।।রফিকুল ইসলাম রনি।।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
গত ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৪ দলের জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ। সেদিন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। মিনারের একপাশে দাড়িয়ে ছিলেন শ্রদ্ধেয় শাকিল ভাই। আমি এগিয়ে যেতেই হাত চেপে ধরে বললেন-বড় সাংবাদিক এত উল্টাপাল্টা লিখ কেন? উত্তরে বললাম-ভাই সত্য কথাই তো লিখি। জবাবে বললেন-বস্তুনিষ্ঠতা থাকলে লিখবা। অহেতুক তোমার দ্বারা কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
এসময় কাকে যেন ভাই টাকা দিচ্ছেন। ভাইয়ের হাত থেকে একটি ৫ টাকার নোট নীচে পড়ে গেল। আমি তা কুড়িয়ে নিয়ে বললাম-ভাই এটা আমার। তখন শাকিল ভাই বললেন-তুই ৫টাকা নিবি? দুটি ১০০০ টাকার নোট বের করে দিয়ে বললেন-ধর-এটা রাখো। ওটা আমাকে দাও। আমি এক হাজার টাকার নোট নেইনি। বললেন-তুমি মাত্র ৫টাকার সাংঘাতিক হইছ? বললাম জ্বি ভাই--সাংঘাতিক না -আপনার ছোট ভাই সাংবাদিক। এরপর আমি ভাইয়ের সাথে একটা সেলফি তুললাম।
১৪ জুলাই তারিখে শাকিল ভাই নিউজ২৪-এ আসলেন টকশোতে। বসুন্ধরা এলাকায় প্রবেশ করেই আমাকে ফোন-এই ৫টাকার সাংবাদিক, আমি নিউজ২৪ যাবো। কোন পাশ দিয়ে যেতে হবে বল।
আমি বললাম-আপনি অনেকবার এসেছেন। তিনি ছাড়লেন না-পরে আমি ডাইভারকে বুঝিয়ে দিলাম অাসার রাস্তা।ভা্ই এও বলল-তুই রাস্তায় দাড়া। আমাকে নিয়ে যাবি। তা না হলে খুন করে ফেলব (এটা ছিল তার ভালবাসার কথা)।
আমি গিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে গাড়ী থেকে রিসিভ করে টেলিভিশনে দিয়ে আসি। আমাকে তখন বলে-তোর বিল কত? জবাবে বললাম-৫টাকা। পকেট থেকে অনেকগুলো ৫টাকার নোট বের করে দিলেন। আমি মাত্র একটা নিলাম। এরপর গণভবন-প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শাকিল ভাইয়ের সাথে কমপক্ষে ১৫/১৮ বার দেখা হয়েছিল। প্রত্যেক বারই ভাইয়ের মুখের কথা ছিল-কি ৫টাকা লাগবে? বলতাম না- ভাই আজ লাগবে না। মিষ্টি করে একটা হাসি দিতেন।
সর্বশেষ গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের নিউজ সংগ্রহ করতে গণভবনে গিয়েছিলাম। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাইয়ের সাথে কথা বলতে যাচ্ছি-এমন সময় শাকিল ভাইয়ের সাথে মুখোমুখি। সালাম দিলাম-তার নিজের পকেটের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন- দিব? আমিও স্বভাব সুলভ হাসি দিলাম।
আজ (মঙ্গলবার) বেলা পৌনে দুইটা। একটা গুরুত্বপুর্ণ সোর্স ফোন দিলেন বললেন শাকিল আর নেই। বললাম-আপনি কি ঠিক বলছেন? নম্বর চেক করলাম। না ঠিক আছে। আবার ফোন দিলাম। বললাম আপনি কি বলেন? এটা কি করে সম্ভব? বলল-হ্যাঁ খবর নাও। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। টেলিভিশন ছেড়ে চ্যানেল শুধু পাল্টাই কিন্তু কোথায়ও নেই।
এরপর দুইটা সময় আবার আরেকজনকে ফোন দিলাম-সেও একই তথ্য নিশ্চিত করলেন। আমি অফিসে নিউজ দেব-কিনা তা নিয়ে শংকায় পড়লাম। পরে কাপা কাপা কণ্ঠে পত্রিকার অনলাইনে তথ্যটি জানিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। গাড়ীতে উঠে বার বার মনে পড়ল- কি লাগবে ৫টাকা? তুমি ৫টাকার সাংঘাতিক? শাকিল ভাই--আমার আজ লাগবে ৫টাকা। আপনি দিন-দিন--আজকে আমার ৫টাকার দরকার। এখন আর কেউ বলবে না-লাগবে ৫টাকা? যেখানেই থাকেন-ভাল থাকুন শাকিল ভাই। আপনার মতো বিশ্বস্ত নিলোর্ভ লোক আপার পাশে আরো কিছুদিন দরকার ছিল। কারণ আপার এখনো অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়ন বাকী।
ভাল থাকুন শাকিল ভাই-- আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুন।
পরিশেষে আপনার লেখাই তুলে ধরলোম--------
মৃত্যুর পর তোরা আমাকে লাশ বলিশ না-। মৃত্যদের কান্নার কোন শব্দ থাকে না থাকতে নেই, নেই কোন ভাষা, কবরের কোন ভাষা নেই। হতভাগ্য সে মরে যায় অকস্মাত বুকে নিয়ে স্মৃতি, তোমাদের উ্ত্তপ্ত সৃষ্টিমুখর রাতে….
খবর বিভাগঃ
মতামত
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়