ফাইল ছবি |
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দাবিতে সারাদেশের আলেমরা একাট্টা হলেও তা নিয়ে বিভক্তিতে রয়েছেন সিলেট অঞ্চলের শীর্ষ আলেমদের একাংশ । এমনকি সনদের সরকারি স্বীকৃতিকে অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন তারা। তাদের দাবি; স্বীকৃতি পেলে মাদরাসাগুলো নিজস্ব স্বকীয়তা হারাবে। আলেমদের মধ্যে বিভক্তি ঘটাবে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রীত সিলেবাস আরোপের ফলে সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা ছিটকে পড়বেন বলেও আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
সম্প্রতি দেশের সবকটি বোর্ডের শীর্ষ আলেমরা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয় অবস্থান বজায় রেখে সদনের মান গ্রহণের লক্ষে একমত হন। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
‘দাওরায়ে হাদিসের সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’ নামের নতুন ২২ সদস্যের ওই কমিটিতে সব বোর্ডের প্রতিনিধিদেরও রাখা হয়েছে। এছাড়া এসব বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের পৃথক আরেকটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ফলে আলোর মুখ দেখতে শুরু করে সনদের স্বীকৃতি প্রদান কার্যক্রম।
কিন্তু সারাদেশের দেশের আলেমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলেও সনদের স্বীকৃতির বিরোধীতা করছেন সিলেটের কওমি আলেমদের একাংশ। ইতিমধ্যে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা সংরক্ষণ কমিটি’ নামে পাল্টা কমিটিও গঠন করেছেন তারা। বৃহস্পতিবার ওই কমিটির এক সভায় আগামী ১ মাসের মধ্যে দেশের র্শীষ আলেম উলামাদের সাথে মতবিনিময় করে সরকারি স্বীকৃতি না নেওয়ার জন্য প্রস্তাব গৃহিত হয়। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন নগরীর সুবহানিঘাট মাদরাসার প্রধান মাওলানা শফীকুল হক আমকুনী।
সনদের স্বীকৃতির বিরোধীতার পেছনে তার যুক্তি তুলে ধরে ওই নেতা বলেন, কওমি মাদরাসা সমূহের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্বীনে ইসলামের প্রচারের মাধ্যমে পরকালের প্রত্যাশা। কিন্তু সরকারি স্বীকৃতির মধ্যে দুনিয়াই প্রাধান্য, তাই হক্কানী উলামায়ে কেরামের উচিত হলো কওমি শিক্ষা ধারাকে প্রচলিত দুনিয়াবী সুযোগ সুবিধার চেয়ে পরকালের বিষয়টি প্রধান্য দিয়ে পরিচালনা করা।
একটি বিশেষ মহল কওমী শিক্ষা ব্যবস্থা ঊঠিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই নানা অপতৎপরতা চলছে। তাছাড়া সনদের স্বীকৃতির নামে মূলত উলামায়ে কেরামের মধ্যে বিভক্তির ছাপ স্পষ্ট উঠছে। তাই আমরা এর বিরোধীতা করছি। আকাবিরে দেওবন্দের পথ অনুসরণেই কওমি ধারাকে পরিচালনার তাগিদও দিচ্ছেন তারা।- এমনটা উঠে এসেছে তার বক্তব্যে।
সিলেট অঞ্চলের কওমি মাদরাসার প্রতিনিধিত্বকারী বোর্ড আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশের সহসম্পাদক ও সুনামগঞ্জ মাদানিয়া মাদরাসার প্রধান মাওলানা শায়খ আব্দুল বছির বলেন, শুরু থেকেই আমরা সরকারের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে। আমাদের কোন স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই। স্বীকৃতির মাধ্যমে কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আকাবিরে দেওবন্দের ধারার এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে সকল হক্কানী আলেমদের নিয়ে তারা এর বিরোধীতা করছেন।
গত বছরের ১১ আগস্ট বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সনদ দিতে হলে ন্যূনতম একটি কারিক্যুলাম দরকার। আমরা কওমি মাদ্রাসা কমিশন গঠন করে দিয়েছি। কিন্তু কওমি মাদ্রাসার পাঁচটি বোর্ড একমত হতে পারেনি। সবাই একমত হন অথবা যারা আগ্রহী, তারা একমত হন। আমরা বাস্তবায়ন শুরু করে দেবো’
প্রধানমন্ত্রীর এ আশ্বাসের পর থেকেই সনদের স্বীকৃতি বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে আসে কওমি অঙ্গনে। এর প্রেক্ষিতে শীর্ষ আলেমদের সমন্বয়ে কমিটিও গঠন করা হয়। ফলে স্বীকৃতির পেছনের বাধা অনেকটাই দূর হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় এবং কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতির লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নে ২০১২ সালের এপ্রিলে ‘বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করা হলেও মাদ্রাসা পরিচালনাকারীদের একটি অংশের বিরোধিতার কারণে সে প্রক্রিয়া থমকে যায়।
এর আগে ২০০৬ সালে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে ওলামা-মাশায়েখদের এক সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। তবে ওই সময় তৎকালীন সরকার তার দেয়া ঘোষণা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেনি।
তথ্য অনুযায়ী সারা দেশের আনাচে-কানাচে গজিয়ে ওঠা প্রায় ১৭ হাজার কওমি মাদরাসায় পড়ছে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী। এসব মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যত সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে।
সূত্র:সিলেটভিউ২৪ডটকম
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়