কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না- এমন বক্তব্য গত
কয়েক বছর ধরে বারবার দিয়ে আসছিলেন বিএনপির নেতারা। বৃহস্পতিবার
নারায়ণগঞ্জের ভোটকে দিনভর সুষ্ঠু বলেছিলেন দলের নেতারা। কিন্তু গণনার পর
দেখা গেলো তাদের প্রার্থী হেরেছেন ৮০ হাজার ভোটে।
কী হয়েছে নারায়ণগঞ্জে, কোথায় তাদের ভুল, কোথায় সরকারের চালাকি-ভেবে কূল
কিনারা পাচ্ছেন না বিএনপির নেতারা। দলের নেতারা আসলে বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন।
খোদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলার আলমগীর জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জে কী
হয়েছে সেটা তারা বুঝতে পারছেন না। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির
রিজভী জানিয়েছেন বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি।
বিএনপির কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। তারা অনেকটা বিস্মিত ও হতভাগ।
গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক ও ভোটারদের দৃষ্টিতে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন
হওয়ায় এ নিয়ে সরাসরি অভিযোগও করতে পারছে না দলটি। কারণ ভোটগ্রহণের শেষ
পর্যন্ত দলের কেন্দ্র থেকে নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরণের অভিযোগও করা হয়নি।
বিএনপির মূল চিন্তার বিষয় হয়ে যেটা দাঁড়িয়েছে তা হলো- শেষ পর্যন্ত আগামী
নির্বাচন একইভাবে অনুষ্ঠিত হলে একই ধরণের ফলাফল হবে। সে কারণে দলটি কেন,
কিভাবে এমন ফলাফল হলো তার কারণ খুঁজে বের করতে কাজ শুরু করবে বলে জানা
গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জের প্রচারণার টিমের সমন্বয়ক
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হলেও এ নিয়ে দলের পক্ষ
থেকে এখনো অনেক কাজ বাকি। কারণ এমন ফলাফল কেন, কিভাবে হলো তা অবশ্যই খুঁজে
বের করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি। কোনো রেজাল্ট হলে আপনারা জানতে
পারবেন।’
কাজে আসেনি প্রচার-প্রচারণা
তফসিল ঘোষণার পরপরই নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগ
করতে কেন্দ্রীয়ভাবে টিম করে বিএনপি। এছাড়াও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের
সমন্বয়ে গঠন করা হয় তিনটি টিম। সিদ্ধান্ত হয়- প্রচারণার সুযোগ থাকা পর্যন্ত
এসব টিমের নেতারা প্রতিনিয়ত সাখাওয়াতের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালাবেন। সে
অনুযায়ী বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেতারা নারায়ণগঞ্জের আনাচে কানাচে চষে
বেড়িয়েছেন।
তবে নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিলো-বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া
সাখাওয়াতের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে যাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানা কারণ
দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ যাননি খালেদা জিয়া।
প্রচারণা চালানোর সময় বিএনপি নেতাদের দাবি ছিল- সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ
নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে সাখাওয়াত জয়ী হবেন। কেন্দ্র থেকে দাবি করা
হয়েছিলো- লক্ষাধিক ভোটে বিজয়ী হবেন ধানের শীষের প্রার্থী। তবে নির্বাচনের
ফলাফল হয়েছে পুরো উল্টোটা।
এদিকে নেতাকর্মীদের অনেকে বিএনপির প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগের কৌশল
নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অনেকে মনে করছেন, বাহ্যিকভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা
থাকলেও তা কাজে আসছে কম। কারণ কোনো কিছুই গোছানো ছিলো না।
কারো কারো দাবি, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই দলীয়
মেয়র প্রার্থীর চেয়ে নিজেদের প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন বেশি। ভোটারদের কাছে
যাওয়ার চেয়ে রাস্তায় ঘুরে টিভির পর্দায় নিজেদের উপস্থিতির জানান দিয়েছেন।
যে কারণে ধানের সমর্থন থাকলেও ভোটে তার প্রতিফল ঘটেনি।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের
প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট।
তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ধানের শীষ প্রতীকে
পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট। প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে আইভীর কাছে পরাজিত
হন সাখাওয়াত।
কারণ খোঁজার নির্দেশ খালেদার
নেতারা জানান, নারায়ণগঞ্জে বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে
সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া।
দলীয় সূত্র বলছে, খুব শিগগিরই দলের একটি প্রতিনিধি দল নারায়ণগঞ্জে যাবে।
সেখানে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে দলের চেয়ারপারসনের কাছে একটি
প্রতিবেদন জমা দেবেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সাংবাদিকদের এমন কথা বলেছেন।
শনিবার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে হাসপাতালে দেখতে
গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলছি না, বাহ্যিকভাবে
ভোট গ্রহণ পর্যন্ত সুষ্ঠু ছিল, তারপর কী হয়েছে সেটা আমরা জানি না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের ভেতরে কী হয়েছে, আমরা বিষয়টা আরও পরীক্ষা করছি। তদন্ত সাপেক্ষে তা সবার সামনে তুলে ধরা হবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, শান্তিপূর্ণ
ভোটের আড়ালে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। এই প্রাকটিস চলতে থাকলে তা শুধু বিএনপি
নয়, গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি খুঁজে বের করতে না
পারলে সামনের নির্বাচনগুলোতে পরিণতি আরও বিপর্যয়ের দিকে যাবে। যা দেশের
জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
সূত্র:ঢাকাটাইমস
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়