Sunday, January 8

কানাইঘাটে হিমাগার না থাকায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত সবজি চাষীরা


আলিম উদ্দিন আলিম: কানাইঘাটে এবার শীতকালীন শাক সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকার কারণে গত বছরের তুলনায় এবার শীতকালীন শাক সবজির চাষাবাদ আরো দিগুন হয়েছে বলে উপজেলার কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। উপজেলার সবজি চাষিরা জানান, হাট-বাজার গুলো সবজিতে ভরপুর ও দাম কম থাকলেও ক্রেতা নাই তাই সবজি ব্যবসায়ীদের বেচা-কেনা অনেকটা কমে গেছে। অপরদিকে হিমাগার না থাকায় প্রতি বছর সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন শাক-সবজি স্বল্প মুল্যে বিক্রয় হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ। কানাইঘাট উপজেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী সবজি বাজার গুলোতে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, বর্তমানে স্থানীয় হাট বাজার গুলো তরতাজা শাক-সবজিতে ভরপুর। বাজারে মূলা, টমোটো, গাজর, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, সিম, করলা, মিষ্টি লাউ, দেশীয় লাউ, ভরবটি, ডাঙ্গাশাক, ডেড়শ, আলুসহ পিয়াজের দামও অনেকটাই কম, কিন্তু নেই ক্রেতা। তাই প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, বেগুন ২০টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা, বাধাকপি ২০ টাকা, সিম ২৫ টাকা, করলা ৩০ টাকা, মিষ্টি লাউ প্রতিটি ১৫ টাকা, দেশী লাউ ২৫ টাকা, ভরবটি ২৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, দেশী পিয়াজ ২৫ টাকা, কাচা মরিচ ৪০ টাকা, শসা ২৫ টাকা, শালগম ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কানাইঘাট উপজেলার ১নং লক্ষিপ্রসাদ পুর্ব ইউনিয়নের ছোটফৌদ গ্রামের সবজি চাষী আবুল হারিছ জানান, এবার তিনি ২ একর জমিতে ফরাস, লতা বেগুণ ও মিষ্টি লাউ চাষ করেছিলেন। এতে উৎপাদন ভাল হয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় নষ্ট হওয়ার ভয়ে স্বল্প দামে সবজি বিক্রয় করতে গিয়ে তিনি অনেক ক্ষতি গ্রস্থ। ২নং লক্ষিপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের কৃষক জমির আলী জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সবজি চাষ বেশি হলেও বাজারে দাম অনেক কম। এতে চাষাবাদের খরচ পোষানো খুবই কঠিন। তাই আগামী রবি মৌসুমে তিনি এ চাষাবাদ থেকে বিরত থাকবেন। কানাইঘাট বাজারের সবজি ব্যবসায়ী কবির আহমদ জানান, বাজারে সবজির দাম কম। আর ক্রেতাও অনেক কম। এতে করে বেচাকেনা কমে গেছে। সবজির ব্যবসা এভাবে চলতে থাকলে সংসার চালানো কষ্টকর হবে। এ কারনে অনেক সবজি ব্যবসায়ী এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে বিকল্প কোন ব্যবসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাট-বাজারে প্রচুর পরিমানে শাক সবজি আসছে। আর যে পরিমান সবজি বাজারে আসছে। সে পরিমান ক্রেতা বাজার থেকে ক্রয় করছেন না। কানাইঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুন্সী তোফায়েল হোসেন জানান, কানাইঘাটে প্রতি বৎসর রবি মৌসুমে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদিত হয়। যা সিলেটের অন্যান্য উপজেলার সবজি উৎপাদনের চেয়ে অনেকগুন বেশি। তিনি বলেন কানাইঘাটের কৃষকদের উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে কৃষকরা সারা বছর সবজি বিক্রয় করতে পারত। এতে যেমন কৃষকরা লাভবান হতো, তেমনি ক্রেতারা সারা বছর দেশিও শাক-সবজি কিনে নিতে পারত। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় নষ্ট হওয়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি সস্তা দামে সবজিগুলো বিক্রয় করে ফেলেন স্থানীয় কৃষকরা। এতে কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত এবং ক্রেতারাও ভুক্তভোগী। তিনি বলেন আমরা সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে একটি হিমাগার নির্মাণ করার জন্য আবেদন করেছি। আশাকরি সরকার মহোদয় আমাদের কৃষকদের স্বার্থে কানাইঘাটে একটি হিমাগার স্থাপনের দাবী বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবেন। কানাইঘাট কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০১৪/১৫ সালে’র রবি মৌসুমে শীতকালীন শাক-সবজি ২ হাজার ৪ শত ৭ হেক্টর, অর্থ্যাৎ (৫ হাজার ৯ শত ৪৫ একর) জমিতে চাষ করা হয়েছিল। এরপর কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার বর্তমান ২০১৫/১৬ সালে’র রবি মৌসুমে শীতকালীন সাক- সবজি ৪ হাজার ৯ শত ২৫ হেক্টর, অর্থ্যাৎ (১২ হাজার ৩ শত ৪২) একর জমিতে শিম, ফুল কপি, বাধা কপি, মুলা, ফরাস, পানি লাউ, মিষ্টি লাউ, আলু, কিরা, টমেটু ও লাল শাক ইত্যাদী চাষাবাদ করা হয়েছিল। এবার ২০১৬/১৭ সালে শীতকালীন শাক সবজির চাষাবাদ ৫১০৫ হেক্টর থাকার কথা থাকলেও কাংখিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষাবাদ হয়েছে ৫৩৩৫ হেক্টর জমিতে। এতে সবজি চাষে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে কানাইঘাটে বাম্পার ফলন হয়েছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়