Friday, March 10

কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলুন


কাজী সুলতানুল আরেফিন: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুরু করা মানে আল্লাহর নাম নিয়ে কোনো কিছু শুরু করা। এতে আল্লাহ ওই কাজে রহমত ও বরকত দান করেন। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত থেকে শুরু করে আল্লাহর নির্দেশিত ও ইসলামী বিধানমতে সব ভালো কাজ শুরু করার সময় 'বিসমিল্লাহ' বলতে হয়। কিন্তু অন্যায় ও ইসলামের বিরুদ্ধ-কাজের জন্য 'বিসমিল্লাহ' বলা আল্লাহদ্রোহের শামিল। অমূল্য ও অতুলনীয় এই বাক্যের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ পায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, 'প্রত্যেক ভালো কাজের শুরুতে যদি 'বিসমিল্লাহ' বলা না হয়, তা হলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।' (আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ)। আমরা অনেকেই সব কাজে দূরে থাক অন্তত খাওয়ার আগেও এই বিসমিল্লাহ বলতে অনেকে ভুলে যাই। বিসমিল্লাহ বলা সব মুসলমানের অবশ্যই উচিত। বিসমিল্লাহ বলে কোনো কাজ শুরু করা মানেই এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহই আমাকে এ কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। যদি এ কাজে আল্লাহর সায় না থাকত, আমি কখনোই তা করতে পারতাম না। হে আল্লাহ, একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটা করছি। আপনি এ কাজে বরকত দিন। কেউ কখনও হারাম কাজ করতে গিয়ে বিসমিল্লাহ বলতে পারে না। যদি বলে, সে আসলে দ্বিগুণ গুনাহ করছে। কারণ, সে যখন বলে বিসমিল্লাহ, সে তখন সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আল্লাহই তাকে এ কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। অথচ আল্লাহ কখনোই সে কাজের বৈধতা দেননি। এটা হলো একটা গুনাহ। আর দ্বিতীয়টা হলো ওই হারাম কাজের গুনাহ। কাজ ও কথার শুরুতেই বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, যে কাজ বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা না হয় তা কল্যাণহীন ও বরকতশূন্য থাকে। এর মাধ্যমে কাজের শুরুতে আল্লাহর আনুগত্য করা ও বিনয় ভাব প্রকাশ পায়। এ বাক্যের মাধ্যমে কাজ শুরু করলে শয়তানের অসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকা যায়। হুজায়ফা (রা.) বলেন- নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না।' (মুসলিম, আবু দাউদ)। জাবির (রা.) বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'বিসমিল্লাহ বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ কর। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। বিসমিল্লাহ বলে বাতি নিভিয়ে দাও। একটু কাঠখড়ি হলেও আড়াআড়িভাবে বিসমিল্লাহ বলে পাত্রের মুখ ঢেকে রাখ। বিসমিল্লাহ বলে পানির পাত্র ঢেকে রাখ।' (বুখারি হা-৩২৮০, মুসলিম হা-২০১২, আবু দাউদ হা-৩৭৩১, তিরমিজি হা-২৮৫৭)। আয়েশা (রা.) বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি খাদ্য খাবে সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তাহলে সে যেন বলে, বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু' (আবু দাউদ হা-৩৭৬৭, ইবনু মাজাহ হা-৩২৬৪)। বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করলে আল্লাহ তাকে রহমত দান করেন, হেফাজতে রাখেন ও কাজে বরকত দান করেন। আনাস (রা.) বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যদি কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, 'বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।' অর্থাৎ 'আল্লাহর নামে বের হলাম, আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম, আল্লাহ ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই, ক্ষমতা নেই; আল্লাহ তখন ওই ব্যক্তিকে শয়তানের হাত থেকে পথ রক্ষা করেন।' বিসমিল্লাহর গুরুত্ব ও বরকত অপরিসীম। বিসমিল্লাহ না বলার কারণে নেক নিয়ত থাকলেও অনেক কর্মে বরকত না হওয়ায় অসম্মানিত হতে হয়। কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হলে সে কাজে আল্লাহর রহমত ও বরকত অবধারিত হয়। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে প্রথম ওহি নাজিলের সময়ও এই উত্তম বাক্য পড়ানো হয়েছিল। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস বলেন, 'জিবরাইল (আ.) সর্বপ্রথম মুহাম্মদের (সা.) প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাইল (আ.) বললেন, হে মুহাম্মদ, আপনি আশ্রয় চান। মুহাম্মদ (সা.) বললেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর জিবরাইল (আ.) বললেন, হে নবী, আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। অতঃপর জিবরাইল (আ.) বললেন, ইকরা বিস্মি। অর্থাৎ আপনি পড়ূন, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, 'এটাই প্রথম সূরা, যা আল্লাহতায়ালা জিব রাইলের (আ.) মাধ্যমে মুহাম্মদের (সা.) প্রতি অবতীর্ণ করেন।' (ত্বাবারি, তাফসির ইবনু কাছির হা-২৬৩) বিসমিল্লাহর মর্মকথা আসলে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। এই বিসমিল্লাহর ফজিলত গুনেও শেষ করা যাবে না। আসুন, সব ভালো কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করি। arefin.feni99@gmail.com

শেয়ার করুন

1 comment:

  1. শুরু হইল বিসমিল্লাহ রসইতে এই সুরা টা জানা থাকলে দেন প্লিজ

    ReplyDelete

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়