কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: রমজান
মাসে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে ইফতার পর্যন্ত উপবাস করার নিয়ম থাকলেও
ইরাকের মোসুলের মুসলমানদের সময় কাটছে কঠিন বাস্তবতায়৷ খাদ্য সংকটে উপবাস
একাকার হয়ে গেছে তাদের জীবনে৷ ইফতারে নেই বিশেষ কোনো আয়োজন৷
উম্মে মোহাম্মেদ এবং পশ্চিম মোসুলের অন্য অধিবাসীরা জীবন কাটাচ্ছেন এ রকম ভিন্ন এক তিক্ততায়৷ এলাকাটি কিছুদিন আগেও ছিল তথাকথিত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের নিয়ন্ত্রণে৷ তাদের কবল থেকে মুক্তি পেলেও দুঃস্বপ্নের তাড়া থেকে যেন মুক্তি নেই মোসুলবাসীদের৷
ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরের সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা উম্মে মোহাম্মেদ বলেন, ''আমাদের বাড়ি-গাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে৷ পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷ কেন সাহায্যের আশায় আমাকে এত দীর্ঘ একটা সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?''
পুরো নাম প্রকাশ না করে ৩৮ বছর বয়স্ক এই নারী বলেন, ''আমাদের একটা স্বপ্নের জীবন ছিল, যা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে৷ আমরা তলানিতে পৌঁছে গেছি৷'' তার দুই সন্তান৷ জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় এখনো তার স্বজনরা বাস করছেন৷ নাম জানলে তারা সেই স্বজনদের আক্রমণ করতে পারে বলে তার আশঙ্কা৷
২০১৪ সালের জুন মাসে আইএস জঙ্গিরা ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মোসুল দখল করে নেয়৷ দখলের পর সেখানে ইসলামের নামে এক নির্মম শাসন চালু করে৷ অধিবাসীদের উপর এক সন্ত্রাসের রাজত্ব চাপিয়ে দেয়৷
গত অক্টোবরে তাদেরকে ওই এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত সেখানে চরম কঠিন ছিল জীবন৷ তবে এরই মধ্যে পূর্ব মোসুল এবং পশ্চিম মোসুলের বড় একটা অংশ সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসেছে৷
সরকারি বাহিনীর এই অভিযানের সময় 'মরার উপর খাড়ার ঘাঁ' হিসাবে খাদ্য-পানি এবং বিদ্যুতের সংকটে ভোগা এসব মানুষের সামনে হাজির হয় নতুন সংকট৷ জঙ্গিরা সরকারি বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে এই নিরীহ মানুষগুলোকেই ব্যবহার করে ঢাল হিসাবে৷
উম্মে মোহাম্মেদ বলেন, ''রমজানে ইফতারের জন্যও তেমন কিছু পাওয়া যায় না৷ যা পাই, তা দিয়েই রোজা ভাঙতে হয়৷ এমনও হয়েছে, বালি ও পোকামাকড়ে ভরা পানি দিয়ে ইফতার করতে হয়েছে৷''
একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনে পোড়া গাড়ির পাশে তিনি নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের সঙ্গে একটা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে তাদের কেউ কেউ তোয়ালে বা ন্যাকড়া দিয়ে মাথা ঢেকে দিচ্ছিলেন৷
উম্মে ইউসুফ নামে অন্য এক মা পাশেই দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন৷ কারণ, প্যাকেজ ত্রাণ দেওয়ার প্রাত্যহিক তালিকায় তার নাম উঠেনি৷ এই প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, দুধ, চিনি, টমেটো জুস এবং চিজ৷ ক্ষোভে-কষ্টে ভাঙা গলায় তিনি বলেন, ''আমার ১০টি ছেলে মেয়ে৷ আমাদেরকে কূপ থেকে আনা পানি এবং টমেটো জুস দিয়ে ইফতার করতে হয়৷''
তিনি বলেন, ''আইএসের এলাকা থেকে মেয়ে লায়লা ও তার পরিবার ছাড়া পেলে ঈদের দিন হয়তো কিছু মুখে তুলতে পারবো৷ নয়তো ঈদ আর ঈদ থাকবে না৷'' নিজের এত কষ্টের মাঝেও সেই স্বজনদের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, তাদেরকে বালি এবং ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে৷
এই নারী যখন কথা বলছিলেন, তখন তার সঙ্গে থাকা ছোট্ট শিশুকে কেউ একজন একটা বিস্কুট দিয়ে যায়৷ আইএস থেকে উদ্ধারকৃত পশ্চিম মোসুলের এই এলাকায় গত এক সপ্তাহে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা মোটামুটি মানের ২ হাজারের মতো ত্রাণের প্যাকেট বিতরণ করেছে৷
২১ বছর বয়স্ক স্বেচ্ছাসেবী মোহাম্মদ দিলান বলেন, ''অভাবী পরিবারগুলোর চাহিদা মোটামুটি মেটাতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি৷''
মোসুল থেকে উচ্ছেদ হওয়া অনেকে শহরের বাইরে উদ্বাস্তু ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন৷ তাদের জীবন আরো কঠিন৷ মঙ্গলবার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি হাসানশ্যাম নামে একটা ক্যাম্পে খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়৷ প্রায় একশত জনের জরুরি চিকিৎসার দরকার হয়৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইফ আল-বদর জানান, ইফতারের পর প্রায় একশত ব্যক্তি মারাত্মকভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
উম্মে মোহাম্মেদ এবং পশ্চিম মোসুলের অন্য অধিবাসীরা জীবন কাটাচ্ছেন এ রকম ভিন্ন এক তিক্ততায়৷ এলাকাটি কিছুদিন আগেও ছিল তথাকথিত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের নিয়ন্ত্রণে৷ তাদের কবল থেকে মুক্তি পেলেও দুঃস্বপ্নের তাড়া থেকে যেন মুক্তি নেই মোসুলবাসীদের৷
ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরের সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা উম্মে মোহাম্মেদ বলেন, ''আমাদের বাড়ি-গাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে৷ পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷ কেন সাহায্যের আশায় আমাকে এত দীর্ঘ একটা সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?''
পুরো নাম প্রকাশ না করে ৩৮ বছর বয়স্ক এই নারী বলেন, ''আমাদের একটা স্বপ্নের জীবন ছিল, যা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে৷ আমরা তলানিতে পৌঁছে গেছি৷'' তার দুই সন্তান৷ জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় এখনো তার স্বজনরা বাস করছেন৷ নাম জানলে তারা সেই স্বজনদের আক্রমণ করতে পারে বলে তার আশঙ্কা৷
২০১৪ সালের জুন মাসে আইএস জঙ্গিরা ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মোসুল দখল করে নেয়৷ দখলের পর সেখানে ইসলামের নামে এক নির্মম শাসন চালু করে৷ অধিবাসীদের উপর এক সন্ত্রাসের রাজত্ব চাপিয়ে দেয়৷
গত অক্টোবরে তাদেরকে ওই এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত সেখানে চরম কঠিন ছিল জীবন৷ তবে এরই মধ্যে পূর্ব মোসুল এবং পশ্চিম মোসুলের বড় একটা অংশ সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসেছে৷
সরকারি বাহিনীর এই অভিযানের সময় 'মরার উপর খাড়ার ঘাঁ' হিসাবে খাদ্য-পানি এবং বিদ্যুতের সংকটে ভোগা এসব মানুষের সামনে হাজির হয় নতুন সংকট৷ জঙ্গিরা সরকারি বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে এই নিরীহ মানুষগুলোকেই ব্যবহার করে ঢাল হিসাবে৷
উম্মে মোহাম্মেদ বলেন, ''রমজানে ইফতারের জন্যও তেমন কিছু পাওয়া যায় না৷ যা পাই, তা দিয়েই রোজা ভাঙতে হয়৷ এমনও হয়েছে, বালি ও পোকামাকড়ে ভরা পানি দিয়ে ইফতার করতে হয়েছে৷''
একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনে পোড়া গাড়ির পাশে তিনি নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের সঙ্গে একটা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে তাদের কেউ কেউ তোয়ালে বা ন্যাকড়া দিয়ে মাথা ঢেকে দিচ্ছিলেন৷
উম্মে ইউসুফ নামে অন্য এক মা পাশেই দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন৷ কারণ, প্যাকেজ ত্রাণ দেওয়ার প্রাত্যহিক তালিকায় তার নাম উঠেনি৷ এই প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, দুধ, চিনি, টমেটো জুস এবং চিজ৷ ক্ষোভে-কষ্টে ভাঙা গলায় তিনি বলেন, ''আমার ১০টি ছেলে মেয়ে৷ আমাদেরকে কূপ থেকে আনা পানি এবং টমেটো জুস দিয়ে ইফতার করতে হয়৷''
তিনি বলেন, ''আইএসের এলাকা থেকে মেয়ে লায়লা ও তার পরিবার ছাড়া পেলে ঈদের দিন হয়তো কিছু মুখে তুলতে পারবো৷ নয়তো ঈদ আর ঈদ থাকবে না৷'' নিজের এত কষ্টের মাঝেও সেই স্বজনদের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, তাদেরকে বালি এবং ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে৷
এই নারী যখন কথা বলছিলেন, তখন তার সঙ্গে থাকা ছোট্ট শিশুকে কেউ একজন একটা বিস্কুট দিয়ে যায়৷ আইএস থেকে উদ্ধারকৃত পশ্চিম মোসুলের এই এলাকায় গত এক সপ্তাহে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা মোটামুটি মানের ২ হাজারের মতো ত্রাণের প্যাকেট বিতরণ করেছে৷
২১ বছর বয়স্ক স্বেচ্ছাসেবী মোহাম্মদ দিলান বলেন, ''অভাবী পরিবারগুলোর চাহিদা মোটামুটি মেটাতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি৷''
মোসুল থেকে উচ্ছেদ হওয়া অনেকে শহরের বাইরে উদ্বাস্তু ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন৷ তাদের জীবন আরো কঠিন৷ মঙ্গলবার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি হাসানশ্যাম নামে একটা ক্যাম্পে খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়৷ প্রায় একশত জনের জরুরি চিকিৎসার দরকার হয়৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইফ আল-বদর জানান, ইফতারের পর প্রায় একশত ব্যক্তি মারাত্মকভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়