কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
এবার যেন শীতের
প্রকৃত স্বাদের মহত্ত্ব পাচ্ছে বাঙালি জাতি! শীতের সকালে ঘন কুয়াশার
ধোঁয়ায় ক্ষেত থেকে মটরশুটি তুলেছেন কখনো? গায়ে চাদর জড়িয়ে চোখ-মুখে ভেজা
কুয়াশা মেখে গাছ থেকে নামানো খেজুর রস খেয়েছেন কখনো? গরম ভাপা পিঠা
তাড়াতাড়ি খেতে গিয়ে মুখ পুড়িয়েছেন কখনো? শীতের দ্রষ্টব্য এখন উত্তরে ওই
হিমেল হাওয়া। নবান্ন না থাক, আল্পনা না থাক শীতকাল তবু চেনা যায়।
ধানে-গানে-পিঠে-পুলিতে, খেজুরের রসে কিংবা অতিথি পাখির কূজনে।
শীতের কাছে মানুষের অনেক পাওনা কিন্তু সব পাওনা যেন দিতে পারছেনা শীত। অপূর্ণতার ছায়া যেন কোথাও করেছে ভর। আকাশটা কেমন শূন্য মনে হচ্ছে ঝিলগুলো খাঁ খাঁ করছে কাউকে পাওয়ার আশায়। কি এমন অপূর্ণতা?
ধানে-গানে-পিঠে-পুলিতে কিংবা খেজুরের রসে ভরে উঠছে গ্রাম বাংলা তবুও কিসের কূজনের ডাক যেন শুনতে পাই না।
উত্তরের এমন ফুরফুরে হাওয়া। এ সময়টাতেই যেন ডানা ছড়িয়ে দিত কূজন ডাকা অতিথি পাখিরা। ডানা মেলে ভেসে আসে উত্তরের অতিথি শীতের পাখিরা। প্রতি বছরই ওরা আসে। ঝাঁকে ঝাঁকে। নানা রং আর আকৃতির সেসব পাখির কূজনে মুখরিত হয় নদীপাড়, বিল-ঝিল, বন-বাদাড়সহ পুরো বাংলা। প্রতি শীতেই বাংলাদেশের জলাশয়গুলো ছেয়ে যায় যাযাবর পাখির ঢলে। ওদেরই আশেপাশে ভিড় জমায় বিচিত্র সব দেশি পাখি। শুভ্র আকাশে, নিষ্পন্দ বাতাসে ওরা মেলে ধরে ডানা। সৌন্দর্যে অতিথি পাখির আনাগোনা যেন ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করে শীতের পূর্ণতায়।
অক্টোবরের শুরু থেকেই অতিথি পাখিদের আগমন শুরু হয় বাংলাদেশে। শীতটা কাটিয়ে আবার ওরা পাড়ি জমায় নিজ দেশে। এরই ভেতর পাখি প্রেমিকরা মন ভরে দেখে নেয় তাদের। প্রতি বছর এ সময়ের জন্য অপেক্ষা করে অনেকেই। কিন্তু এখন জানুয়ারির মাঝামঝি চলছে এবার যেন কিছু একটা হয়েছে। বংলাদেশর ঝিলগুলো এমনিতেই অতিথি পাখির জন্য বিখ্যাত। এবার এই প্রথমবারের মতো দেখা গেল, ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি সেখানে লুটোপুটি খেলছে না।
কি হয়েছে ওদের? ঝিলগুলো কি তাদের লুটোপুটি খেলার আর উপযোগী নেই? ওরা বুঝলো বুঝি বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ আর নেই এদেশে। দেরি করেনি ওরা আর, দ্রুতই চলে গেছে বাঙালির ঐতিহ্য থেকে। প্রতি বছরই অল্প কিছু পাখি পরিবেশের অবস্থা দেখার জন্য আসে। এরা ফিরে গিয়ে দলের পাখিদের জানায় পরিবেশের অবস্থা কী রকম। এ পাখিগুলো যদি ফিরে গিয়ে বলে পরিবেশ তাদের অনুকূলে নেই তাহলে মৌসুমে আর কোনো অতিথি পাখির দেখা মিলবে না। অতিথিরা অন্য আশ্রয়েই চলে যাবে বাংলাকে ছেড়ে।
লাখো লাখো পাখি এ সময়টাতে কোথা থেকে উড়ে আসে, আবার কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। প্রায় দুই হাজার বছর ধরে চলে আসছে পাখিদের এই সাময়িক আসা-যাওয়া। পাইস্টোসিন হিমযুগে পৃথিবীর উত্তর বরফে ঢেলে গেলে বাঁচার তাগিদে পাখিরা ওই অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় দক্ষিণ গোলার্ধে। অবস্থা বদলে গেলে পাখিরা আবার ফিরে আসে নিজ ভূখন্ডে এভাবে পাখিদের জীবন জন্ম নেয় স্থানান্তরে এ যাওয়া-আসা। দিনের আলো যখন উত্তর গোলার্ধে কমতে থাকে, পাখিরা প্রজননের দেশান্তরে যাওয়ার জন্যে চঞ্চল হয়ে ওঠে ওরা।
দেশান্তরী এসব পাখির মূল বাসভূমি শীতপ্রধান এলাকা। সাইবেরিয়াসহ হিমালয়ের বনাঞ্চলে এদের বাস। শীত বাড়তেই এরা পাড়ি জমায় হাজার মাইল দূরদেশে। প্রাণী বিজ্ঞানীদের কথায়, বাংলাদেশের পাখি দুই শ্রেণির। আবাসিক আর অনাবাসিক। অতিথি পাখিরা অনাবাসিক শ্রেণির।
শীতের মৌসুমে আসা অতিথি পাখিদের মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, পাতিহাঁস, লেজহাঁস, পেরিহাঁস, চমাহাঁস, জলপিপি, রাজসরালি, লালবুবা, পানকৌড়ি, বক, শামুককনা, চখাচখিম সারস, কাইমা, শ্রাইক, গাঙ কবুতর, বনহুর, হরিয়াল, নারুন্দি, মানিকজোড় নাম না জানা কতো কি পাখি। প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৪-১৫ প্রজাতির হাঁস ছাড়াও গাগিনি, গাও, ওয়েল, পিগটেইল, ডাটাস্মক, থাম, আরাথিল, পেরিক্যান, পাইজ, শ্রেভির, বাটান এসব পাখি এসে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাখিদের মধ্যে পৃথিবীর চৌম্বক শক্তিকে সূক্ষ্মভাবে উপলব্ধি করার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা আছে। পথের নিশানা এদের ভুল হয় না কখনো। কোথায় কত উচ্চতায় অনুকূলে বাতাস মিলবে, সেটি অনুভব করার শক্তিও আছে এদের। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাসও এরা আগেভাগেই পেয়ে যায়। সে জন্যে নিজ দেশে যখন শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে, তখনই দেশত্যাগ করতে শুরু করে ওরা।
এই বেদওয়াতী অতিথিরা, ওরা কেন আসবে বাংলাদেশে? কী এমন আকর্ষণ আছে এখানে? ওদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই তো শুরু হয় পাখি শিকারিদের আনাগোনা। শিকারির রক্তে জাগে খুনের নাচন। বন্দুকের নলে চকচকে করে লোভ। ৭৩-এ বন্যা জন্তু (সংরক্ষণ) অধ্যাদেশ অনুসারে জীবজন্তু হত্যা, ফাঁদ পেতে ধরা বা অন্য কোনো উপায়ে ক্ষতি করা আইনত দন। কাগুজে এ আইনের ভয়ে শিকারিরা দমে না। শৌখিন পাখি শিকারিদের উপদ্রব তাতে খানিকটা কমলেও পেশাদার পাখি শিকারিদের তৎপরতা একটুও কমেনি। শীতের পাখি আসা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওর এলাকায় ধূম পড়ে যায়। নানা রকমের জাল, পিঞ্জর, ফাঁদ তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। হাওর এলাকায় মানুষের নির্ভরতা বছরে একটি মাত্র ফসলের উপরে, সে কারণে অনেকেই শীত মৌসুমে পাখি শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করে। পাখি শিকার মানেই নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা আর নৃশংসতা। বাজারে দশ-বিশ-একশ টাকায় অতিথি পাখি বিক্রি হতে দেখা যায়। রাতের বেলা জালের সাহায্যে ফাঁদ পেতে বন্দি করা হয় পাখিদের। দিনে এয়ারগান, বন্দুক, রিভলবার- এসব ব্যবহার করে মারা হয়। এখানে একটি ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়া দরকার যে, পাখি শিকারের অস্ত্র হিসেবে প্রধানত এয়ারগান ব্যবহার করা হয়। কার্যকারিতার দিক থেকে পাখি মারা ছাড়া আর কোনো কাজে এয়ারগানের ব্যবহার নেই। এয়ারগান কেনা আর লাইসেন্স করার উদ্দেশ্য একটাই পাখি শিকার।
আমাদের দেশ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ কতৃপক্ষরা এসব যে জানেন না, তা নয়। ভালোই জানেন তারা। কিন্তু সব জেনেও কেন এয়ারগান ব্যবহার অবৈধ ঘোষণা করা হচ্ছে না?
শুধু সৌন্দর্যই নয়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যও পাখিদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন আছে। পাখি হলো প্রকৃতির কীটনাশক। পাখির সংখ্যা কমে গেলে কীটপতঙ্গের অত্যাচারে অসম্ভব হয়ে পড়বে ফসল ফলানো। সেটিই যদি হয়, তাহলে নির্ভর করতেই হবে কীটনাশকের ওপর। কিন্তু এটি তো পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যে দেশে পাখি বেশি সে দেশে পর্যটকের সংখ্যাও বেশি। কাজেই পাখি ঘাটতি অবশ্যই উদ্বেগের ব্যাপার।
যে পাখি নিসর্গকে এত সুন্দর করে, চোখকে এত প্রশান্তি দেয়, সৌন্দর্য চেতনাকে এত আলোড়িত করে, নিরীহ সে পাখির প্রাণ নেওয়াতে কী এত সুখ মানুষের?
পাখিরা আসুক। ওদের কলকাকলীতে ভরে উঠুক আমাদের চারপাশ। শিকারির বন্দুকের আঘাতে যেন ডানা ভেঙে থুবড়ে না পড়ে কোনো পাখি। সেক্ষেত্রে প্রচলিত আইনকে প্রয়োগ করতে হবে কার্যকরভাবে। তৎপরতা বাড়াতে হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনকে। পাশাপাশি হাওর এলাকার মানুষদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান দরকার। মানুষের ক্ষুধায় সবকিছু দাহ্য, পাখি তো বটেই। প্রকাশ্যে রাজপথে পাখির বিপণন বন্ধ হলে যে পাখি শিকার প্রবণতা কমে যাবে, সেটি সহজেই বোঝা যায়। পাখি নিধনের তান্ডব বন্ধে বেশি কিছু নয়, ওদের জন্য শ্রেফ একটু ভালোবাসা, একটু প্রাণবিক উষ্ণতা চাই। আমাদের, এ মানুষদেরই তো অতিথি ওসব বর্ণিল পাখি।
আমরা চাই সবকিছু চাপিয়ে সুন্দর অতিথি পাখিময় শীতের সকাল। সরকার যদি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পাখিদের আসা-যাওয়ায় প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
শীতের কাছে মানুষের অনেক পাওনা কিন্তু সব পাওনা যেন দিতে পারছেনা শীত। অপূর্ণতার ছায়া যেন কোথাও করেছে ভর। আকাশটা কেমন শূন্য মনে হচ্ছে ঝিলগুলো খাঁ খাঁ করছে কাউকে পাওয়ার আশায়। কি এমন অপূর্ণতা?
ধানে-গানে-পিঠে-পুলিতে কিংবা খেজুরের রসে ভরে উঠছে গ্রাম বাংলা তবুও কিসের কূজনের ডাক যেন শুনতে পাই না।
উত্তরের এমন ফুরফুরে হাওয়া। এ সময়টাতেই যেন ডানা ছড়িয়ে দিত কূজন ডাকা অতিথি পাখিরা। ডানা মেলে ভেসে আসে উত্তরের অতিথি শীতের পাখিরা। প্রতি বছরই ওরা আসে। ঝাঁকে ঝাঁকে। নানা রং আর আকৃতির সেসব পাখির কূজনে মুখরিত হয় নদীপাড়, বিল-ঝিল, বন-বাদাড়সহ পুরো বাংলা। প্রতি শীতেই বাংলাদেশের জলাশয়গুলো ছেয়ে যায় যাযাবর পাখির ঢলে। ওদেরই আশেপাশে ভিড় জমায় বিচিত্র সব দেশি পাখি। শুভ্র আকাশে, নিষ্পন্দ বাতাসে ওরা মেলে ধরে ডানা। সৌন্দর্যে অতিথি পাখির আনাগোনা যেন ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করে শীতের পূর্ণতায়।
অক্টোবরের শুরু থেকেই অতিথি পাখিদের আগমন শুরু হয় বাংলাদেশে। শীতটা কাটিয়ে আবার ওরা পাড়ি জমায় নিজ দেশে। এরই ভেতর পাখি প্রেমিকরা মন ভরে দেখে নেয় তাদের। প্রতি বছর এ সময়ের জন্য অপেক্ষা করে অনেকেই। কিন্তু এখন জানুয়ারির মাঝামঝি চলছে এবার যেন কিছু একটা হয়েছে। বংলাদেশর ঝিলগুলো এমনিতেই অতিথি পাখির জন্য বিখ্যাত। এবার এই প্রথমবারের মতো দেখা গেল, ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি সেখানে লুটোপুটি খেলছে না।
কি হয়েছে ওদের? ঝিলগুলো কি তাদের লুটোপুটি খেলার আর উপযোগী নেই? ওরা বুঝলো বুঝি বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ আর নেই এদেশে। দেরি করেনি ওরা আর, দ্রুতই চলে গেছে বাঙালির ঐতিহ্য থেকে। প্রতি বছরই অল্প কিছু পাখি পরিবেশের অবস্থা দেখার জন্য আসে। এরা ফিরে গিয়ে দলের পাখিদের জানায় পরিবেশের অবস্থা কী রকম। এ পাখিগুলো যদি ফিরে গিয়ে বলে পরিবেশ তাদের অনুকূলে নেই তাহলে মৌসুমে আর কোনো অতিথি পাখির দেখা মিলবে না। অতিথিরা অন্য আশ্রয়েই চলে যাবে বাংলাকে ছেড়ে।
লাখো লাখো পাখি এ সময়টাতে কোথা থেকে উড়ে আসে, আবার কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। প্রায় দুই হাজার বছর ধরে চলে আসছে পাখিদের এই সাময়িক আসা-যাওয়া। পাইস্টোসিন হিমযুগে পৃথিবীর উত্তর বরফে ঢেলে গেলে বাঁচার তাগিদে পাখিরা ওই অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় দক্ষিণ গোলার্ধে। অবস্থা বদলে গেলে পাখিরা আবার ফিরে আসে নিজ ভূখন্ডে এভাবে পাখিদের জীবন জন্ম নেয় স্থানান্তরে এ যাওয়া-আসা। দিনের আলো যখন উত্তর গোলার্ধে কমতে থাকে, পাখিরা প্রজননের দেশান্তরে যাওয়ার জন্যে চঞ্চল হয়ে ওঠে ওরা।
দেশান্তরী এসব পাখির মূল বাসভূমি শীতপ্রধান এলাকা। সাইবেরিয়াসহ হিমালয়ের বনাঞ্চলে এদের বাস। শীত বাড়তেই এরা পাড়ি জমায় হাজার মাইল দূরদেশে। প্রাণী বিজ্ঞানীদের কথায়, বাংলাদেশের পাখি দুই শ্রেণির। আবাসিক আর অনাবাসিক। অতিথি পাখিরা অনাবাসিক শ্রেণির।
শীতের মৌসুমে আসা অতিথি পাখিদের মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, পাতিহাঁস, লেজহাঁস, পেরিহাঁস, চমাহাঁস, জলপিপি, রাজসরালি, লালবুবা, পানকৌড়ি, বক, শামুককনা, চখাচখিম সারস, কাইমা, শ্রাইক, গাঙ কবুতর, বনহুর, হরিয়াল, নারুন্দি, মানিকজোড় নাম না জানা কতো কি পাখি। প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৪-১৫ প্রজাতির হাঁস ছাড়াও গাগিনি, গাও, ওয়েল, পিগটেইল, ডাটাস্মক, থাম, আরাথিল, পেরিক্যান, পাইজ, শ্রেভির, বাটান এসব পাখি এসে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাখিদের মধ্যে পৃথিবীর চৌম্বক শক্তিকে সূক্ষ্মভাবে উপলব্ধি করার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা আছে। পথের নিশানা এদের ভুল হয় না কখনো। কোথায় কত উচ্চতায় অনুকূলে বাতাস মিলবে, সেটি অনুভব করার শক্তিও আছে এদের। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাসও এরা আগেভাগেই পেয়ে যায়। সে জন্যে নিজ দেশে যখন শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে, তখনই দেশত্যাগ করতে শুরু করে ওরা।
এই বেদওয়াতী অতিথিরা, ওরা কেন আসবে বাংলাদেশে? কী এমন আকর্ষণ আছে এখানে? ওদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই তো শুরু হয় পাখি শিকারিদের আনাগোনা। শিকারির রক্তে জাগে খুনের নাচন। বন্দুকের নলে চকচকে করে লোভ। ৭৩-এ বন্যা জন্তু (সংরক্ষণ) অধ্যাদেশ অনুসারে জীবজন্তু হত্যা, ফাঁদ পেতে ধরা বা অন্য কোনো উপায়ে ক্ষতি করা আইনত দন। কাগুজে এ আইনের ভয়ে শিকারিরা দমে না। শৌখিন পাখি শিকারিদের উপদ্রব তাতে খানিকটা কমলেও পেশাদার পাখি শিকারিদের তৎপরতা একটুও কমেনি। শীতের পাখি আসা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওর এলাকায় ধূম পড়ে যায়। নানা রকমের জাল, পিঞ্জর, ফাঁদ তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। হাওর এলাকায় মানুষের নির্ভরতা বছরে একটি মাত্র ফসলের উপরে, সে কারণে অনেকেই শীত মৌসুমে পাখি শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করে। পাখি শিকার মানেই নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা আর নৃশংসতা। বাজারে দশ-বিশ-একশ টাকায় অতিথি পাখি বিক্রি হতে দেখা যায়। রাতের বেলা জালের সাহায্যে ফাঁদ পেতে বন্দি করা হয় পাখিদের। দিনে এয়ারগান, বন্দুক, রিভলবার- এসব ব্যবহার করে মারা হয়। এখানে একটি ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়া দরকার যে, পাখি শিকারের অস্ত্র হিসেবে প্রধানত এয়ারগান ব্যবহার করা হয়। কার্যকারিতার দিক থেকে পাখি মারা ছাড়া আর কোনো কাজে এয়ারগানের ব্যবহার নেই। এয়ারগান কেনা আর লাইসেন্স করার উদ্দেশ্য একটাই পাখি শিকার।
আমাদের দেশ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ কতৃপক্ষরা এসব যে জানেন না, তা নয়। ভালোই জানেন তারা। কিন্তু সব জেনেও কেন এয়ারগান ব্যবহার অবৈধ ঘোষণা করা হচ্ছে না?
শুধু সৌন্দর্যই নয়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যও পাখিদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন আছে। পাখি হলো প্রকৃতির কীটনাশক। পাখির সংখ্যা কমে গেলে কীটপতঙ্গের অত্যাচারে অসম্ভব হয়ে পড়বে ফসল ফলানো। সেটিই যদি হয়, তাহলে নির্ভর করতেই হবে কীটনাশকের ওপর। কিন্তু এটি তো পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যে দেশে পাখি বেশি সে দেশে পর্যটকের সংখ্যাও বেশি। কাজেই পাখি ঘাটতি অবশ্যই উদ্বেগের ব্যাপার।
যে পাখি নিসর্গকে এত সুন্দর করে, চোখকে এত প্রশান্তি দেয়, সৌন্দর্য চেতনাকে এত আলোড়িত করে, নিরীহ সে পাখির প্রাণ নেওয়াতে কী এত সুখ মানুষের?
পাখিরা আসুক। ওদের কলকাকলীতে ভরে উঠুক আমাদের চারপাশ। শিকারির বন্দুকের আঘাতে যেন ডানা ভেঙে থুবড়ে না পড়ে কোনো পাখি। সেক্ষেত্রে প্রচলিত আইনকে প্রয়োগ করতে হবে কার্যকরভাবে। তৎপরতা বাড়াতে হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনকে। পাশাপাশি হাওর এলাকার মানুষদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান দরকার। মানুষের ক্ষুধায় সবকিছু দাহ্য, পাখি তো বটেই। প্রকাশ্যে রাজপথে পাখির বিপণন বন্ধ হলে যে পাখি শিকার প্রবণতা কমে যাবে, সেটি সহজেই বোঝা যায়। পাখি নিধনের তান্ডব বন্ধে বেশি কিছু নয়, ওদের জন্য শ্রেফ একটু ভালোবাসা, একটু প্রাণবিক উষ্ণতা চাই। আমাদের, এ মানুষদেরই তো অতিথি ওসব বর্ণিল পাখি।
আমরা চাই সবকিছু চাপিয়ে সুন্দর অতিথি পাখিময় শীতের সকাল। সরকার যদি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পাখিদের আসা-যাওয়ায় প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
সূত্র: বিডি লাইভ।
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়