Thursday, May 11

শবেবরাত নিয়ে বিভ্রান্তি কাম্য নয়


মাহফুয আহমদ: আজকাল কিছু বন্ধু কারও কারও কথা শুনে কিংবা কোনো কোনো লেখা দেখে সংশয়ে পড়েন যে, আদৌ ১৫ শাবানের রাতের কোনো ফজিলত বা বিশেষত্ব আছে কিনা। বাস্তব কথা হলো, শাবানের পুরো মাসটাই ফজিলতপূর্ণ এবং বরকতময়। নবীজি (সা.) এ মাসের বরকত কামনা করে দোয়া করতেন। রমজান মাসের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এ মাসে তিনি বেশি বেশি রোজা রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া কখনও পূর্ণ কোনো মাস রোজা রাখতে আমি দেখিনি। আর শাবান মাসে তিনি যেভাবে অধিকহারে রোজা রাখতেন, বছরের অন্য কোনো মাসে এমনটা করতেন না।’ (বোখারি : ১৬৮৬, মুসলিম : ১৯৫৬)। এরকম নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতকে এ মাসের একটি রাত সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তখন দোয়া কবুল হয়। হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) এরশাদ করেন, ‘অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।’ ( ইবনে হিব্বান : ৫৬৬৫)। আজকাল আমাদের যেসব বন্ধু এ সম্পর্কে সংশয় সৃষ্টি করে চলছেন, তারা যেসব মনীষীর অনুসরণ ও অনুকরণ করে থাকেন; তাদের সেসব বরেণ্য আলেমও কিন্তু ১৫ শাবানের রাতের ফজিলত আছে বলে স্বীকার করেছেন এবং এ সংক্রান্ত হাদিস গ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। উদাহরণস্বরূপ এখানে কয়েকজনের উদ্ধৃতি পেশ করা হলোÑ ১. শায়খুল ইসলাম হাফিজ ইবনে তাইমিয়া (রাহ.) (মৃ. ৭২৮ হি.) বলেন, ১৫ শাবানের রাতের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক ‘মারফু’ হাদিস এবং সাহাবিদের ‘আসার’ বা উক্তি বর্ণিত হয়েছে। এগুলো দ্বারা ওই রাতের ফজিলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। সলফে সালেহিনের কেউ কেউ এ রাতে নফল নামাজের ব্যাপারে যতœবান হতেন। আর শাবানের রোজার ব্যাপারে তো সহিহ হাদিসগুলোই রয়েছে। কোনো কোনো আলেম যদিও এই রাতের ফজিলত অস্বীকার করেন; কিন্তু হাম্বলি ও অহাম্বলি অধিকাংশ আলেমই এ রাতের ফজিলতের কথা স্বীকার করে থাকেন। ইমাম আহমাদ (রহ.) এর মতও তা-ই। কেননা এর ফজিলত সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে এবং এগুলোর সমর্থনে সালাফের (সাহাবি ও তাবেঈ) উক্তিও বিদ্যমান আছে; যেগুলো ‘সুনান’ ও ‘মুসনাদ’ শিরোনামে সংকলিত হাদিসের কিতাবে (বরং কতক ‘সহিহ’ শিরোনামের কিতাবেও যেমন সহিহ ইবনে খুযায়মা, সহিহ ইবনে হিব্বান প্রভৃতিতে) রয়েছে। (দেখুন : ইকতিজাউস সিরাতিল মুসতাকিম : ২/৬৩১, মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ, এ বিষয়ে তার আরও উক্তি জানতে দেখুন : মাজমুউল ফাতাওয়া : ৩/১৩১-১৩২)। ২. মুহাদ্দিস আবদুর রাহমান মুবারকপুরি (রহ.) (মৃ. ১৩৫৩ হি.) বলেন, ‘শাবানের ১৫ তারিখের রাতের ফজিলতের ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেগুলোর সমষ্টি থেকে বোঝা যায়, এর একটা ভিত্তি রয়েছে।’ (দেখুন : তুহফাতুল আহওয়াজি শারহু সুনানিত তিরমিজি : ৩/৪৪১-৪৪২; দারুল ফিকর, বয়রুত : ১৩৯৯ হি.)। ৩. বর্তমানে আমাদের সালাফি বন্ধুদের নন্দিত মুহাদ্দিস, মরহুম শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি (মৃ. ১৪২০ হি.) ১৫ শাবানের রাতের ফজিলতবিষয়ক একটি হাদিস সম্পর্কে ‘সহিহ হাদিস’ বলে মন্তব্য করেছেন। (দেখুন : সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহিহা : ৩/১৩৫; হাদিস : ১১৪৪, শাবাকা)। এ রাতে কবর জিয়ারত করা প্রসঙ্গেও কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। নবীজি (সা.) এ রাতে বাকির কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করেছেন। (সুনানে তিরমিজি : ৭৩৯; সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৮৯)। অতএব কেউ চাইলে কবর জিয়ারতেও যেতে পারেন। কিন্তু নবীজি এমনটা করেছেন বলে তাঁর সারাজীবনের একটিমাত্র রাতেরই বর্ণনা পাওয়া যায়, ফলে এটাকে নিয়মিত সুন্নত বা কর্মে পরিণত করার অবকাশ নেই। তা ছাড়া সংঘবদ্ধ হয়ে কিংবা নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে সম্মিলিত জিয়ারতেরও কোনো ধারণা সুন্নতে নববি অথবা সাহাবা ও তাবিঈন থেকে মিলে না। বস্তুত প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিশেষ সওয়াবের কথা একাধিক সহিহ হাদিসে বিধৃত হয়েছে; যেগুলোকে ‘আইয়ামে বিজ’-এর রোজা বলা হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, প্রিয়নবী (সা.) আমাকে তিনটি জিনিসের অসিয়ত করে গেছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, প্রতি মাসের এ তিনটি রোজা রাখা। (বোখারি : ১১২৪; মুসলিম : ১১৮২)। মোটকথা, এ রাতে আমাদের করণীয় কী বা কেমন হওয়া উচিত, আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) (মৃ. ৭৯৫ হি.) এর ভাষায়, ‘মোমিনের কর্তব্য এই যে, এ রাতে খালেস দিলে তওবা করে জিকির, দোয়া ও ইস্তেগফারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। যতেœর সঙ্গে নফল নামাজ পড়বে। কেননা কখন মৃত্যু এসে যায় বলা যায় না। তাই কল্যাণের মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই তার মূল্যায়ন করা জরুরি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়