Friday, August 25

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়কে চলছে মেরামত

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়কে চলছে মেরামত

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়কগুলো যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হচ্ছে। ঈদের পর এসব সড়ক স্থায়ীভাবে মেরামত করা হবে।

বিভিন্ন জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, বানের পানির তোড়ে ৩৯ জেলায় প্রায় ১ হাজার ১৭৭ কিমি. সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় অতিবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি মহাসড়কের মেরামত শুরু করেছে সওজ। ওই তিনটি মহাসড়কের ৮৬ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জামালপুরে যেসব স্থানে বন্যার পানি নেমে গেছে, সেখানে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। সিরাজগঞ্জে মহাসড়কের খানাখন্দের সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এভাবে অন্যান্য জেলায়ও সড়ক মেরামতের কাজ চলছে।

সওজের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ঈদের আগেই সড়কগুলোর মেরামত শেষ হবে। ফলে ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হবে না।

সিরাজগঞ্জ ও শাহজাদপুর : জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের খানাখন্দের সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী (উল্লাপাড়া সাব-ডিভিশন) জহুরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি থাকায় সংস্কার কাজ ধীরে সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে শুক্রবারের মধ্যে মহাসড়কের মূল সংস্কার কাজ শেষ হবে। তবে ছোট ছোট কিছু কাজ আছে, যা ২৮ আগস্টের আগে শেষ করা সম্ভব নয়।

শাহজাদপুর উপজেলার বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের ১৭ কিলোমিটার এলাকার রাস্তা বেহাল। এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া সড়ক ও জনপথের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জহুরুল আলম খান ও এসও আমীর আলী মোল্লা বলেন, রোলার মেশিন সংকটের কারণে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে ঈদে যাতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেজন্য দু-একদিনের মধ্যেই রোলার মেশিন সংগ্রহ করে সংস্কার কাজ শুরু হবে।

কুষ্টিয়া : চলতি বর্ষায় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ৪৩ কিলোমিটার, কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের ২৮ কিলোমিটারের অধিকাংশই বিধ্বস্ত হয়েছে। ঈদের আগেই গুরুত্বপূর্ণ এ তিন মহাসড়ক যান চলাচলের উপযোগী করতে কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। বড় গর্তগুলো ইট-বালু ফেলে আর ছোট গর্তগুলো বিটুমিন দিয়ে মেরামত চলছে।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, তাতে এভাবে মেরামত করে কোনো লাভ হবে না। দীর্ঘস্থায়ী সুফল পেতে হলে আংশিক মজবুত করাসহ মেরামতের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। এরই মধ্যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে দু’দফায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জামালপুর : জেলার ৭টি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন, ৮টি পৌরসভা এলাকা প্লাবিত হয়। পানির স্র্রোতে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী, বকশিগঞ্জ ও জামালপুর সদর উপজেলার রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী বন্যায় জেলায় ২ হাজার ১৫৫ কিমি. কাঁচা এবং ৫৯৫ দশমিক ৫০ কিমি. পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে ২৫টি ব্রিজ-কালভার্ট।

জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম জানান, এখনও অনেক স্থানে রাস্তার ওপর থেকে বন্যার পানি নেমে যায়নি। যে কারণে পুরোদমে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। যেসব জায়গায় পানি সরে গেছে, সেসব জায়গায় মোবাইল মেইনটেন্যান্সের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত শুরু হয়েছে।

সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বন্যায় সড়ক ও জনপথের ৮০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে। তবে সেসব সড়কের কারণে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াতে কোনো প্রভাব পড়বে না।

গাইবান্ধা : রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক ও গোবিন্দগঞ্জ-ফুলবাড়ী হাইওয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান জানান, ঈদ সামনে রেখে সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে অস্থায়ীভাবে মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঈদের পর প্রকল্প গ্রহণ করে স্থায়ী মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে।

দিনাজপুর : ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের ভাঙা স্থানগুলোয় বালুর বস্তা দিয়ে আংশিক মেরামত করে আংশিকভাবে শুরু হয়েছে যান চলাচল। তবে গ্রামাঞ্চলের স্থানীয় পাকা সড়কগুলো এখনও বেহাল। দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ সারওয়ার জানান, জেলায় মোট জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক ৪৮২ কিলোমিটার। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১৯ কিলোমিটার মহাসড়ক। দিনাজপুর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ভেঙে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় ১২ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ থাকে। এসব স্থান বালুর বস্তা দিয়ে কোনো মতে সংস্কার করায় ১৯ আগস্ট থেকে আংশিকভাবে ওই মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।

রংপুর : রংপুর অঞ্চলের ১০ জেলায় পাকা সড়কের প্রায় সাড়ে ৬০০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাগুলো হল- রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, বগুড়া ও জয়পুরহাট। এ ছাড়া ১৯টি সেতু ও ১৪৩টি কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে। ঈদের আগে এসব সড়ক-সেতু সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রংপুর পীরগঞ্জের ধাপেরহাট থেকে শুরু করে সৈয়দপুর মহাসড়কে সৃষ্ট খানাখন্দ ও গর্তে ইট বিছিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রেখেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। অপরদিকে সড়কে পানি জমে থাকায় রংপুর নগরীর পার্কের মোড় থেকে তিস্তা সেতু পর্যন্ত রাস্তায় বড় বড় খানাখন্দ ও গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এখানেও ইট বিছিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (রংপুর বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম খান বলেন, বন্যায় মহাসড়ক ও সংযোগ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সড়কে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেঙে যাওয়া গর্তে ইট-খোয়া দিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।

রংপুর জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রেজ্জাক জানান, বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও কালভার্টের মেরামত করা হবে। এখনও আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

লালমনিরহাট : কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার-কালভৈরব ও কাকিনা-মহিপুর সড়ক বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, কাকিনা-মহিপুরের ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটির প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর তুষভাণ্ডার-কালভৈরব সড়কটি সংস্কারের চেষ্টা চলছে।

কুড়িগ্রাম : দু’দফা বন্যায় জেলার ৯ উপজেলায় ৬২টি ইউনিয়নে পাকা ও কাঁচা সড়ক পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে জেলার সঙ্গে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা দু’সপ্তাহ ধরে বন্ধ। এতে এ তিন উপজেলার সোয়া ৭ লক্ষাধিক মানুষ সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আরেফীন খান জানান, এ উপজেলায় দুটি রাস্তার ৯টি স্থানে ১৮০ মিটার ওয়াশ আউট হয়ে গেছে। এ রাস্তাগুলোয় গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, রাস্তাগুলো চলাচলের উপযোগী করে তুলতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোথাও বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দিয়ে লোক চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি নেমে গেলে স্থায়ী মেরামত করা হবে।

জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবিএম খুরশীদ আলম জানান, কিছু রাস্তায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় এগুলোয় ব্রিজ অথবা গর্ত পূরণ করা হবে কিনা, এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিম পর্যবেক্ষণ করতে কুড়িগ্রামে অবস্থান করছে। শিগগিরই তাদের মতামতের ভিত্তিতে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে। সূত্র: যুগান্তর।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়