Thursday, November 17

রাতে ঘুমাতে পারছেন না, কি করবেন?

রাতে ঘুমাতে পারছেন না, কি করবেন?

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: রাতে ভালো ঘুম হলে যেমন সারা দিন সতেজ এবং চাঙ্গা অনুভূতি নিয়ে পার করা যায়, তেমনি ঘুম ভালো না হলে সমস্ত দিনই মাটি। কিছুতেই কিছু ভালো লাগে না। ক্লান্তি অবসাদ যেন আর পিছু ছাড়তে চায় না। মেজাজ হয়ে থাকে তিরিক্ষি।

একজন মানুষের দৈনিক গড়ে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের অনেকেরই ঘুমের সমস্যা হয়। ঘুম না আসে, কিংবা কারো ঘুমাতে অসুবিধা হয়, অথবা খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায় এবং আর ঘুমাতে না পারে, আবার কারো কারো রাতে বার বার ঘুম ভেঙে যায়। এসব ঘটনা সপ্তাহে অন্তত তিনবার করে একমাস ধরে ঘটতে থাকলে তার দিনের বেলা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব বৃদ্ধি পাবে। কাজেকর্মে মনোযোগ হারাবে। পেশাগত দায়িত্ববোধ কমে যাবে। সামাজিক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটবে। মনে অশান্তি সৃষ্টি হবে। এ সব লক্ষণ দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনি অনিদ্রায় ভুগছেন।

অনিদ্রারও আবার রয়েছে বিভিন্ন কারণ। তার মধ্যে মানসিক চাপ, বিষন্নতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা অন্যতম। বিষন্নতায় অনিদ্রার চরিত্র হচ্ছে- খুব সকালে ঘুম ভেঙে যাওয়া। উদ্বেগ আক্রান্তদের ঘুম আসে কাজের মাঝে কিংবা ভ্রমণের সময়। আর নারকোলেপ্সির রোগীদের দিনের বেলা ঘুমের শেষ নেই, যদিও সে রাতে ভালো ঘুমিয়ে থাকে। উত্তেজক খাবার বা পানীয়, যেমন ক্যাফেইন বা অ্যালকোহলের অভ্যাস, ঘুমের বড়ির আসক্তি, ইত্যাদিও ঘুম কমিয়ে দেয়ার কারণ হতে পারে। ব্যথার ওষুধ, উচ্চরক্তচাপের ওষুধ, মানসিক অবসাদের ওষুধ, কেমোথেরাপি ইত্যাদিও ঘুম বিভ্রাট তৈরি করে থাকে।

আরও অনেক কারণ রয়েছে অনিদ্রার। যেমন- অভ্যাসের পরিবর্তন, শোয়ার জায়গা পরিবর্তন, চা-কফি পান, রাত জাগার অভ্যাস, শোয়ার ঘরে টেলিভিশন দেখার অভ্যাস ইত্যাদি কারণেও ঘুম বিভ্রাট তৈরি হয়ে থাকে।

আবার ভালো ঘুমের জন্য চাই ভালো খাবার। কিছু ভিটামিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, এনজাইম আছে যা ঘুমকে প্রভাবিত করে। মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্রন্থি এ পুরো পদ্ধতিটাকে নিয়ন্ত্রণ করে। খাবারে কিছু কিছু পদার্থের উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি ঘুমের গভীরতা বাড়াতে পারে বা কমাতে পারে। কিন্তু ঘুমের সময় এসব পদার্থ বাড়াতে সাহায্য করে না। মেলাটনিন সেরকমই একটি পদার্থ। বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য মেলাটনিন খুব প্রয়োজনীয়। মেলাটনিন দিনের বেলা কোনও কাজ করে না। তাই দুপুরে ঘুমের জন্য মেলাটনিনের প্রয়োজন হয় না। আলোতে মেলাটনিন কমে যায়। ভাত, কলা, কর্ন, রসুন, টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ মেলাটনিন থাকে। ট্রিপটোফ্যানও ঘুমের জন্য উপকারী। ট্রিপটোফ্যান মস্তিষ্কের অন্যান্য এনজাইমগুলো ব্যবহার করে ঘুম বাড়ানোর নির্দেশ দেয়। অনিদ্রা কাটাতে ট্রিপটোফ্যানের জুড়ি নেই। দুধ, ছানা, পনির, আম, সানফ্লাওয়ার তেল, তিলতেলে প্রচুর পরিমাণ ট্রিপটোফ্যান থাকে। আলু, কলা, পাউরুটি ইত্যাদিতে সারাটনিন থাকে তা ঘুম পাড়াতে সাহায্য করে। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ঘুমের জন্য উপকারী। সবুজ শাকসবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেশিয়াম, যা ঘুমের জন্য খুব উপকারী।

ঘুমের ব্যাঘাত তৈরি করে এমন সব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন- কফি, চকোলেট, প্রিজারভিটিস দেয়া খাবার, বেগুন, পালংশাক ইত্যাদি। আর ভালো ঘুমের জন্য সারাদিন প্রচুর পানি পান করুন। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খাবার, যেমন-ফলমূল, শাকসবজি ঘুমের জন্য উপকারী। রাতে মিষ্টি জাতীয় খাবার বা কফি পান থেকে বিরত থাকুন। ভিটামিন 'বি'যুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। মাছ, গোশত, ডিম, সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর ভিটামিন 'বি' পাওয়া যায়।

শোয়ার আগে প্রতিদিন মধু দিয়ে দুধ খেতে পারেন। দুধে থাকে ট্রিপটোক্যান নামক অ্যামিনো এসিড, যা সিডেটিভ হিসেবে কাজ করে। দুধে ক্যালসিয়ামও থাকে যা মস্তিষ্ককে ট্রিপটোফ্যান ব্যবহারে সাহায্য করে। আর মধুতে থাকে গ্লুকোজ, যা মস্তিস্কে অরেক্সিনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। অরেক্সিন এক ধরনের নিউরো ট্রান্সমিটার, যা অ্যালার্টনেসকে প্রভাবিত করে।

ভালো ঘুমের জন্য একটি রুটিন মেনে চলুন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। রাতের খাবার সন্ধ্যা রাতে সেরে নিন। রাতে খাবার সহজপাচ্য হওয়া দরকার। ঘুমানোর আগে ধূমপান করবেন না। ঘুমের বড়ি খাবেন না। সন্ধ্যার পর চা-কফি খাবেন না। ঘুম নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। ঘুমানোর আগে বাথরুম সেরে নিন। দিনে ঘুমাবেন না। ঘুমানোর আগে হালকা ব্যায়াম করুন। ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন। শোয়ার ঘরে টিভি রাখবেন না। ঘুম যদি না আসে বিছানায় শুয়ে থাকবেন না। বিছানা ছেড়ে উঠে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করুন। বই পড়ার অভ্যাস থাকলে একটি বই নিয়ে কিছুক্ষণ পড়ুন। তারপর আবার বিছানায় যান, দেখবেন ভালো ঘুম হবে। সবচেয়ে বড় কথা ঘুমের ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তা করুন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়