Friday, September 8

স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব : কানাইঘাটের প্রাক্তন এমপি মরহুম হাবিবুর রহমান


আলিম উদ্দিন আলিম : হাবিবুর রহমান কানাইঘাট উপজেলার চতুল পরগনার রতনপুর গ্রামে ১৯১৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন সমাজসেবী নাজির হাতিম আলী। হাতিম আলী বহু বৎসর যাবৎ উত্তর সিলেট লোকের বোর্ডের মেম্বার ছিলেন এবং জৈন্তা অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকান্ডে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। হাতিম আলীর তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে হাবিবুর রহমান ছিলেন সবার বড়। স্থানীয় পাঠশালায় অধ্যয়ন শেষে ১৯৩২ সালে হাবিবুর রহমান কানাইঘাট এম.এ স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৯ সালে জৈন্তা হাইস্কুল থেকে বৃত্তিসহ মেট্টিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। হাবিবুর রহমান এম.সি কলেজ থেকে ১৯৪১ সালে আই.এ এবং ১৯৪৩ সালে বি.এ পাস করেন। বি.এ পাস করার পর আইন শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য তিনি ঢাকা ল কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে ১৯৪৫ সালে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন ও স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। ১৯৪১ সালে আসাম প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন গঠিত হয়। এর উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি সিলেট জেলা বারে আইন ব্যবসা শুরু করেন। জৈন্তা অঞ্চলের তিনিই সর্বপ্রথম আইনজীবি। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিলেট বারের সদস্য ছিলেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচন উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জৈন্তা নির্বাচনী এলাকা থেকে মুসলিমলীগের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জমিয়তুল উলামায়ে হিন্দের প্রার্থী মেীলভী ইব্রাহিম আলী চতুলীর কাছে পরাজিত হন। ১৯৪৯ সালে মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওর্দী, শেখ মুজিবুর রহমান সহ মুসলিমলীগের নেতা কর্মীগণ ‘মুসলিমলীগ’ পরিত্যাগ করে ‘আওয়ামী মুসলিমলীগ’ গঠন করেন। ১৯৫৪ সালে এর নাম হয় ‘আওয়ামীলীগ’। এসময় তিনি আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে সিলেট জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট নির্বাচনী এলাকা থেকে এম.এন.এ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তার সিলেটের বাসভবন পুড়িয়ে দেয়। এসময় তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে ভারতের শিলং চলে যান। শিলং হাসপাতালে চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে নির্বাচিত এম.এন.এ হিসাবে সিলেটের উত্তরাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের তৎপরতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর তিনি সিলেট সদরের প্রশাসক নিযুক্ত হয়ে সিলেটের আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে হাবিবুর রহমান জৈন্তা এলাকা থেকে পুনরায় বাংলাদেশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৮ সালে হাবিবুর রহমান ৫৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। 
তথ্য সূত্র : জৈন্তিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়