Saturday, February 11

বিএনপিকে চাপে রেখেই নির্বাচনে আনবে আ.লীগ

বিএনপিকে চাপে রেখেই নির্বাচনে আনবে আ.লীগ

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিএনপিকে বর্তমান দুরবস্থা ও চাপের মধ্যে রেখেই আগামী নির্বাচনে আনতে চায়। সে জন্য কৌশল ঠিক করার কাজও চলছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।

সরকারি দলের নেতারা মনে করছেন, সাংবিধানিক সব বাস্তবতা মেনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া বিএনপির সামনে খুব একটা বিকল্পও নেই। কারণ, পরপর দুবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার মতো আইনি জটিলতায় পড়বে বিএনপি।

সরকার ও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এই লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। সূত্রগুলো বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপিকে নানাভাবে চাপে রাখার যে মনোভাব ছিল সরকারি দলে, সেটা এখনো আছে। গত নির্বাচনের আগে সরকারের পরিকল্পনার বিপরীতে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোর সামনে আন্দোলনসহ অন্য বিকল্প ছিল। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিকে অন্য বিকল্প নিয়ে ভাবারও সুযোগ দেবে না সরকার।

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে চাপে রাখার কৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নিজের সাংগঠনিক প্রস্তুতির কাজও শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে কর্মী সমাবেশ শুরু করেছে দলটি। ইতিমধ্যে রংপুর ও বগুড়ায় কর্মী সমাবেশ হয়েছে। আজ শনিবার হবে কক্সবাজারে। চলতি মাসেই আরও দু-তিনটি কর্মী সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এসব সমাবেশের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনের আগে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত মিটিয়ে ফেলা। সাংসদদেরও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিরোধ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার পরিচালনায় ও রাজনীতিতে নানা উত্থান-পতন আসতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে বিএনপিকে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। অবস্থা এমন দাঁড়াবে যে তাদের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাইরে কোনো বিকল্প থাকবে না। ওই নেতা আরও বলেন, বিএনপি ‘খর্ব শক্তি’ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। এ জন্য নিজেদের ঘর গোছানো জরুরি। একই সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা বা ঐক্যের প্রক্রিয়াতেও যেতে হতে পারে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়াটাই হবে বিএনপিসহ বিরোধীদের উত্তম বিকল্প। আমার বিশ্বাস, তারা নির্বাচনে আসবে এবং জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সাংসদেরাও নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন।

সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, তাদের কাছে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারেনি। মুখে সমালোচনা করলেও বিএনপি নতুন কমিশনকে মেনে নিতে অনেকটা বাধ্য হয়েছে। বিএনপি সামনে হয়তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছাকাছি নির্বাচনকালীন বিশেষ সরকারের জন্য সোচ্চার হবে। তবে আওয়ামী লীগ ও সরকার এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, তারা মনে করছেন, আগামী কিছুদিন বিএনপির রাজনীতি দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের মামলাকে কেন্দ্র করেই ঘুরপাক খাবে। এমনকি আগামী নির্বাচনের আগেও তারা এ থেকে বের হতে পারবে না। ফলে তারা নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা সরকারবিরোধী কোনো ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করতে পারবে না। তারা রাজনৈতিক সমস্যা মীমাংসার জন্য কূটনীতিকদের দ্বারস্থ হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসা এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো চাপের আশঙ্কা এখন আর নেই। খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিম দাবি করেন, আইন-আদালতের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনো উৎসাহ বা আগ্রহ কোনোটাই নেই। মামলার বিষয়টি খালেদা জিয়াকে আইনিভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।

সরকারি দলের সূত্রগুলো জানায়, নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে কয়েকটি সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের কিছু নির্বাচন রয়েছে। এসব নির্বাচনে যাতে কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়, সে জন্য সরকার সচেষ্ট থাকবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মতো অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় প্রার্থী দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে হাঁটবে সরকার। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বড় সভা-সমাবেশ করার ক্ষেত্রে যে অনানুষ্ঠানিক বাধানিষেধ রয়েছে, তা এখনই তোলা হবে না। খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের পর বিএনপি কী আচরণ করে, তা দেখেই এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

একটি সূত্র বলছে, বিএনপিসহ অন্যদের সভা-সমাবেশে বাধানিষেধ অব্যাহত রাখার কৌশল হিসেবেই সরকারি দল আওয়ামী লীগ ঢাকার খোলা জায়গায় সভা-সমাবেশ না করার ঘোষণা দিয়েছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি

গত ১৪ জানুয়ারি হঠাৎ করে দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক আমলা ও বিশেষজ্ঞদের একটা দলকে ইশতেহার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়। একাধিক সাংসদ জানিয়েছেন, দলীয় ফোরাম এবং ব্যক্তিগত সাক্ষাতে সাংসদদের নিজ নিজ এলাকায় থাকা বিরোধ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের জন্য তার দল কাজ শুরু করে দিয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত মেটানো এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি দুটিই একসঙ্গে চলছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নিশ্চিতভাবেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। বারবার তারা ভুল করবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগও চায় না বিএনপি পুনরায় ভুল করুক। কারণ, বিএনপি ভুলের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দিলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট হবে আবার।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, জেলা ও বিভাগীয় শহরের কর্মী সমাবেশগুলোতে গুরুত্ব বিবেচনা করে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে সমাবেশ হবে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর সমাবেশে শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে করেই হোক আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনটা জিততে হবে। কারণ, গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগকে নানা ঝড় সামলাতে হয়েছে। পরের মেয়াদে নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন করা যাবে।

সূত্র: প্রথম আলো

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়