Saturday, December 3

ফ্ল্যাট কেনার আগে যা জানা প্রয়োজন

ফ্ল্যাট কেনার আগে যা জানা প্রয়োজন
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: ক্রেতারা তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন দেখেন। তাদের এই স্বপ্নকে কাজে লাগায় কিছু প্রতারক ব্যবসায়ী। অনেক সময় তাদের চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েন। অনেকে সারা জীবনের সঞ্চয়ই কেবল হারান না, ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে সর্বশান্ত হয়ে যান। সে কারণে ক্রেতাদেরই বেশি সাবধান হওয়া প্রয়োজন। চুক্তি করার সময় সবদিক খেয়াল রেখে চুক্তি করতে হবে।

তাহলে জেনে নিন ফ্ল্যাট কেনার অাগে কী কী করণীয়.......

আর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কেউ যদি এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে আপনি রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর সহায়তা নিতে পারেন।

ক্রেতা হিসেবে এই আইনে আপনি যেসব সুবিধা পাবেন
- এই আইনে বলা হয়েছে, চুক্তিতে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করতে হবে।

- চুক্তিতে অবশ্যই যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হবে তার বিবরণ থাকতে হবে। প্রণীত অনুমোদিত নকশা আবাসন নির্মাতা দিতে বাধ্য থাকবেন।

- চুক্তির ভিত্তিতে পছন্দসই ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেবেন এবং আপনার বিনা অনুমতিতে বরাদ্দ করা প্লট বা ফ্ল্যাট পরিবর্তন করতে পারবেন না।

- চুক্তিতে উল্লিখিত শর্তের বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দিতে আপনি বাধ্য থাকবেন না। যদি কোনো উন্নতমানের সরঞ্জাম সংযোজনের দরকার হয়, তবে দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিতে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া যেতে পারে।

- সমুদয় মূল্য পরিশোধের তিন মাসের মধ্যে আবাসন নির্মাতা দখল হস্তান্তর, দলিল সম্পাদন ও নিবন্ধনের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে দেবেন। হস্তান্তরকালে আয়তন কমবেশি হলে তার মূল্য ক্রয়মূল্য অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

- আবাসনের মূল্য ব্যাংকের মাধ্যমে এককালীন বা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এককালীন বা কিস্তিতে মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হলে আবাসন নির্মাতা ৬০ দিন আগে নোটিশ দিয়ে বরাদ্দ বাতিল করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি জমা করা অর্থ পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে চেকের মাধ্যমে একসঙ্গে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন। আপনি বিলম্বিত সময়ের জন্য কিস্তির অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে সুদ প্রদান সহকারে কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন। এটি তিনবারের বেশি করতে পারবেন না।

- আবাসন নির্মাতা নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তরে ব্যর্থ হলে চুক্তিতে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণসহ সব অর্থ আপনাকে ছয় মাসের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। আর চুক্তিতে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ না থাকলে তা পরিশোধিত অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ হারে নির্ধারিত হবে।

- কোনো কারণে বরাদ্দ বাতিল করতে চাইলে আবাসন নির্মাতাকে আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিশোধিত অর্থের ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে বাকি অর্থ তিন মাসের মধ্যে এককালীন চেক বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফেরত দিতে হবে।

ডাউন পেমেন্ট দেওয়ার আগে
জমির দলিল ভালো করে যাচাই করে নিন।
ডেভেলপার কোম্পানির সঠিক অনুমোদন আছে কি না দেখুন।
রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত প্ল্যানের কপি দেখুন।
ডেভেলপার কোম্পানি রিহাবের সদস্য কি না যাচাই করে নিন।
ফ্ল্যাট বরাদ্দের সময় ও সব শর্ত জেনে নিন।

কিস্তি শেষে
কিস্তি শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন দলিল বুঝে নিন।
কোনো কারণে কিস্তির টাকা পরিশোধে বিলম্ব হলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলুন।

আইনের সহযোগিতা গ্রহণ
চুক্তি অনুযায়ী আপনার বুকিংকৃত ফ্ল্যাটটি না হলে বা চুক্তিতে যে নির্মাণ উপকরণ ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে তা না করলে, নকশা পরিবর্তন সহ বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তিপত্র ভঙ্গ করা হলে নিজেদের মধ্যে সমাধান না হলে বিষয়টি সালিস আইন ২০০১ মোতাবেক সালিসি ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হবে। ৩০ দিনের মধ্যে সব পক্ষ ট্রাইব্যুনাল গঠনে ব্যর্থ হলে যেকোনো পক্ষ বিবদমান বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন। এই আইনের অধীনে অপরাধগুলো প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য। বিচারের সময় ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করা হবে। এ আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করলে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়