Sunday, November 13

৮মাস ধরে জৈন্তাপুর চারিকাটা ইউপির নির্মাণ শ্রমিক কিশোর মোহাম্মদ আলী নিখোঁজ


নিজস্ব প্রতিবেদক: কানাইঘাট বড়চতুল ইউপির পাশ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউপির বাউরভাগ দক্ষিণ তুবাং গ্রামের মৃত নুর মিয়ার পুত্র দরিদ্র ঘরের একামাত্র উপার্জনকারী নির্মাণ শ্রমিক মোহাম্মদ আলী (১৬) প্রায় ৮মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে। তাকে হত্যা না গুম করা হয়েছে এ নিয়ে এলাকায় সর্বত্র আলোচনা চলছে। পরিবারের অভিযোগ নিখোঁজ মোহাম্মদ আলীর দুলাভাই একই ইউপির ভিত্রিখেল দক্ষিণ গ্রামের মোঃ ইছরাক আলীর পুত্র আলমাছ উদ্দিন (৪০) ও একই গ্রামের ময়না মিয়ার পুত্র কবির আহমদ (২৭) তাহার সহযোগীরা মোহাম্মদ আলীকে অপহরণ করে হত্যা অথবা তাকে গুম করে রেখেছে। মোহাম্মদ আলী নিখোঁজের ঘটনায় তার মা জয়তেরা বেগম জৈন্তাপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়রী করেন, যার নং- ৬৮৬, তাং- ১৫/০৪/২০১৬ইং। উক্ত সাধারণ ডায়রী করার পর জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ মোহাম্মদ আলী নিখোঁজের ঘটনায় সন্দেহ ভাজন হিসাবে তার দুলাভাই আলমাছ উদ্দিন সহ কয়েকজনকে থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর মুচলেখা রেখে ছেড়ে দেয়। মোহাম্মদ আলী নিখোঁজ হওয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে যাবার পরও তাকে কোথাও ফিরে না পেয়ে অসহায় মা জয়তারা বেগম তার পুত্রকে অপহরণ করে হত্যা ও গুমের অভিযোগ এনে গত ১০/০৮/২০১৬ইং তারিখে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজেষ্ট্রেট ৬নং আমলী আদালতে বাদী হয়ে মেয়ের জামাই আলমাছ উদ্দিন সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন। যাহা জৈন্তাপুর থানার সি.আর মামলা নং- ৮৭/২০১৬। আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগে বাদী জয়তেরা বেগম উল্লেখ করেছেন মামলার ২নং আসামী তাহার মেয়ের জামাই ভিত্রিখেল গ্রামের আলমাছ উদ্দিন বিবাহের পর থেকে তার মেয়ে সাফিয়া বেগমকে সব সময় শারীরিক ভাবে নির্যাতন করত। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে সাফিয়া বেগম পিত্রালয়ে ফিরে আসার পর অনুমান ১০ মাস পূর্বে জীবন জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে চলে যায়। সাফিয়া বেগম ওমানে যাওয়ার পর প্রায়ই তার মেয়ের জামাই আলমাছ উদ্দিন বাড়িতে এসে জয়তারা বেগম ও তার পুত্র কিশোর মোহাম্মদ আলী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রাণ নাশের হুমকি দিত। সাফিয়া বেগমকে ওমান থেকে ফিরিয়ে না আনলে পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির হুমকি দিত আলমাছ উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। বিগত ০৮/০৪/২০১৬ইং তারিখ বিকেল ৫টার দিকে জয়তারা বেগমের পুত্র নির্মাণ শ্রমিক মোহাম্মদ আলী চারিকাটা ইউপির কেলোসিন বাজারে কেনাকাটার জন্য বাড়ী থেকে রওয়ানা দিলে একপর্যায়ে তাকে বাজারে রাত ১০টার দিকে পেয়ে মামলার আসামী বাউরভাগ দক্ষিণ গ্রামের তুবাং গ্রামের শফিক আহমদের পুত্র মছরুল (১৯) এবং একই গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র আলমাছ (১৯) মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে বাজারের ফ্লেক্সিলোড দোকানে গিয়ে নিখোঁজ মোহাম্মদ আলীর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে ফ্লেক্সিলোড দেয়। এরপর থেকে বাজার থেকে রহস্যজনক ভাবে মোহাম্মদ আলী নিখোঁজ হয়ে যায়। তার পরিবারের সদস্যরা কোথাও তাকে খুজে অদ্যবধি পর্যন্ত পান নি। দুই মাস পূর্বে চারিকাটা ইউপি গ্রাম আদালতে জয়তেরা বেগম বাদী হয়ে চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগ দিলে সেখানে উপস্থিত হয়ে মেয়ের জামাই আলমাছ উদ্দিন বলে তার স্ত্রীকে ওমান থেকে ফিরিয়ে আনলে সে মোহাম্মদ আলীকে বের করে দেবে। মোহাম্মদ আলীর মা জয়তেরা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তার ছেলে মোহাম্মদ আলী নিখোঁজের আগে তাকে ঢাকায় ভালো কাজ দেওয়ার জন্য বাউরভাগ দক্ষিণ তুবাং গ্রামের ময়না মিয়ার পুত্র কবির উদ্দিন (২৭) বিভিন্ন ভাবে লোভ দেখিয়ে আসছিল। ছেলেকে তিনি ঢাকায় পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তার ছেলেকে কেলোসিন বাজার থেকে মেয়ের জামাই আলমাছ উদ্দিন ও কবির উদ্দিনের যোগসাজশে অপহরণ করে হত্যা অথবা তাকে কোথায় গুম করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে বলেন, এ গুম ও অপহরণ অথবা হত্যার ঘটনার সাথে তার মেয়ের জামাই আলমাছ উদ্দিন, কবির উদ্দিন, মামলার অপরাপর আসামী মছরুল, আলমাছ আহমদ, বিলাল গংরা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তিনি আদালতে মামলা দিয়েছেন। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জৈন্তাপুর মডেল থানার এস.আই রুবেল আহমদ আসামীদের গ্রেফতার করছেন না। তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার পুত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে তিনি দাবী করেছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসন সক্রীয় হলে নিখোঁজ মোহাম্মদ আলী জীবিত না মৃত এবং এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত তাদের নাম বেরিয়ে আসবে। এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই রুমেল আদালতের মামলা পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে দাবী করে তিনি মোহাম্মদ আলী নিখোঁজের রহস্য উদ্ঘাটন করে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তার পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়