Tuesday, May 9

তাহিরপুরে ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা

তাহিরপুরে ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত হচ্ছে শিশুরা

রোকন মিয়া (সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি): বয়স খুব একটা বেশি না ৮-৯ বছর। এই বয়সে যাদের বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা। তার পরিবর্তে মরণ নেশা ড্যান্ডিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে শত শত শিশু। সাময়িক সুখের প্রত্যাশায় অন্ধকারের চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছে শিশুরা। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে তাদের জীবন। জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে।

অনেক সময় মাদক বহনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে এসব শিশুরা। এমনি কিছু শিশু দেখা মিলছে সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায়।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার চারাগাঁও কলাগাঁও, বালিয়াঘাট, শ্রীপুর, বড়ছড়া, বুড়ুংগাছড়া, পাহাড়তলী, ট্যাকেরঘাট, লাকমা, লালঘাট, রজনী লাইন চানপুর, লাউরেরগড়, চিলাবাজার, বাদাঘাটসহ আর বেশ কিছু এলাকায় কিছু শিশু বসে পলিথিন দিয়ে কি যেন করছে।

তাদের নাম জিজ্ঞাসা করলেই উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলে 'আপনারা এখানে কেন আইছেন।' আবার তাদের মধ্যে জোড় গলায় নাম না জানা একজন বলে, ‘ড্যান্ডি’ বানাইয়া খাই। এটি খাইলে মনের দুঃখ থাকে না। ক্ষুধাও লাগে না।

সন্ধ্যা হলেই দেখা যায় অনেক শিশুদের পথে বসে সেবন করছে ড্যান্ডি নামক এই নেশাদ্রব্য। জুতা কিংবা ফোমে ব্যবহৃত সলিউশন (আঠা) পলিথিনে/সুতি কাপড়ের ভাঁজে ভরে কিছুক্ষণ পরপর মুখের সামনে নিয়ে শ্বাস টেনে নেশা করে তারা। অনেক সময় দেখা গেছে মাদক সেবনের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে খুনোখুনিরও ঘটনা ঘটছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০ থেকে ৩০ টাকায় এক ধরনের জুতার গাম কেনে শিশুরা। বিভিন্ন দোকানে এসব গাম পাওয়া যায় বলে জানা যায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পলিথিনের ব্যাগে আঠাল ওই পদার্থ নিয়ে কিছুক্ষণ ঝাঁকানো হয়। তারপর পলিথিন থেকে নাক বা মুখ দিয়ে বাতাস টেনে নেয়। এই নেশা ‘ড্যান্ডি’ নামে পরিচিত। এই নেশায় আসক্ত বেশির ভাগ সীমান্তের শিশুরা। গত শনিবার চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের সামনে গেলে দেখা যায় কিছু শিশু ক্যাম্পের সামনেই ড্যান্ডি সেবন করছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৮ থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুরা সাধারণত গাঁজা, সিগারেট ও গাম সেবন করে। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা ফেনসিডিল ও হেরোইন সেবন করে। মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত  পরিবারের কিশোর- তরুণদের নেশার অন্যতম উপকরণ ইয়াবা। তবে অধিকাংশ পথশিশু ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত।

তবে তাহিরপুরে ৮- ২৫ বয়সীদের মধ্যে ড্যান্ডি সেবনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

কলাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের সামনে কথা হয় ১২ বছরের শিশু ইসলাম  নামের একজনের সাথে সে জানায়, ‘আমার সঙ্গে আমার অনেক বন্ধুরা থাকে। তারা সবাই আঠা খায়, তাই ওদের দেখা-দেখি আমিও আঠা খাই।’

ট্যাকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে উত্তর পাড়া নামক স্থানে গিয়ে দেখা যায় সীমান্তের পাশে বসে আছে দুই শিশু তাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানায়, তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। সে সারাদিন এলাকার শুল্ক স্টেশনে কয়লার গাড়িতে কাজ করে এরপর বিকেলে ড্যান্ডি সেবন করে।

স্থানীয় সুশীল ব্যক্তিরা বলছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর বা পুলিশ, বিজিবি  চেষ্টা করলে হয়তো এসব শিশুদের উদ্ধার করে ভাল পথে ফিরিয়ে আনতে পারে। সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলো এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারে। মাদকাসক্ত এসব শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা না হলে এরা বিপথগামী হয়ে পড়বে। অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়লে সমাজ অন্ধকারের পথে চলে যাবে। কাজেই এদের রক্ষার্থে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়