Sunday, August 13

সকলের সুহৃদ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ


সজল চন্দ: ভগবান নিরপেক্ষ। তিনি কোন জীবের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন না। ‘ সুহৃদং সর্বভূতানাং’..(ভ.গীতা ৫/২৯)। ভগবান বলছেন যে, তিনি সকল জীবের মঙ্গলাকাঙ্খী বন্ধু বা সুহৃদ। তাহলে মনে প্রশ্ন জাগে কেন-তিনি বিভিন্ন অসুরদের হত্যা করলেন? বস্তুতপক্ষে যখন আমরা ভগবান কৃষ্ণকে কোন কোন ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করতে দেখি তখন বুঝতে হবে এটা আমাদের জড় দৃষ্টির অক্ষমতা। নতুবা অসুরেরা ভগবানের হাতে মৃত্যুবরণ করে ও কিভাবে মুক্তি লাভ করে থাকে? তিনি যে নিরপেক্ষ তা তিনি ভগবদ গীতায় ব্যাখ্যা করেছেন। গীতায় ভগবান বলেছেন ‘সমোহহং সর্বভূতেষু ন মে দ্বেষ্যাহন্তি ন প্রিয়ঃ। (৯/২৯) অর্থাৎ আমি সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন। কেউ আমার প্রিয়, অপ্রিয় বা শত্রু-মিত্র নয়। ভগবান এও বলেছেন যে, তাঁর সৃষ্ট প্রতিটা জীবই তাঁর সন্তান। সে যে যোনিতেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন যে প্রকৃতির হোক না কেন হতে পারে সাধু, হতে পারে দুষ্কৃতকারী প্রত্যেকের প্রতি তিনি সমভাবাপন্ন। তাহলে আবার প্রশ্ন জাগে তিনি কি অসুরদের প্রতি ও সমভাবাপন্ন? সে সম্পর্কে ভগবান বলছেন, ‘প্রিয়স্য কথম্ অসুরেষু প্রীতি অভাব।’ অর্থাৎ ভগবান সকলের পরমাত্মা হওয়ার জন্য তিনি সকলের অতি প্রিয়। তাহলে অসুরদের প্রতি তিনি কেন অপ্রিয় ব্যবহার করবেন? কৃষ্ণ এতই কৃপালু ও নিরপেক্ষ যে, তিনি পতুনার বিষযুক্ত স্তন পান করে ও পতুনাকে মাতৃরূপে স্বীকার করে নিলেন। এটাই তাঁর নিরপেক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভগবান কোন জীবের প্রতি পক্ষপাতিত্ত্ব করেন না। তবে এ কথা সত্য যে, তিনি তাঁর ভক্তদের প্রতি বিশেষ অনুকম্পাশীল। উদাহরণস্বরুপ আমরা বলতে পারি ভক্ত প্রহ্লাদের কথা, যিনি অসুরকূলে জন্মগ্রহণ করলে ও তিনি ছিলেন বিষ্ণুভক্ত। বিষ্ণুভক্ত হওয়ার কারণে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু তাঁকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করত। তবুও তিনি কখনও বিষ্ণু নাম থেকে বিচ্যুত হননি। যার বদৌলতে ভগবান নৃসিংহরূপ ধারণ করে তাঁর প্রিয় বৎস ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করেন দুষ্কৃতকারী অসুর হিরণ্যকশিপুকে বধ করে। প্রকৃতপক্ষে ভগবান হিরণ্যকশিপুাদি অসুরদের সংহার করে মূলত তাদেরকে কৃপা দান করেছেন। কারণ এসমস্ত অসুরেরা ভগবানের হাতে মৃত্যুবরণ না করলে উদ্ধার পাবে কি করে? দুষ্কৃতকারীরা যখন ভগবান কতৃক নিহত হন সেটিও তাদের প্রতি ভগবানের কৃপা। কারণ এরা সমাজে বেঁচে থাকলে সমাজের উৎপাতের কারণ হবে আর সে পাপের জন্য তাদেরকে অধিক দুংখ ভোগ করতে হবে। ভগবান তাঁর সৃষ্ট প্রতিটা জীবকে ভালবাসেন বলেই দুষ্কৃতকারীদের দন্ড দিয়েও একদিকে তাদেরকে পাপকর্ম থেকে নিস্তার দিয়েছেন অন্যদিকে তাদেরকে মুক্তি প্রদান করেছেন। যার জন্যই ভগবানকে যুগে যুগে এ পৃথিবীতে আসতে হয়েছে। ভগবানের জন্ম সাধারণ মানুষের মত নয়। আমরা আপাত দৃষ্টিতে দেখতে পাই দ্বাপর যুগে ভগবান দেবকী মাতার গর্ভে এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু বাসুদেব দেবকীর মিলনের ফলে নয়। ভগবান দেবকী মাতার গর্ভে একটা দিব্য জ্যোতিতে প্রকাশিত হন মাত্র। ভগবানকে জন্ম নিতে কারো গর্ভে আসতে হয় না। কারণ ভগবান হচ্ছেন সমস্ত জীবের বীজ প্রদানকারী পিতা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, অহংবীজ প্রদপিতা’ অর্থাৎ ‘আমি সব কিছুর বীজ প্রদানকারী পিতা। ভগবানের ভক্ত ভগবানকে নানাভাবে পেতে চান। কেউ পুত্র হিসেবে কেউ সখা হিসেবে আবার কেউবা প্রভু হিসেবে। তাই দেবকী বাসুদেব ভগবানকে তাঁদের সন্তানরূপে পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তাই ভগবান তাঁর ভক্তের বাসনা পূর্ণ করেছিলেন পুত্র হিসেবে জন্ম নিয়ে। ভগবানের জন্ম, কর্ম, লীলা সবই অপ্রাকৃত দিব্য আনন্দের। সে সম্পর্কে ভগবান অর্জুনকে বলছেন, “হে অর্জুন যিনি আমার জন্ম অর্থাৎ আর্বিভাব কর্ম সম্পর্কে বিশুদ্বভাবে জানেন তিনি মৃত্যুর পর এই ভৌতিক জগতে আর জন্মগ্রহণ করেন না, তিনি আমার দিব্য অর্থাৎ শাশ্বত ধাম প্রাপ্ত হন। “তাই আমরা দেখি ধর্ম প্রতিষ্টার জন্য ভগবান চারযুগে চারটি ভিন্নরূপ বর্ণ নিয়ে আবির্ভূত হন। যেমন সত্যযুগে চতুর্ভুজ বিষ্ণুরূপে বর্ণ ছিল শুক্লবর্ণ, ত্রেতাযুগে ধনুকবাণধারী রামচন্দ্ররূপে বর্ণ ছিল রক্তবর্ণ। দ্বাপরযুগে দ্বিভুজ শ্যামসুন্দর রূপে বর্ণ ছিল শ্যামবর্ণ আর কলিযুগে রাধাকৃষ্ণের মিলিত তনু শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুরূপে বর্ণ ছিল পীতবর্ণ। আবার প্রতি যুগের যুগধর্ম ও ছিল। যেমন: সত্যযুগের যুগধর্ম ছিল ধ্যান, ত্রেতা যুগের যুগধর্ম ছিল যজ্ঞ, দ্বাপরযুগের যুগধর্ম ছিল মন্দিরে শ্রীবিগ্রহ অর্চনা, আর কলিযুগের যুগধর্ম হচ্ছে “হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন।” যাহা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আজ থেকে পাঁচশত বছর পূর্বে প্রতিষ্টা করে গেছেন। ভগবান যদিও ধর্ম সংস্থাপনের জন্য যুগে যুগে অবতীর্ণ হন কিন্তু পূর্ববর্তী কোন যুগে ভগবান তাঁর ভক্তদের এভাবে করুণা প্রদর্শন করেন নি। কলিযুগের মানুষদের বিশেষ কৃপা করার জন্য ভগবান তাঁর ভগবত্তা লুকিয়ে আর্বিভূত হয়েছিলেন শচীমায়ের ঘরে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর রূপে। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি এই চারটি যুগকে একত্রে এক দিব্য যুগ বলা হয়। এরকম একহাজার দিব্য যুগে ব্রহ্মার একদিন হয়। ব্রহ্মার একদিনে ভগবান একবার এ পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। তাই এমনি এক দিব্যযুগের দ্বাপরের শেষভাগে ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে কংসের কারাগারে ভগবান বাসুদেব দেবকীর সন্তানরূপে আর্বিভূত হন। ভগবান আর্বিভূত হন তাঁর ভক্তের কল্যাণার্থে। অতএব ভক্তবৎসল ভগবান সকল জীবের প্রতি কৃপালু সকলের সুহৃদ এবং মঙ্গলাকাঙ্খী বন্ধু। জয় শ্রীকৃষ্ণ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়