামও লিখতে থাকেন।
শুরুতে অংশগ্রহণকারীরা ঝটপট নাম লিখতে থাকেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কঠিন হয়ে পড়ে। এক ঘণ্টা শেষে তা হয় কঠিনতর! এই গতির ওপর গবেষকরা অনুমান করেন, তাঁরা ঠিক কতগুলো অবয়ব স্মরণ করতে পারবেন। অংশগ্রহণকারীদের হাজারটা বিখ্যাত মানুষের ছবিও দেখানো হয় এবং জিজ্ঞেস করা হয়, কাদের চিনতে পারছেন তাঁরা।
ফলাফল আসে, অংশগ্রহণকারীরা এক হাজার থেকে ১০ হাজারের মতো মুখ স্মরণে আনতে পারছেন। তবে মুখাবয়ব স্মরণে রাখার প্রাকৃতিক ব্যাপারটাও মাথায় রেখেছিলেন ড. জেনকিনস ও তাঁর সহযোগীরা। এ ছাড়া এটাও একটা কারণ, মানুষ আসলে কথা বলার সময় তাঁর চেহারার দিকে ঠিক
কতটা মনোযোগ দিচ্ছে। চেহারা মনে পড়াটা এর ওপরও নির্ভর করে। একজন মানুষের ওপর অনেক কিছুই প্রভাব ফেলে। সামাজিক পরিবেশও ব্যক্তির ভেতর প্রতিফলিত হয়। ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসরত ব্যক্তি আর অল্পসংখ্যক মানুষের বসতিতে বেড়ে ওঠা ব্যক্তির মানুষ চেনার সামর্থ্য নিশ্চয়ই এক নয়।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ডেকান ক্রনিকেল জানিয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের বয়সের গড় ছিল ২৪। পুরো গবেষণা নিবন্ধটি রয়্যাল সোসাইটির সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়