নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারী থেকে বর্ষা মৌসুমে সব ধরনের পাথর উত্তোলন বর্তমানে বন্ধ থাকায় প্রভাবশালী চক্র ও পাথর খেকোদের হিংস্র থাবায় ক্ষত-বিক্ষত পরিণত হচ্ছে লোভাছড়া পাথর কোয়ারী ও তার আশপাশের বিশাল এলাকা। প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রটি পাথর কোয়ারী সংলগ্ন টিলা ও পাহাড় বেষ্টিত বাখালছড়া, রাজার টিলা, মনিপুর গ্রাম, লালমাটির টিলা, ডাউকেরগুল, বাজেখেল, সাউদগ্রাম, পশ্চিমপাড়া, বড়গ্রাম, কান্দলা, বাংলা টিলা, মীরাপিং শাহ টিলা সহ আশপাশ এলাকার টিলা ও পাহাড় কেটে বিশাল বিশাল গর্ত তৈরি করে পাথর উত্তোলন করে আসছে। লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে বর্তমানে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় এবং পাথরের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রভাবশালী চক্র ও পাথর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে এসব এলাকায় বসবাসরত দরিদ্র জনসাধারণকে টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের বাড়ীঘরের আঙ্গিনা, টিলা ও পাহাড় কেটে নানা ভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট পাথর উত্তোলন করছে। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও কানাইঘাট থানা পুলিশ এসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নিলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে পাথর খেকো চক্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ লীলাভূমি সীমান্তবর্তী এসব এলাকায় পাথর উত্তোলনের নামে রীতিমতো তান্ডব চালাচ্ছে। ধ্বংস স্তুপে পরিণত হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকা। প্রভাবশালী চক্র ও পাথর খেকোরা প্রশাসনের কোন ধরণের তোয়াক্কা করছে না। স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী এলাকার টিলা ও পাহাড় কেটে যেভাবে পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে এলাকায় বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিবে। পাহাড় ও টিলা ধ্বসে প্রাণহানি ঘটনা ঘটতে পারে। নির্বিচারে প্রভাবশালী ও পাথরখেকো চক্র পাথর উত্তোলনের নামে এলাকাকে ধ্বংস স্তুপে পরিণত করলেও অদ্যবধি পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর, কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ এসব অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। পাহাড় টিলা এবং সমতল এলাকায় কয়েকশত বড় ধরনের গর্ত তৈরি করে যারা পাথর উত্তোলন করছে তাদের নাম ঠিকানা বার বার থানা পুলিশ, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এবং উপজেলা বিট কর্মকর্তা তালিকা তৈরি করলেও কেন এসব প্রভাবশালী পাথর খেকো চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার সচেতন মহল। উপজেলা বিট কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বন বিভাগের টিলা ও পাহাড় কেটে গাছপালা কর্তন ও অবৈধভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট পাথর উত্তোলনের ঘটনায় কানাইঘাট থানায় একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি সাধারণ ডায়রী করেন। এর মধ্যে একটি মামলার প্রসিকিউশন দেওয়া হয়েছে আদালতে। নিয়মানুযায়ী টিলা ও পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা দায়েরের কথা থাকলেও অদ্যবধি পর্যন্ত লোভাছড়া এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংশি তৎপরতা পাথর খেকো চক্র চালালেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা সরেজমিনে এসব এলাকা পরিদর্শন করেননি। মাঝে মধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সুমন আচার্য ও থানা পুলিশ অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের এলাকা পরিদর্শন করলেও তার কোন প্রতিকার হচ্ছে না। সর্বশেষ গত রবিবার দুপুরে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার দীর্ঘ লালমাটির টিলা নামক পাহাড় কেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের খবর পেয়ে কানাইঘাট থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই স্বপন চন্দ্র সরকার সেখানে গেলে জসীম উদ্দিন, ইকবাল হোসেন, এখলাছ উদ্দিন সহ কয়েকজন শ্রমিক পাথর উত্তোলন করলে তাদের বাঁধা নিষেধ দেন এবং পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, লালমাটি টিলা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ কোটি টাকার পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়েছে। এব্যাপারে উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহসিনা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লোভাছড়া পাথর কোয়ারী সহ আশপাশ এলাকা থেকে যারা টিলা, পাহাড় কেটে এবং গর্ত তৈরি করে পাথর উত্তোলন করে আসছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে সেখানে সব সময় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অভিযান এবং পাথর জব্দ পর্যন্ত আমরা করেছি। যারা এসব অবৈধ তৎপরতার সাথে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মামলা দায়েরের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে তালিকা প্রেরন করা হয়েছে। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আপনারা ঐসব এলাকায় গিয়ে যারা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে তাদের তথ্য আমাদের দিলে ব্যবস্থা নেব। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে সহযোগিতা ও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়