Thursday, June 8

রহমত, বরকত ও কল্যাণের মাস মাহে রমজান

রহমত, বরকত ও কল্যাণের মাস মাহে রমজান

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: রহমত, বরকত ও কল্যাণ-সৌভাগ্যের মাস মাহে রমজান। এটি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাস।

রমজানের রোজা হিজরি দ্বিতীয় সালে ফরজ হলেও রোজার ইতিহাস কিন্তু বেশ প্রাচীন। মুসলমানদের আগেও অন্যান্য ধর্মে রোজার বিধান প্রচলিত ছিল। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। নিঃসন্দেহে তোমরা (এ রোজার মাধ্যমে) মুত্তাকি (খোদাভীরু) হতে পারবে।’ (সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

রোজার গুরুত্ব আল্লাহর কাছে এত বেশি যে অন্যান্য আমলের সাওয়াব আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট পরিমাণে দেবেন। কিন্তু রোজার সাওয়াব দেবেন অগণিত-অসংখ্য। আল্লাহ নিজ কুদরতি হাতে তা বান্দাদের দান করবেন।

নবী করিম (সা.) বহু হাদিসে মাহে রমজানের রোজার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সাওয়াবের প্রত্যাশা ও বিশ্বাস নিয়ে রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী জীবনের পাপরাশি মোচন করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি-মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের শেষদিকে একদিন সাহাবায়ে কেরামদের লক্ষ্য করে মাহে রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘হে মানবসমাজ! তোমাদের ওপর একটি মহান মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এই মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে। যে ব্যক্তি এই মাসে নেক আমল দ্বারা আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভের কামনা করে, সে যেন অন্য সময়ে কোনো ফরজ আদায় করার মতো কাজ করল। আর এই মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ কাজ আদায় করল, সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি অর্জন করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস। ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের ফল হচ্ছে জান্নাত।’ (বায়হাকি)

হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং এর রাত্রিগুলোতে ঈমান ও ইহতিসাবের (সাওয়াবের প্রত্যাশা ও বিশ্বাস নিয়ে) সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করে, সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্যোভূমিষ্ঠ সন্তানের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

হাদিস শরিফে আরো উল্লেখ আছে যে রমজান মাস রহমত, বরকত, গুনাহ মাফ হওয়া ও দোয়া কবুলের মাস। এই পবিত্র মাসে ফেরেশতারা মানুষের উদ্দেশে প্রতিদিন বলেন, ‘হে কল্যাণপ্রত্যাশী! আল্লাহ তাআলার কথা স্মরণ করো, তার ইবাদত-বন্দেগিতে রত হও এবং একনিষ্ঠ মনে তাওবা করো। তোমরা এই মাসে যা কামনা করবে ও প্রার্থনা করবে—আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের প্রতিটি দিন-রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক মুসলমানের একটি করে দোয়া কবুল করা হয়।’ (তারগিব)

রোজাদারের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মেশকে-আম্বরের সুঘ্রাণ অপেক্ষা অধিকতর পছন্দনীয়।’ (আহমদ-বায়হাকি)

আরেক হাদিসে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। একটি ইফতারের সময়। অন্যটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (বুখারি ও মুসলিম)

এক হাদিসে আছে, ‘যদি বিনা কারণে কিংবা রোগাক্রান্ত হওয়া ছাড়া কেউ রোজা পালন না করে, তাহলে সারা জীবন রোজা রাখলেও তার ক্ষতিপূরণ হবে না।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)

রমজান মাসের রোজা মানুষকে যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়, মানুষের মন থেকে কুপ্রবৃত্তির প্রভাব দূর করে দেয়। আত্মাকে ধুয়ে-মুছে পূত-পবিত্র করে দেয় এবং হৃদয়কে ঈমানের শাখা-প্রশাখায় ভরিয়ে তোলে। সর্বোপরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।

রমজানে সংযম ও আত্মত্যাগের অনুশীলন এবং সে সঙ্গে ইসলামভিত্তিক ন্যায়নিষ্ঠা, সত্য ও সততা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা প্রয়োজন। নৈতিকতা, শালীনতা ও একত্রে ইফতার গ্রহণের মাধ্যমে সহমর্মিতার সদভ্যাস গড়ে তুলে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক কল্যাণ সাধনের পথ প্রশস্ত করার অনুশীলন করার মাস রমজান। চিরায়ত ইসলামী মূল্যবোধ, চিন্তা-ধারণা, ধর্মবিশ্বাস ও চরিত্র-আদর্শ এবং সর্বগ্রাসী অপরাধপ্রবণতা রোধের অনুশীলনের চেতনা জোরদার করার দারুণ উপলক্ষ তৈরি হয় এ মাসে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়