কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গলে ঢাকা বিস্তীর্ণ এক অদ্ভুত জঙ্গল। গোটা এলাকা জুড়ে
ছড়িয়ে আছে গোল গোল পাথরের বল; একটি-দুটি নয়, শত শত। গোটা তল্লাট জুড়ে
যেখানে ছড়ানো আছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মস্ত বড় সব পাথরের বল। এটা রূপকথার
গল্প বা কোনো সিনেমার সেট নয়।
মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকার ডিকুইস ব-দ্বীপ। এখানেই ১৯৩০ সালের দিকে আবিস্কৃত হলো নানা আকৃতির সব পাথরের বল। গ্রানোডিওরাইট আর গাবরো জাতীয় পাথরে তৈরি বলগুলির কোনো কোনোটি একেবারে ছোট্ট, কয়েক সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের; আবার কয়েকটির ব্যাসার্ধ দুই মিটারের কম হবে না। কিছু বল তৈরি হয়েছে লাইমস্টোন আর বেলেপাথর দিয়ে। এসব বলরে ওজন কমপক্ষে১৬ টন। অন্তত শ’তিনেক এমন পাথরের বল খুঁজে পাওয়া গছে দেশটিতে। অদ্ভুত এই বলগুলো নিয়ে কিংবদন্তী আর জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই। কোথা থেকে এলো এই পাথরের বলগুলো? রাতারাতি এগুলো উদয় হয়নি, হাজার বছর ধরেই জঙ্গলের ভেতরে পড়ে ছিল।
১৯ শতকের দিকে আশেপাশের লোকেরা এগুলোর কথা জানতে পারলেও সেভাবে কেউ চিন্তা করেনি। কিন্তু বিশ্ব এদের কথা জানতে পারে ১৯৩০ আর ১৯৪০ এর দশকে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানি’ কোস্টারিকায় নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করার জন্য জমিজমা কিনতে থাকে। কলা চাষের জন্য জঙ্গল পরিস্কার করতে গিয়ে সন্ধান মেলে এই বলগুলোর।
খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয় প্রত্নতাত্ত্বিকদের দল, নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণা শেষে তারা রায় দেন যে, কলম্বাস পূর্ব যুগের আমেরিকার আদি বাসিন্দারা এসব বল তৈরি করেছিল। রক্ত সম্পর্কের দিক থেকে তারা ছিল হন্ডুরাস আর কলম্বিয়ার উত্তরে বসবাসকারী বরুকা, তেরিবে আর গুয়ামি নামের ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীর লোকদের পূর্বপুরুষ। চাষবাষ আর মাছ ধরা ছিল এই আদিম অধিবাসীদের পেশা। পাহাড়ী নদীর ধারে থাকতো বলে গোলাকার পাথর ছিল তাদের কাছে খুবই সহজলভ্য। চিবিচান ভাষাভাষী এই মানুষদেরই কীর্তি হচ্ছে বলগুলি। কিন্তু কেন তারা বানিয়েছিলো এই চমৎকার স্থাপত্যগুলো? কেনই বা বিরান জঙ্গল আর প্রান্তরে ফেলে গিয়েছিলো এসব পাথরের বল? উত্তরটি কেউই জানে না।
জর্জ এরিকসন সহ কয়েকজন গবেষকের ধারণা, বলগুলোর বয়স কমপক্ষে ১২ হাজার বছর। তবে অনেকে আবার তাদের সাথে একমত নন। প্রচলিত রেডিও কার্বন ডেটিং পদ্ধতি এই বলগুলোতে প্রয়োগ করা যায় না, কাজেই এদের বয়স নির্ণয়ে বিজ্ঞানীদের কসরত করতে হয়েছে প্রচুর। তবে এখন মোটামুটি স্বীকৃত যে, এগুলো খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ থেকে ১,৫০০ বছর আগে বানানো হয়েছিলো।
তবে পাথরের বলগুলোর ব্যবহার কী ছিল, তা নিয়ে গবেষণা আজও চলছে। প্রথমেই জানা যাক এগুলোকে ঘিরে তৈরি হওয়া পৌরাণিক কাহিনীগুলো। রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে প্রচলিত আছে যে, বজ্রের দেবতা তারা, বিশাল এক ব্লো পাইপের সাহায্যে ঝড়ের দেবতা সের্কেসের দিকে এই বলগুলি ছুঁড়ে মেরেছিলেন। আমাদের আধুনিক কল্পনাবিলাসীরা দাবি করেন, এই বলগুলো এসেছে সেই সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাওয়া শহর আটলান্টিস থেকে।
কেউ কেউ দাবি করেন, ভিনগ্রহের অধিবাসীরা নাকি এগুলো বানিয়ে রেখে গিয়েছে! বলগুলো যখন আবিস্কার করা হয়, তখন দেখা গিয়েছিলো, অনেকগুলো সাজানো আছে সোজা লাইনে, কিছু সাজানো ত্রিকোনাকারভাবে, আবার কিছু সাজানো সামন্তরিক ক্ষেত্রের মতো করে। কিছু বল আবার উত্তর মেরুকে নির্দেশ করে সাজানো ছিল। ইভর জ্যাপ নামের একজন তো দাবি করে বসেছিলেন যে, এই বলগুলো চিলির স্টার আইল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের বিখ্যাত স্টোনহেঞ্জের দিকে নির্দেশ করে সাজানো। তবে এসব ধারণার কোনটিই যে ধোপে টেকেনি, তা বলাই বাহুল্য।
বর্তমান ধারণা, বলগুলো ঐ আমলের গোত্র অধিপতিদের বাড়ি নির্দেশ করে বানানো হয়ে থাকতে পারে, তবে এই ব্যাখ্যার ব্যাপারেও ঠিক নিশ্চিত হওয়া যায় না। কাজেই বলগুলো বানানোর উদ্দেশ্য এখনো অজানা।
জঙ্গল পরিস্কার করার সময় মজুরেরা অনেক বলকেই আসল জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়েছে, আবার কোস্টারিকার ধনী মানুষজন বা বিদেশী গবেষকেরা অনেকগুলো বল তুলে নিয়ে গিয়েছেন। ফলে, আদৌ যদি এদের কোনো জ্যামিতিক গুরুত্ব থেকে থাকে, তবে তা আজ আর বোধগম্য নয়।
যেসব রেড ইন্ডিয়ান গোত্রের পুর্বপুরুষেরা বলগুলো নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়, স্প্যানিশ কঙ্কুইস্তাদোরসদের (যেসব স্প্যানিশ অভিযাত্রী লাতিন আমেরিকা দখল করেছিলো) অত্যাচারের কল্যাণে তারা সবাই আজ দেশছাড়া। তার ওপর তাদের নেই কোনো লিখিত ইতিহাস, কাজেই তাদের কাছ থেকেও কার্যকর কোনো তথ্যনির্দেশ পাওয়া যায় না। বলগুলো তৈরির একটি কারণ হতে পারে, পেরুর নাজকা লাইনের মতো এগুলোও হয়তো জ্যোতিচর্চায় ব্যবহৃত হত। কিন্তু সে সম্বন্ধেও কেউ নিশ্চিত নন।
ইস্টার আইল্যান্ডের মোয়াই মূর্তিগুলির মতো তাই এই বলগুলোরও আসল উদ্দেশ্য সম্বন্ধে গবেষকেরা অন্ধকারে থেকে গেছেন। সব মিলিয়ে বিখ্যাত গবেষক এবং কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জন হুপস সোজা কথায় বলেছেন, “বলগুলির আসল ব্যবহার কী ছিল তা হয়তো আমাদের পক্ষে আর জানা সম্ভব হবে না।”
বেশিরভাগ বলই বেশ গোলাকার আকারের, কোনো কোনোটি তো প্রায় নিঁখুত। কীভাবে ঐ আদিম যুগে অমন চমৎকার পাথরের বল বানানো গেল, তা নিয়েও রয়েছে মতভেদ। কারণ বলগুলোর যা বয়স, সেসময়ে ঐ অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে লোহার ব্যবহার প্রচলিত ছিল না। অনেকের ধারণা, গাছ-গাছড়া থেকে বানানো কোনো শক্তিশালী এসিড দিয়ে পাথর গলিয়ে বানানো হয়েছে এসব বল।
তবে পরবর্তী গবেষকেরা দেখিয়েছেন, বল নির্মাণে যে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তা এসিড প্রতিরোধী। এখন অবশ্য স্বীকৃত ধারণা এই যে, স্রেফ পাথরের তৈরি ছেনি-বাটালী দিয়ে খোদাই করেই এগুলো বানানো হয়েছে। বলগুলো যে পাথরে নির্মিত, সেগুলো অনেকটা পরতে পরতে সাজানো থাকে। কাজেই একেকটা স্তর কেটে কেটে গোলাকার আকার দেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পরে চামড়া দিয়ে ঘষে ঘষে এগুলোকে করা হয়েছে মসৃণ।
এবার আসা যাক বর্তমানে। কোস্টারিকার এসব পাথরের বল এখন ঐ অঞ্চলের পর্যটনে ব্যবহার করার চিন্তা করা হচ্ছে। সেখানকার ধনী আর প্রভাবশালী লোকদের জন্য বলগুলো এখন রীতিমতো মর্যাদা আর আভিজাত্যের প্রতীক। অনেক বলই উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির মজুরেরা প্রথমে ভেবেছিলো, বলগুলোর ভেতরে হয়তো সোনাদানা লুকানো আছে, কাজেই ডাইনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয় অনেকগুলো বল। যা-ই হোক, ২০১৪ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে গণ্য করার পর থেকে কোস্টারিকা সরকার বলগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।
মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকার ডিকুইস ব-দ্বীপ। এখানেই ১৯৩০ সালের দিকে আবিস্কৃত হলো নানা আকৃতির সব পাথরের বল। গ্রানোডিওরাইট আর গাবরো জাতীয় পাথরে তৈরি বলগুলির কোনো কোনোটি একেবারে ছোট্ট, কয়েক সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের; আবার কয়েকটির ব্যাসার্ধ দুই মিটারের কম হবে না। কিছু বল তৈরি হয়েছে লাইমস্টোন আর বেলেপাথর দিয়ে। এসব বলরে ওজন কমপক্ষে১৬ টন। অন্তত শ’তিনেক এমন পাথরের বল খুঁজে পাওয়া গছে দেশটিতে। অদ্ভুত এই বলগুলো নিয়ে কিংবদন্তী আর জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই। কোথা থেকে এলো এই পাথরের বলগুলো? রাতারাতি এগুলো উদয় হয়নি, হাজার বছর ধরেই জঙ্গলের ভেতরে পড়ে ছিল।
১৯ শতকের দিকে আশেপাশের লোকেরা এগুলোর কথা জানতে পারলেও সেভাবে কেউ চিন্তা করেনি। কিন্তু বিশ্ব এদের কথা জানতে পারে ১৯৩০ আর ১৯৪০ এর দশকে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানি’ কোস্টারিকায় নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করার জন্য জমিজমা কিনতে থাকে। কলা চাষের জন্য জঙ্গল পরিস্কার করতে গিয়ে সন্ধান মেলে এই বলগুলোর।
খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয় প্রত্নতাত্ত্বিকদের দল, নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণা শেষে তারা রায় দেন যে, কলম্বাস পূর্ব যুগের আমেরিকার আদি বাসিন্দারা এসব বল তৈরি করেছিল। রক্ত সম্পর্কের দিক থেকে তারা ছিল হন্ডুরাস আর কলম্বিয়ার উত্তরে বসবাসকারী বরুকা, তেরিবে আর গুয়ামি নামের ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীর লোকদের পূর্বপুরুষ। চাষবাষ আর মাছ ধরা ছিল এই আদিম অধিবাসীদের পেশা। পাহাড়ী নদীর ধারে থাকতো বলে গোলাকার পাথর ছিল তাদের কাছে খুবই সহজলভ্য। চিবিচান ভাষাভাষী এই মানুষদেরই কীর্তি হচ্ছে বলগুলি। কিন্তু কেন তারা বানিয়েছিলো এই চমৎকার স্থাপত্যগুলো? কেনই বা বিরান জঙ্গল আর প্রান্তরে ফেলে গিয়েছিলো এসব পাথরের বল? উত্তরটি কেউই জানে না।
জর্জ এরিকসন সহ কয়েকজন গবেষকের ধারণা, বলগুলোর বয়স কমপক্ষে ১২ হাজার বছর। তবে অনেকে আবার তাদের সাথে একমত নন। প্রচলিত রেডিও কার্বন ডেটিং পদ্ধতি এই বলগুলোতে প্রয়োগ করা যায় না, কাজেই এদের বয়স নির্ণয়ে বিজ্ঞানীদের কসরত করতে হয়েছে প্রচুর। তবে এখন মোটামুটি স্বীকৃত যে, এগুলো খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ থেকে ১,৫০০ বছর আগে বানানো হয়েছিলো।
তবে পাথরের বলগুলোর ব্যবহার কী ছিল, তা নিয়ে গবেষণা আজও চলছে। প্রথমেই জানা যাক এগুলোকে ঘিরে তৈরি হওয়া পৌরাণিক কাহিনীগুলো। রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে প্রচলিত আছে যে, বজ্রের দেবতা তারা, বিশাল এক ব্লো পাইপের সাহায্যে ঝড়ের দেবতা সের্কেসের দিকে এই বলগুলি ছুঁড়ে মেরেছিলেন। আমাদের আধুনিক কল্পনাবিলাসীরা দাবি করেন, এই বলগুলো এসেছে সেই সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাওয়া শহর আটলান্টিস থেকে।
কেউ কেউ দাবি করেন, ভিনগ্রহের অধিবাসীরা নাকি এগুলো বানিয়ে রেখে গিয়েছে! বলগুলো যখন আবিস্কার করা হয়, তখন দেখা গিয়েছিলো, অনেকগুলো সাজানো আছে সোজা লাইনে, কিছু সাজানো ত্রিকোনাকারভাবে, আবার কিছু সাজানো সামন্তরিক ক্ষেত্রের মতো করে। কিছু বল আবার উত্তর মেরুকে নির্দেশ করে সাজানো ছিল। ইভর জ্যাপ নামের একজন তো দাবি করে বসেছিলেন যে, এই বলগুলো চিলির স্টার আইল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের বিখ্যাত স্টোনহেঞ্জের দিকে নির্দেশ করে সাজানো। তবে এসব ধারণার কোনটিই যে ধোপে টেকেনি, তা বলাই বাহুল্য।
বর্তমান ধারণা, বলগুলো ঐ আমলের গোত্র অধিপতিদের বাড়ি নির্দেশ করে বানানো হয়ে থাকতে পারে, তবে এই ব্যাখ্যার ব্যাপারেও ঠিক নিশ্চিত হওয়া যায় না। কাজেই বলগুলো বানানোর উদ্দেশ্য এখনো অজানা।
জঙ্গল পরিস্কার করার সময় মজুরেরা অনেক বলকেই আসল জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়েছে, আবার কোস্টারিকার ধনী মানুষজন বা বিদেশী গবেষকেরা অনেকগুলো বল তুলে নিয়ে গিয়েছেন। ফলে, আদৌ যদি এদের কোনো জ্যামিতিক গুরুত্ব থেকে থাকে, তবে তা আজ আর বোধগম্য নয়।
যেসব রেড ইন্ডিয়ান গোত্রের পুর্বপুরুষেরা বলগুলো নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়, স্প্যানিশ কঙ্কুইস্তাদোরসদের (যেসব স্প্যানিশ অভিযাত্রী লাতিন আমেরিকা দখল করেছিলো) অত্যাচারের কল্যাণে তারা সবাই আজ দেশছাড়া। তার ওপর তাদের নেই কোনো লিখিত ইতিহাস, কাজেই তাদের কাছ থেকেও কার্যকর কোনো তথ্যনির্দেশ পাওয়া যায় না। বলগুলো তৈরির একটি কারণ হতে পারে, পেরুর নাজকা লাইনের মতো এগুলোও হয়তো জ্যোতিচর্চায় ব্যবহৃত হত। কিন্তু সে সম্বন্ধেও কেউ নিশ্চিত নন।
ইস্টার আইল্যান্ডের মোয়াই মূর্তিগুলির মতো তাই এই বলগুলোরও আসল উদ্দেশ্য সম্বন্ধে গবেষকেরা অন্ধকারে থেকে গেছেন। সব মিলিয়ে বিখ্যাত গবেষক এবং কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জন হুপস সোজা কথায় বলেছেন, “বলগুলির আসল ব্যবহার কী ছিল তা হয়তো আমাদের পক্ষে আর জানা সম্ভব হবে না।”
বেশিরভাগ বলই বেশ গোলাকার আকারের, কোনো কোনোটি তো প্রায় নিঁখুত। কীভাবে ঐ আদিম যুগে অমন চমৎকার পাথরের বল বানানো গেল, তা নিয়েও রয়েছে মতভেদ। কারণ বলগুলোর যা বয়স, সেসময়ে ঐ অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে লোহার ব্যবহার প্রচলিত ছিল না। অনেকের ধারণা, গাছ-গাছড়া থেকে বানানো কোনো শক্তিশালী এসিড দিয়ে পাথর গলিয়ে বানানো হয়েছে এসব বল।
তবে পরবর্তী গবেষকেরা দেখিয়েছেন, বল নির্মাণে যে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তা এসিড প্রতিরোধী। এখন অবশ্য স্বীকৃত ধারণা এই যে, স্রেফ পাথরের তৈরি ছেনি-বাটালী দিয়ে খোদাই করেই এগুলো বানানো হয়েছে। বলগুলো যে পাথরে নির্মিত, সেগুলো অনেকটা পরতে পরতে সাজানো থাকে। কাজেই একেকটা স্তর কেটে কেটে গোলাকার আকার দেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পরে চামড়া দিয়ে ঘষে ঘষে এগুলোকে করা হয়েছে মসৃণ।
এবার আসা যাক বর্তমানে। কোস্টারিকার এসব পাথরের বল এখন ঐ অঞ্চলের পর্যটনে ব্যবহার করার চিন্তা করা হচ্ছে। সেখানকার ধনী আর প্রভাবশালী লোকদের জন্য বলগুলো এখন রীতিমতো মর্যাদা আর আভিজাত্যের প্রতীক। অনেক বলই উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির মজুরেরা প্রথমে ভেবেছিলো, বলগুলোর ভেতরে হয়তো সোনাদানা লুকানো আছে, কাজেই ডাইনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয় অনেকগুলো বল। যা-ই হোক, ২০১৪ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে গণ্য করার পর থেকে কোস্টারিকা সরকার বলগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।
খবর বিভাগঃ
অন্যরকম
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়