কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: একটি
প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে গড়পড়তায় মানুষ মস্তিষ্কের ৫% থেকে ১০% ব্যবহার করে।
এই ধারনাটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষকে নিয়ে আলোচনায় ব্যবহার করা হয়। সেই
সাথে এটিও বলা হয় যে, মানুষ তার মেধা বা চর্চার মাধ্যমে মস্তিষ্কের এই
ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে সাফল্য অর্জন করতে পারে। কিন্তু সত্যিই কি
তাই?
এই ধারণাটির সম্ভাব্য উৎপত্তি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরতত্ত্ববিদ উইলিয়াম জেমস এবং বরিস সিডিস এর মাধ্যমে। তারা দুজন একজন শিশু প্রডিজি নিয়ে গবেষণা করে তার অতি দ্রুত মানসিক বিকাশ লক্ষ্য করেন। এ থেকে তারা দাবী করেন সাধারণ মানুষ আসলে তার সক্ষমতার কেবল একটি ক্ষূদ্র অংশই ব্যবহার করে।
গবেষকগণ নির্দিষ্ট কোনো পরিমানের উল্লেখ না করলেও আমেরিকান লেখক লয়েল থমাস এই ধারণা ব্যবহার করে ১৯৩৬ সালে তার একটি বইয়ে উল্লেখ করেন “হার্ভার্ডের অধ্যাপক উইলিয়াম জোন্স বলে থাকেন সাধারণ মানুষ গড়পড়তায় মানসিক সক্ষমতার কেবল ১০ শতাংশ ব্যবহার করে।’’ তবে এই বইটি প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেওও ১০ শতাংশ মস্তিষ্ক ব্যাবহারের মিথের প্রচলন আত্মউন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মকান্ডে চালু ছিলো।
উদাহরণস্বরূপ: Mind Myth: Exploring Popular Assumptions About the Mind and Brain নাম বইতে একটি অধ্যায় লেখা হয়েছে ১০ শতাংশ মস্তিষ্কের বিষয়টি নিয়ে এবং সেটি ব্যবহার করা হয়েছে আত্মউন্নয়নের বিজ্ঞাপনের উৎস হিসেবে। ১৯৭০ সালে মনোবিদ এবং শিক্ষক জর্জ লোজানভ (Georgi Lozanov) তার শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ণের জন্য এই ধরনাটি গ্রহণ করেন যাতে বিশ্বাস করা হয় “আমরা সম্ভবতঃ আমাদের মানসিক সক্ষমতার ৫ থেকে ১০% ব্যবহার করি।”
তবে ১০% মস্তিষ্ক ব্যবহার ব্যাখ্যার সূত্রপাত হয় একটি স্নায়বিক গবেষণার ভুল বোঝাবোঝি থেকে কিংবা ভুল ব্যাখ্যা থেকে। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিতে কিংবা বিংশ শতকের শুরুর দিকে আমাদের প্রযুক্তিগত ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কিছুর তাৎপর্য যথাযথভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব হতো না। স্নায়ুবিদ্যার গবেষকগণ মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্স এবং অন্য কিছু অঞ্চলের জটিল কাজকর্ম বুঝতে পারতেন না। অনেকসময় মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সেসবের বাহ্যিক প্রভাব এত সুক্ষ যে ক্ষতিগ্রস্থ মস্তিষ্ক নিয়েও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। মস্তিষ্ক প্রধাণতঃ গ্লিয়াল কোষ (glial cell) দিয়ে গঠিত যেগুলোর কর্মকান্ড বোঝা মানুষের জন্য দুঃসাধ্য ছিলো।
কার্ল ল্যাসলে ইঁদুরের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সের বিশাল একটা অংশ সরিয়ে ফেলার পরও দেখা গেলো ইঁদুরের কর্মকান্ড স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। সেই থেকেও ১০% ব্যবহারের ধারণা চালু হয়ে গেছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় যা অনুপস্থিত ছিলো সেটি হচ্ছে ইঁদুরের আচরণ অনুধাবণ করার ক্ষমতা।
জনপ্রিয় সাহিত্যে এই তথ্যগুলোর ব্যবহার এই মিথটিকে ছড়াতো সাহায্য করেছে সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন সময় নানাবিধ উপন্যাস, চলচিত্র, ছোটগল্পে দেখানো হয়েছে মানুষ মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ভুল ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে। এই ধারনা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে প্রচুর এবং এটাকে গণমাধ্যমে প্রায়ই সত্য বলে তুলে ধরা হয়েছে।
বিখ্যাত উপন্যাস The Dark Field, The Desert Files এবং Limitless বইতে এই ধারণাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের জনপ্রিয় হলিউড মুভি ‘লুসি’ মোটামুটি এই ধারণাকে উপজীব্য করেই নির্মিত হয়েছে।
অক্টোবর ২৭ সালে বিভিন্ন প্রাচীন মিথ খন্ডনকারী অনুষ্ঠান Mythbuster এ এই মিথটিকে খন্ডন করে একটি পর্ব প্রচার করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ম্যাগনেটোএনসেফালোগ্রাফী(magnetoencephalography) এবং ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজনেন্স ইমেজিং (fMRI)ব্যবহার করে এই মিথটি খন্ডন করা হয়েছে।
স্নায়ুতন্ত্রবিদ ব্যারি গর্ডন ১০% মস্তিষ্ক ব্যবহারের এই মিথকে মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন “আমরা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যত সকল অংশই ব্যবহার করি। এবং মস্তিষ্কের অধিংকাংশই প্রায় সবসময়ই কার্যকর থাকে।” এই মিথের খন্ডন করে স্নায়ুতন্ত্রবিদ ব্যারি বেয়ারস্টেইন সাতটি যুক্তি তুলে ধরেন।
১. মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্থ অংশের গবেষণা: যদি সাধারণভাবে মস্তিষ্কের ১০ শতাংশই কেবল ব্যবহার করা হতো তাহলে মস্তিষ্কের কিছু কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার প্রভাব সার্বিক কর্মক্ষমতায় পড়ত না। কিন্তু মস্তিষ্কে এমন কোনো অংশ নেই যা ক্ষতিগ্রস্থ হলে এর প্রভাব কর্মকান্ডে পড়ে না। এমনকি খুব ছোটখাট অঞ্চলে খুব সামান্য সমস্যা হলেও তার অদ্ভুতুড়ে প্রভাব লক্ষ করা যায়।
২. মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা যায় একজন মানুষ যে কাজই করুক না কেন মস্তিষ্কের সবগুলো অঞ্চলই উদ্দীপ্ত থাকে। বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য কোনো একটি এলাকা অন্য এলাকার চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকতে পারে, কিন্তু এমন কোনো এলাকা পাওয়া যায় না যা একেবারেই নিষ্ক্রিয়।
৩. মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে অনেক বেশী খরুচে। এর যথাযথ পরিচালনার জন্য প্রচুর পুষ্টি এবং প্রচুর শক্তি বরাদ্দ দিতে হয়। শরীরের মোট প্রয়োজনের ২০% শক্তি মস্তিষ্ক একাই খরচ করতে পারে- অথচ এর ওজন সমগ্র শরীরের মাত্র ২ শতাংশ। যদি ৯০ শতাংশ অংশ অব্যবহৃতই থেকে যেত তাহলে তা মানুষকে বিবর্তনগত সুবিধা দিত না তথা মানুষ এভাবে বিবর্তিত হত না। কেননা, বিবর্তন সর্বদাই সম্পদের যথাযথ ব্যবহার উৎসাহীত করে থাকে।
৪. মস্তিষ্কের চিত্রায়ন: আজকাল প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কারণে বিভিন্ন স্ক্যানিং ব্যবস্থার মাধ্যমে মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা খুব সহজসাধ্য হয়েছে। একটি জীবত দেহে কর্মক্ষম মস্তিষ্কের কর্মকান্ড আমরা সুস্পষ্ট ত্রিমাত্রিক ছবির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে পারবি। এর মধ্যে রয়েছে পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (PET) এবং ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজনেন্স ইমেজিং (fMRI)। এসবের মাধ্যমে দেখা যায় ঘুমিয়ে থাকলেও মানুষের ব্রেনের সব অংশই কোনো না কোনা মাত্রায় সক্রিয় থাকে। কেবলমাত্র মস্তিষ্কের কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেই ক্ষেত্রে ‘মৃত অঞ্চল’ দেখা যায়।
৫. একটি একক বস্তু হিসেবে নয়, বরং মস্তিষ্ক কাজ করে এর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের হিসেব-নিকেশ ও তথ্য পক্রিয়াকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে। দশকের পর দশক ধরে গবেষণায় মস্তিষ্কের অনুপুঙ্খ মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে যাতে এর বিভিন্ন অঞ্চলের কাজগুলো চিন্থিত করা হয়েছে। এই মানচিত্রে এমন কোনো অঞ্চল নেই যার কোনো কাজ নেই।
৬. গবেষকগণ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের কার্যক্ষমতা অনুধাবণের জন্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তড়িৎদ্বার প্রবেশ করিয়ে সেগুলোর মাধ্যমে তড়িৎ সংকেত পরিমাপ করেন। যদি ৯০% মস্তিষ্কের কোনো ব্যবহার না থাকত তাহলে এই তা তড়িৎদ্বারের মাধ্যমে উদঘটিত হতো।
৭. মস্তিষ্কের কোনো কোষ অব্যবহৃত থাকলে সেগুলো ক্রমশঃ অকার্যকর হয়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অংশ বিশেষ নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখলে তাতে একটি বিশাল অংশের কোষের অকার্যকর অবস্থায় পাওয়ার কথা। কিন্তু এ ধরনের কোনো পর্যবেক্ষণ করা যায় নি।
এই ধারণাটির সম্ভাব্য উৎপত্তি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরতত্ত্ববিদ উইলিয়াম জেমস এবং বরিস সিডিস এর মাধ্যমে। তারা দুজন একজন শিশু প্রডিজি নিয়ে গবেষণা করে তার অতি দ্রুত মানসিক বিকাশ লক্ষ্য করেন। এ থেকে তারা দাবী করেন সাধারণ মানুষ আসলে তার সক্ষমতার কেবল একটি ক্ষূদ্র অংশই ব্যবহার করে।
গবেষকগণ নির্দিষ্ট কোনো পরিমানের উল্লেখ না করলেও আমেরিকান লেখক লয়েল থমাস এই ধারণা ব্যবহার করে ১৯৩৬ সালে তার একটি বইয়ে উল্লেখ করেন “হার্ভার্ডের অধ্যাপক উইলিয়াম জোন্স বলে থাকেন সাধারণ মানুষ গড়পড়তায় মানসিক সক্ষমতার কেবল ১০ শতাংশ ব্যবহার করে।’’ তবে এই বইটি প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেওও ১০ শতাংশ মস্তিষ্ক ব্যাবহারের মিথের প্রচলন আত্মউন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মকান্ডে চালু ছিলো।
উদাহরণস্বরূপ: Mind Myth: Exploring Popular Assumptions About the Mind and Brain নাম বইতে একটি অধ্যায় লেখা হয়েছে ১০ শতাংশ মস্তিষ্কের বিষয়টি নিয়ে এবং সেটি ব্যবহার করা হয়েছে আত্মউন্নয়নের বিজ্ঞাপনের উৎস হিসেবে। ১৯৭০ সালে মনোবিদ এবং শিক্ষক জর্জ লোজানভ (Georgi Lozanov) তার শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ণের জন্য এই ধরনাটি গ্রহণ করেন যাতে বিশ্বাস করা হয় “আমরা সম্ভবতঃ আমাদের মানসিক সক্ষমতার ৫ থেকে ১০% ব্যবহার করি।”
তবে ১০% মস্তিষ্ক ব্যবহার ব্যাখ্যার সূত্রপাত হয় একটি স্নায়বিক গবেষণার ভুল বোঝাবোঝি থেকে কিংবা ভুল ব্যাখ্যা থেকে। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিতে কিংবা বিংশ শতকের শুরুর দিকে আমাদের প্রযুক্তিগত ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কিছুর তাৎপর্য যথাযথভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব হতো না। স্নায়ুবিদ্যার গবেষকগণ মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্স এবং অন্য কিছু অঞ্চলের জটিল কাজকর্ম বুঝতে পারতেন না। অনেকসময় মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সেসবের বাহ্যিক প্রভাব এত সুক্ষ যে ক্ষতিগ্রস্থ মস্তিষ্ক নিয়েও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। মস্তিষ্ক প্রধাণতঃ গ্লিয়াল কোষ (glial cell) দিয়ে গঠিত যেগুলোর কর্মকান্ড বোঝা মানুষের জন্য দুঃসাধ্য ছিলো।
কার্ল ল্যাসলে ইঁদুরের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সের বিশাল একটা অংশ সরিয়ে ফেলার পরও দেখা গেলো ইঁদুরের কর্মকান্ড স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। সেই থেকেও ১০% ব্যবহারের ধারণা চালু হয়ে গেছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় যা অনুপস্থিত ছিলো সেটি হচ্ছে ইঁদুরের আচরণ অনুধাবণ করার ক্ষমতা।
জনপ্রিয় সাহিত্যে এই তথ্যগুলোর ব্যবহার এই মিথটিকে ছড়াতো সাহায্য করেছে সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন সময় নানাবিধ উপন্যাস, চলচিত্র, ছোটগল্পে দেখানো হয়েছে মানুষ মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ভুল ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে। এই ধারনা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে প্রচুর এবং এটাকে গণমাধ্যমে প্রায়ই সত্য বলে তুলে ধরা হয়েছে।
বিখ্যাত উপন্যাস The Dark Field, The Desert Files এবং Limitless বইতে এই ধারণাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের জনপ্রিয় হলিউড মুভি ‘লুসি’ মোটামুটি এই ধারণাকে উপজীব্য করেই নির্মিত হয়েছে।
অক্টোবর ২৭ সালে বিভিন্ন প্রাচীন মিথ খন্ডনকারী অনুষ্ঠান Mythbuster এ এই মিথটিকে খন্ডন করে একটি পর্ব প্রচার করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ম্যাগনেটোএনসেফালোগ্রাফী(magnetoencephalography) এবং ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজনেন্স ইমেজিং (fMRI)ব্যবহার করে এই মিথটি খন্ডন করা হয়েছে।
স্নায়ুতন্ত্রবিদ ব্যারি গর্ডন ১০% মস্তিষ্ক ব্যবহারের এই মিথকে মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন “আমরা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যত সকল অংশই ব্যবহার করি। এবং মস্তিষ্কের অধিংকাংশই প্রায় সবসময়ই কার্যকর থাকে।” এই মিথের খন্ডন করে স্নায়ুতন্ত্রবিদ ব্যারি বেয়ারস্টেইন সাতটি যুক্তি তুলে ধরেন।
১. মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্থ অংশের গবেষণা: যদি সাধারণভাবে মস্তিষ্কের ১০ শতাংশই কেবল ব্যবহার করা হতো তাহলে মস্তিষ্কের কিছু কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার প্রভাব সার্বিক কর্মক্ষমতায় পড়ত না। কিন্তু মস্তিষ্কে এমন কোনো অংশ নেই যা ক্ষতিগ্রস্থ হলে এর প্রভাব কর্মকান্ডে পড়ে না। এমনকি খুব ছোটখাট অঞ্চলে খুব সামান্য সমস্যা হলেও তার অদ্ভুতুড়ে প্রভাব লক্ষ করা যায়।
২. মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা যায় একজন মানুষ যে কাজই করুক না কেন মস্তিষ্কের সবগুলো অঞ্চলই উদ্দীপ্ত থাকে। বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য কোনো একটি এলাকা অন্য এলাকার চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকতে পারে, কিন্তু এমন কোনো এলাকা পাওয়া যায় না যা একেবারেই নিষ্ক্রিয়।
৩. মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে অনেক বেশী খরুচে। এর যথাযথ পরিচালনার জন্য প্রচুর পুষ্টি এবং প্রচুর শক্তি বরাদ্দ দিতে হয়। শরীরের মোট প্রয়োজনের ২০% শক্তি মস্তিষ্ক একাই খরচ করতে পারে- অথচ এর ওজন সমগ্র শরীরের মাত্র ২ শতাংশ। যদি ৯০ শতাংশ অংশ অব্যবহৃতই থেকে যেত তাহলে তা মানুষকে বিবর্তনগত সুবিধা দিত না তথা মানুষ এভাবে বিবর্তিত হত না। কেননা, বিবর্তন সর্বদাই সম্পদের যথাযথ ব্যবহার উৎসাহীত করে থাকে।
৪. মস্তিষ্কের চিত্রায়ন: আজকাল প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কারণে বিভিন্ন স্ক্যানিং ব্যবস্থার মাধ্যমে মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা খুব সহজসাধ্য হয়েছে। একটি জীবত দেহে কর্মক্ষম মস্তিষ্কের কর্মকান্ড আমরা সুস্পষ্ট ত্রিমাত্রিক ছবির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে পারবি। এর মধ্যে রয়েছে পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (PET) এবং ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজনেন্স ইমেজিং (fMRI)। এসবের মাধ্যমে দেখা যায় ঘুমিয়ে থাকলেও মানুষের ব্রেনের সব অংশই কোনো না কোনা মাত্রায় সক্রিয় থাকে। কেবলমাত্র মস্তিষ্কের কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেই ক্ষেত্রে ‘মৃত অঞ্চল’ দেখা যায়।
৫. একটি একক বস্তু হিসেবে নয়, বরং মস্তিষ্ক কাজ করে এর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের হিসেব-নিকেশ ও তথ্য পক্রিয়াকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে। দশকের পর দশক ধরে গবেষণায় মস্তিষ্কের অনুপুঙ্খ মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে যাতে এর বিভিন্ন অঞ্চলের কাজগুলো চিন্থিত করা হয়েছে। এই মানচিত্রে এমন কোনো অঞ্চল নেই যার কোনো কাজ নেই।
৬. গবেষকগণ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের কার্যক্ষমতা অনুধাবণের জন্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তড়িৎদ্বার প্রবেশ করিয়ে সেগুলোর মাধ্যমে তড়িৎ সংকেত পরিমাপ করেন। যদি ৯০% মস্তিষ্কের কোনো ব্যবহার না থাকত তাহলে এই তা তড়িৎদ্বারের মাধ্যমে উদঘটিত হতো।
৭. মস্তিষ্কের কোনো কোষ অব্যবহৃত থাকলে সেগুলো ক্রমশঃ অকার্যকর হয়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অংশ বিশেষ নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখলে তাতে একটি বিশাল অংশের কোষের অকার্যকর অবস্থায় পাওয়ার কথা। কিন্তু এ ধরনের কোনো পর্যবেক্ষণ করা যায় নি।
খবর বিভাগঃ
তথ্য প্রযুক্তি
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়