Friday, November 18

হবিগঞ্জ হাওরের মাছ যাচ্ছে বিদেশেও


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: হাওর-বাওরবেষ্টিত একটি জেলা হবিগঞ্জ। এখানকার মানুষের বর্ষাকালের প্রধান কাজ মাছ শিকার বা চাষ। মাছ চাষ করে এখানকার লোকজন দেশের উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছেন। কেউ লিজ নিয়ে, কেউবা নিজের পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এখানকার অনেক লোক পুকুরে মাছ চাষ না করেও বিভিন্ন হাওর থেকে মাছ আহরণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের উন্নয়ন করছেন। জেলার আজমীরিগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায় বেশিরভাগ মানুষ মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত। এই জেলায় রয়েছে করাঙ্গী, বরাক, ভেড়ামোহনা, সুটকী, রত্না, বিজনা, খোয়াই, কুশিয়ারা, ঝিংড়ী, সুতাংসহ বিভিন্ন নদী। আরও আছে অসংখ্য খাল-বিল, ডোবাসহ নানা প্রাকৃতিক জলাশয়। আর এ কারণেই এখানে বেশি পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। জলাশয়গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শৈল, গজার, শিং, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, টেংরা, চিংড়ি, বোয়াল, বাউস, আইড়, টাকি, বাইন, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, বাহরাইন, আবুধাবি এবং মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশি মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এ জেলাতে অনেক অভয়াশ্রম করা হয়েছে। সুস্বাদু এসব মাছের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় জলাশয়ের পরিমাণ ৯৭ হাজার ১৩৫ হেক্টর। আর বছরে মাছ উৎপাদন হয় ২৮ হাজার ৪৭৪ টন। জেলায় মাছের চাহিদা ২২ হাজার ৯০৯ টন। উদ্ধৃত্ত ৫ হাজার ৫৬৫ টন। আর এই উদ্বৃত্ত মাছগুলো ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। স্থানীয় বাজারে মাছ ও দেশের বাইরে রপ্তানিকে কেন্দ্র করে জেলা সদরের, শায়েস্তানগর উমেদনগর, চৌধুরীবাজার, চুনারুঘাটের দুর্গাপুর, মাধবপুর বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ সুতাং বাজার, আজমিরীগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে দেড় শতাধিক আড়ত গড়ে উঠেছে। জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহাম্মদ জানান, এখানের মিঠা পানির মাছ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দিন দিন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে দেশীয় মাছ ধরা পড়ছে। তিনি আরও জানান, এ এলাকার দেশীয় মাছ প্রাকৃতিক জলাশয়ে উৎপাদন হয়। প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছকে কৃত্রিম খাবার দিতে হয় না। তবে জেলার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভিত্তিতে গড়ে ওঠা মৎস্য খামারে খাবার দিতে হয়। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রত্না নদীতে একটি, বানিয়াচংয়ের রত্না নদীতে একটি, নবীগঞ্জের কসবা ফেরি নদীতে একটি করে মৎস্য অভয়াশ্রম করেছে মৎস্য বিভাগ। হবিগঞ্জ শহরে অবস্থিত আসকর ফিশ মার্কেটের মাছের আড়তের মালিক মো. আব্দুল্লাহ মিয়া জানান, এ মার্কেটে শতাধিক আড়ত রয়েছে। হাওর অঞ্চলের মানুষ জলাশয় থেকে মাছ সংগ্রহ করে এখানে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসেন। এখানে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করে অতিরিক্ত থাকা মাছ সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জের আড়তে পাঠানো হচ্ছে। আর সেখান থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করা হয়। মাছ কিনতে আসা বাবু চৌধুরী নামে এক ক্রেতা জানান, পুকুরে চাষ করা মাছের চাইতে জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়া মাছ খেতে অনেক সুস্বাদু। তাছাড়া হাওর থেকে শিকার করা মাছে কোনো ধরনের ফরমালিন প্রয়োগ করা হয় না। ব্যবসায়ী সুমাউন আহমেদ জানান, আমরা সারা বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকার করি। আর এ থেকে আমাদের সংসার চলে। এদিকে, স্থানীয় মাছ ব্যবাসায়ীরা জানায়, এখন বর্ষা মৌসুম শেষের পথে হওয়ায় হাওরে পানি কমে এসেছে। এ জন্য হাওরে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ছে। জেলেরা প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে মাছ বাজারে নিয়ে আসছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। ---ঢাকাটাইমস

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়