কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: এবার
ভিসা করিয়েছি আগরতলা বর্ডার দিয়ে। আমার বাসা থেকে চার ঘণ্টায় আখাউড়া দিয়ে
আগরতলা যাওয়া যায়। একেবারে ফাঁকা ইমিগ্রেশন। কোন চাপ নেই বরং ইমিগ্রেশন আর
কাস্টমসের লোকজন বসে থাকে, খুঁজে নিয়ে আসতে হয় কাজ করানোর জন্য যেখানে
বেনাপোল মানেই মানুষ আর মানুষ। ঢাকা থেকে আগরতলাও তিন ঘণ্টার বেশী লাগার
কথা না।
বর্ডার পার হলেই আগরতলা শহর, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী। ছোট, সুন্দর, উন্নত শহর। শহর থেকে ১৪ কিমি দূরে বাংলাদেশের সীমান্ত ছুঁয়ে রয়েছে আগরতলা বিমানবন্দর। এখান থেকে সমস্ত ভারতের সাথে বিমান যোগাযোগ রয়েছে। তবে যেখানেই যান না কেন হয় কলকাতা বা গৌহাটি হয়ে যেতে হবেই। মজার বিষয় হল আগরতলা থেকে কলকাতার বিমান পাবেন ১৮০০ রুপির মধ্যে আর গৌহাটির ১৩০০ রুপির মধ্যেই এবং যেখানেই যাবেন বাংলাদেশের উপর দিয়েই উড়ে যেতে হবে।
আমার গন্তব্য ছিল লেহ, জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ রাজ্যের রাজধানী লেহ। কাশ্মীরের দুইটা অংশ, একটা হল শ্রীনগর অংশ যা সবুজ কাশ্মীর, আর এই লাদাখ কাশ্মীর হল সাদা কাশ্মীর। দিল্লী থেকে আরও ৬০০ কিমি উত্তরে, চীন আর পাকিস্তানের সীমান্ত ছুঁয়ে একেবারে। কলকাতা অনেকবার যাওয়া হয়েছে বিধায় আমার দিল্লী হয়ে লেহ যাওয়ার ফ্লাইট নেই গৌহাটি হয়ে। আগরতলা থেকে প্রথমে যাই গৌহাটি, সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। সেখান থেকে আমার পরের ফ্লাইট ৪ ঘন্টা পর দিল্লীতে। মাঝে বের হয়ে দুই ঘণ্টায় গৌহাটি শহরটা একটু ঘুরে আসি এবং পরের ফ্লাইটে দিল্লী যাই। দিল্লী রাতে থেকে পরের দিন সকালের ফ্লাইটে ১ ঘন্টায় লেহ গিয়ে নামি। এই দিল্লি-লেহ ফ্লাইট এক বিশাল অভিজ্ঞতা, চণ্ডীগড় পার হবার পর বিমান সিমলা, মানালি, এবং হিমালয় পর্বত মালার উপর দিয়ে উড়ে যায়। নিচে তাকালে শুধু ন্যাড়া পর্বত আর গ্লেসিয়ার চোখে ভাসে।
লেহ বিমানবন্দরটা সমতল থেকে ৩৫০০ মিটার উচ্চতায়। নামার পর এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়। এই উচ্চতার বাতাসে অক্সিজেন অনেক কম থাকে ফলে অনেক ধরণের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর জন্য বলা হয়ে থাকে প্রথমদিন পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিয়ে শরীরকে এই উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেবার জন্য। লেহ বিমানবন্দর চারদিকে পাহাড় ঘেরা, নামার সময় এক অন্যরকম অনুভুতি হয়। পাশেই রয়েছে সেই বিখ্যাত সিন্ধু নদ। এই নদের উপর দিয়েই উড়ে ছোট বিমানবন্দরে নামতে হয়। চারদিকের পাহাড়গুলো পাথরের নয় কাদার।
শহরটা খুব সুন্দর। মানুষজন বেশীরভাগ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, কিছু মুসলমান আছে অবশ্য। সবাই শিক্ষিত এবং খুবই সৎ। শহরে আপেল বিক্রি হয় আলু, কপির সাথে। ডলার ভাংগানো যায়, তবে রেট কলকাতা বা দিল্লীর চেয়ে কম।
লাদাখ ভ্রমণের পরামর্শ-
১। সবচেয়ে ভাল সময় মে থেকে অক্টোবর। অন্য সময় গেলে ঠান্ডা মোকাবেলা করতে জীবন শেষ হয়ে যাবে, কিছু দেখা যাবে না এবং অফ টাইমে ৯০% হোটেল বন্ধ থাকে, ফলে থাকা ও খাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে।
২। কলকাতা থেকে সহজেই ট্রেনে বা বিমানে দিল্লী যাওয়া যায় ৪৫০০ টকার মধ্যে, আর আগরতলা থেকেও বিমানে এমনই লাগবে। বরং আগরতলা থেকে বিমানে যাওয়াই ভাল। অনেক সময় ও শক্তি বাঁচে। দিল্লী থেকে ৬০০০/৭০০০ টাকার মধ্যে রিটার্ন ফ্লাইট পাওয়া যায়। অবশ্য টিকেট আগেই কেটে রাখতে হবে।
৩। আপনার হাতে যদি সময় থাকে ও একটু অ্যাডভাঞ্চারাস হন তাহলে আপনি হিমাচল প্রদেশের মানালি বা কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে সড়ক পথে যাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে অন্তত ৪৮০ কি. মি. জার্নি করার মত মানসিক ও শারীরিক শক্তি থাকতে হবে। তবে, এই গ্যারান্টি দিতে পারি যে এটাই হবে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভ্রমণ। এতে আপনাকে বেশ কয়েকটা ৫০০০ মিটার+ উঁচু মাস পার হয়ে যেতে হবে। তবে এই রুট খোলা থাকে বছরে মাত্র ছয় মাস। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত।
৪। লাদাখ বিশাল রাজ্য। সবটা দেখতে অন্তত ১০ দিন লাগবে। তবে লাদাখ গেলে অবশ্যই পাঙ্গন লেক, নুব্রা ভ্যালি, ও খারদুংলা পাস দেখতে হবে। লেহ শহর থেকে ট্যাক্সি পাওয়া যায়, ভাড়া সরকারী ভাবেই ফিক্স করা আছে। তবে অবশ্যই এই তিনটা জায়গা ভ্রমণের জন্য আগে থেকে বা অন্তত আগের দিন পাস করে নিতে হবে।
৫। মোবাইলের সিম পাওয়া যায়না কাশ্মীরে। তাই হোটেলের ওয়াইফাই, বা বাজারের সাইবার ক্যাফেই ভরসা।
৬। লাদাখ ভ্রমণের জন্য সুস্থ দেহ থাকা জরুরী। বিমানবন্দরে নেমে অবশ্যই ফরেনারদের জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করে, নিরাপত্তার জন্য যাবতীর নির্দেশনা জেনে, মেনে চলতে হবে। নয়তো একজনের জন্য সমস্ত দলের ট্যুর এলোমেলো হয়ে যাবে।
৭। তবে সময় ও সামর্থ্য থাকলে সবচেয়ে ভাল প্ল্যান হল বিমানে লাদাখ যেয়ে ,ট্যাক্সিতে শ্রীনগর হয়ে আবার শ্রীনগর থেকে বিমানে ফিরে আসা।
লিখেছেন: ওয়াহিদ ইমন,
এক্সিকিউটিভ অফিসার
যমুনা ব্যাংক লিমিটেড।
বর্ডার পার হলেই আগরতলা শহর, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী। ছোট, সুন্দর, উন্নত শহর। শহর থেকে ১৪ কিমি দূরে বাংলাদেশের সীমান্ত ছুঁয়ে রয়েছে আগরতলা বিমানবন্দর। এখান থেকে সমস্ত ভারতের সাথে বিমান যোগাযোগ রয়েছে। তবে যেখানেই যান না কেন হয় কলকাতা বা গৌহাটি হয়ে যেতে হবেই। মজার বিষয় হল আগরতলা থেকে কলকাতার বিমান পাবেন ১৮০০ রুপির মধ্যে আর গৌহাটির ১৩০০ রুপির মধ্যেই এবং যেখানেই যাবেন বাংলাদেশের উপর দিয়েই উড়ে যেতে হবে।
আমার গন্তব্য ছিল লেহ, জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ রাজ্যের রাজধানী লেহ। কাশ্মীরের দুইটা অংশ, একটা হল শ্রীনগর অংশ যা সবুজ কাশ্মীর, আর এই লাদাখ কাশ্মীর হল সাদা কাশ্মীর। দিল্লী থেকে আরও ৬০০ কিমি উত্তরে, চীন আর পাকিস্তানের সীমান্ত ছুঁয়ে একেবারে। কলকাতা অনেকবার যাওয়া হয়েছে বিধায় আমার দিল্লী হয়ে লেহ যাওয়ার ফ্লাইট নেই গৌহাটি হয়ে। আগরতলা থেকে প্রথমে যাই গৌহাটি, সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। সেখান থেকে আমার পরের ফ্লাইট ৪ ঘন্টা পর দিল্লীতে। মাঝে বের হয়ে দুই ঘণ্টায় গৌহাটি শহরটা একটু ঘুরে আসি এবং পরের ফ্লাইটে দিল্লী যাই। দিল্লী রাতে থেকে পরের দিন সকালের ফ্লাইটে ১ ঘন্টায় লেহ গিয়ে নামি। এই দিল্লি-লেহ ফ্লাইট এক বিশাল অভিজ্ঞতা, চণ্ডীগড় পার হবার পর বিমান সিমলা, মানালি, এবং হিমালয় পর্বত মালার উপর দিয়ে উড়ে যায়। নিচে তাকালে শুধু ন্যাড়া পর্বত আর গ্লেসিয়ার চোখে ভাসে।
লেহ বিমানবন্দরটা সমতল থেকে ৩৫০০ মিটার উচ্চতায়। নামার পর এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়। এই উচ্চতার বাতাসে অক্সিজেন অনেক কম থাকে ফলে অনেক ধরণের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর জন্য বলা হয়ে থাকে প্রথমদিন পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিয়ে শরীরকে এই উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেবার জন্য। লেহ বিমানবন্দর চারদিকে পাহাড় ঘেরা, নামার সময় এক অন্যরকম অনুভুতি হয়। পাশেই রয়েছে সেই বিখ্যাত সিন্ধু নদ। এই নদের উপর দিয়েই উড়ে ছোট বিমানবন্দরে নামতে হয়। চারদিকের পাহাড়গুলো পাথরের নয় কাদার।
শহরটা খুব সুন্দর। মানুষজন বেশীরভাগ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, কিছু মুসলমান আছে অবশ্য। সবাই শিক্ষিত এবং খুবই সৎ। শহরে আপেল বিক্রি হয় আলু, কপির সাথে। ডলার ভাংগানো যায়, তবে রেট কলকাতা বা দিল্লীর চেয়ে কম।
লাদাখ ভ্রমণের পরামর্শ-
১। সবচেয়ে ভাল সময় মে থেকে অক্টোবর। অন্য সময় গেলে ঠান্ডা মোকাবেলা করতে জীবন শেষ হয়ে যাবে, কিছু দেখা যাবে না এবং অফ টাইমে ৯০% হোটেল বন্ধ থাকে, ফলে থাকা ও খাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে।
২। কলকাতা থেকে সহজেই ট্রেনে বা বিমানে দিল্লী যাওয়া যায় ৪৫০০ টকার মধ্যে, আর আগরতলা থেকেও বিমানে এমনই লাগবে। বরং আগরতলা থেকে বিমানে যাওয়াই ভাল। অনেক সময় ও শক্তি বাঁচে। দিল্লী থেকে ৬০০০/৭০০০ টাকার মধ্যে রিটার্ন ফ্লাইট পাওয়া যায়। অবশ্য টিকেট আগেই কেটে রাখতে হবে।
৩। আপনার হাতে যদি সময় থাকে ও একটু অ্যাডভাঞ্চারাস হন তাহলে আপনি হিমাচল প্রদেশের মানালি বা কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে সড়ক পথে যাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে অন্তত ৪৮০ কি. মি. জার্নি করার মত মানসিক ও শারীরিক শক্তি থাকতে হবে। তবে, এই গ্যারান্টি দিতে পারি যে এটাই হবে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভ্রমণ। এতে আপনাকে বেশ কয়েকটা ৫০০০ মিটার+ উঁচু মাস পার হয়ে যেতে হবে। তবে এই রুট খোলা থাকে বছরে মাত্র ছয় মাস। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত।
৪। লাদাখ বিশাল রাজ্য। সবটা দেখতে অন্তত ১০ দিন লাগবে। তবে লাদাখ গেলে অবশ্যই পাঙ্গন লেক, নুব্রা ভ্যালি, ও খারদুংলা পাস দেখতে হবে। লেহ শহর থেকে ট্যাক্সি পাওয়া যায়, ভাড়া সরকারী ভাবেই ফিক্স করা আছে। তবে অবশ্যই এই তিনটা জায়গা ভ্রমণের জন্য আগে থেকে বা অন্তত আগের দিন পাস করে নিতে হবে।
৫। মোবাইলের সিম পাওয়া যায়না কাশ্মীরে। তাই হোটেলের ওয়াইফাই, বা বাজারের সাইবার ক্যাফেই ভরসা।
৬। লাদাখ ভ্রমণের জন্য সুস্থ দেহ থাকা জরুরী। বিমানবন্দরে নেমে অবশ্যই ফরেনারদের জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করে, নিরাপত্তার জন্য যাবতীর নির্দেশনা জেনে, মেনে চলতে হবে। নয়তো একজনের জন্য সমস্ত দলের ট্যুর এলোমেলো হয়ে যাবে।
৭। তবে সময় ও সামর্থ্য থাকলে সবচেয়ে ভাল প্ল্যান হল বিমানে লাদাখ যেয়ে ,ট্যাক্সিতে শ্রীনগর হয়ে আবার শ্রীনগর থেকে বিমানে ফিরে আসা।
লিখেছেন: ওয়াহিদ ইমন,
এক্সিকিউটিভ অফিসার
যমুনা ব্যাংক লিমিটেড।
খবর বিভাগঃ
দর্শনীয় স্থান
ফিচার
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়