Monday, May 29

কাশ্মীরি যুবককে জিপে বাঁধা ভুল হয়নি: সেনাপ্রধান

কাশ্মীরি যুবককে জিপে বাঁধা ভুল হয়নি: সেনাপ্রধান

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: কোনো ভণিতা না করে কাশ্মীরে সেনা-জিপে বেঁধে মানব-ঢাল করার ঘটনাকে মুক্ত কণ্ঠে সমর্থন করলেন ভারতের সেনাপ্রধান।

এপ্রিল মাসে উপনির্বাচনের সময় জনৈক কাশ্মীরি যুবক ফারুক আহমেদ দারকে জিপের বনেটের সঙ্গে বেঁধে ঘুরেছিল সেনাবাহিনী। বিষয়টা নিয়ে রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে বিপুল তোলপাড় হয়। ওই ঘটনায় জড়িত সেনা অফিসার, মেজর লিতুল গগৈকে সম্প্রতি আলাদা করে সম্মানিত করে সেনাবাহিনী। তখনই ফের বিতর্ক ওঠে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, তাকে সম্মানিত করে কোন বার্তা দিচ্ছে বাহিনী।

রোববার সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত রাখঢাক না করে গগৈয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘নোংরা যুদ্ধের মোকাবিলায় উদ্ভাবনী ক্ষমতা কাজে লাগাতে হবে। শুধু তাই নয়(ওরা) পাথরের বদলে সেনাকে গুলি ছুড়লে ভাল হতো। তাহলে আমরা যা চাইছি, তা আরো সহজে করতে পারতাম!’

গুলির উত্তরে গুলি। অশান্ত কাশ্মীরকে বাগে আনতে সোজাসুজি খতম-লাইনই নেয়ার কথা বললেন রাওয়াত। সরকারি মহলে কেউ কেউ বলছেন, এটাই এখন সেনা এবং সরকারের অবস্থান। যা একই সঙ্গে পাকিস্তান এবং কাশ্মীরকে বার্তা দিতে চায়, কোনো ভাবে নরম হওয়ার প্রশ্ন নেই। বিক্ষোভের আগুন যতই জ্বলুক, কাশ্মীরি জনতা আরো বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়বে কি না, সেই ভেবে পিছু হটার জায়গা আর নেই।

গত বছর বুরহানের মৃত্যুর পর থেকে শান্তির মুখ দেখেনি কাশ্মীর। বুরহানের মৃত্যুতে যে ভাবে উপত্যকায় শোকের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল, সবজারের মৃত্যুতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই সঙ্গে গত এক বছর সীমান্ত সন্ত্রাসেও লাগাম নেই। গত ক’মাসে বেশ কয়েক জন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন কাশ্মীরে। পাকিস্তানের তরফে দুই জওয়ানের দেহ ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেনাপ্রধানের উপরে সেসব দিক থেকেও চাপ রয়েছে।

বিপিন খোলাখুলি বলেছেন, ‘আমাদের দিকে যখন পাথর-পেট্রোল বোমা ছোড়া হচ্ছে, তখন আমি আমার লোকেদের বলতে পারি না, দাঁড়িয়ে থেকে মরো!’

সেনাবাহিনীর পাশাপাশি চাপে রয়েছে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারও। বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, এত দীর্ঘ সময় ধরে এত অশান্ত পরিবেশ কাশ্মীর অনেক দিন দেখেনি। তাদের দাবি, পরিস্থিতি রোজই একটু একটু করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন একটা সময় নাগাড়ে ছররা বৃষ্টি করে আগুনে আরো ঘি ঢেলেছে। এখন ছররা বন্ধ হলেও লাগাতার কার্ফু, তল্লাশি, ধরপাকড় চলছে।

এই আবহে পাকিস্তানের নাম না করেই আজ সেনাপ্রধান জানান, কাশ্মীরে ছায়াযুদ্ধ চলছে। আর ছায়াযুদ্ধ একটা নোংরা যুদ্ধ। ফলে ভারতীয় সেনাকেও উদ্ভাবনী কৌশলের কথা ভাবতে হচ্ছে। মেজর গগৈয়ের বিরুদ্ধে সেনার ‘কোর্ট অব এনকোয়্যারি’ চলছে। কিন্তু জেনারেল রাওয়তের বক্তব্য, গগৈ মোটেই অন্যায় করেননি। তিনি ওই কাজ না করলে সেনা, ভোটকর্মী, পুলিশ, আধাসেনাদের উদ্ধার করা যেত না। চিড় ধরত বাহিনীর ঐক্যেই।

কিন্তু বিরোধীরা যে বারবার বলছেন, আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর কথা, তার কী হবে? সেনা-প্রশাসন যদি এত অনড় মনোভাব নিয়ে চলে, তাহলে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হবে কী করে।

এদিকে, নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, 'পাথর ছোড়া বন্ধ না হলে আলোচনা সম্ভব নয়।'

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়