ম. আনফর আলী: সিলেট অঞ্চল তথা পুরো বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যসহ বহিঃবিশ্বে পরিচিত মুখ প্রবীণ সাংবাদিক রাজনীতিবিদ যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইসহাক কাজল। তাঁর জন্ম মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাধীন পতনঊষার গ্রামে। দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন সিলেট শহরে। লেখাপড়া করেন সিলেট শহরে থেকেই। তাঁর শ্বশুড়ালয় সিলেট শহরে। শিক্ষাজীবন থেকেই তিনি সাংবাদিকতা এবং রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার সঙ্গে পরিচয় এরশাদের শাসনামলে প্রথমদিকে। তখন তাঁর সাংবাদিকতা পেশা ও রাজনৈতিক কার্যক্রম তুঙ্গে। সিলেটের স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকায় ইসহাক কাজলের লেখা গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়। তাঁর লেখা বড় বড় প্রবন্ধ-নিবন্ধ আলোচিত এবং প্রসংশিত হয়। আমার জন্মস্থান মৌলভাবাজার, এই সুবাদে কাজল ভাইয়ের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমি যখন সাংবাদিকতা পেশায় পরিচিতি লাভ করে এগিয়ে যাই, তখন সিলেটে কতিপয় সাংবাদিকের গাত্রদাহ দেখা দেয়। কেউ কেউ হিংসা এবং অবহেলা করেন। তখন সাংবাদিক ইসহাক কাজল এবং সিলেটের বিশিষ্ট সাংবাদিক আ.ফ.ম. সাঈদ নানাভাবে আমাকে সাহস দেন। তাঁদের সাহস এবং অনুপ্রেরনায় আমি এগিয়ে যাই। এ জন্য আমি তাঁদের কাছে ঋণী।
কাজল ভাই আমাকে রাজনীতিতে টেনে নিলেন। রাজনৈতিক সংগঠন ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। রাজনেতৈক কিংবা সামাজিক সংগঠনের কোনো সভা আয়োজনে টাকা পয়সার প্রয়োজনে কাজল ভাই সংশ্লিষ্ট সদস্যদের কাছে ডেকে, ধমকের সুরে বলতেন পঞ্চাশ/একশ’ টাকা দেন। কেন? প্রশ্ন করলে তিনি ধমক দিতেন। ধমকে টাকা বেরুতো। টাকা হাতে নিয়ে কাজল ভাই বলতেন, অমুক তারিখে সভা হবে। তিনি যাকে যা বলতেন সকলেই তা মেনে নিতেন। আমার দেখা মতে কাজল ভাই তাঁর সাংবাদিকতা এবং রাজনীতি করেছেন গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য। তিনি মেহনতি মানুষের কল্যাণে নিরলস কাজ করেছেন। সিলেট শহরে সংবাদপত্র হকার্স সমিতি গঠিত হয় কাজল ভাইয়ের পরামর্শে। বর্তমানে রাজনীতিবিদ আবুল হোসেন ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সংবাদপত্র হকার্সদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর তাঁরা সফল হন। আন্দোলনের নেপথ্যে ছিলেন ইসহাক কাজল। আজ সেই সমিতির সদস্যরা বিভিন্ন পত্রিকার এজেন্ট হয়ে নিজেরাই ব্যবসা করছেন।
‘সিলেট ডাইজেষ্ট’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করতেন কাজল ভাই। সিলেট ডাইজেষ্ট-এর সম্পাদক ছিলেন তিনি। এক সময় আমাকে দায়িত্ব দেন সহকারী সম্পাদকের। প্রয়াত ছড়াকার মাহমুদ হক-কে নিবেদিত সিলেট ডাইজেষ্ট-এর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এই বিশেষ সংখ্যার প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয় সিলেট প্রেসকাবে। এতে অনেক গুণী-জ্ঞানীরা মাহমুদুল হক-কে নিয়ে বক্তব্যকালে সাংবাদিক ইসহাক কাজলের কর্মকান্ডের প্রসংশাও করেন। ৯১ সালে আমি পাড়ি জমাই বিদেশে। সাপ্তাহিক সিলেট সংবাদ অফিসে আমাকে দেওয়া সংবর্ধনা সভায় অন্যান্যদের সঙ্গে কাজল ভাইও বক্তব্য রাখেন। সৌদিতে গিয়ে জনালাম কাজল ভাই যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। আগেই তাঁর স্ত্রী-সন্তান সেখানে ছিলেন।
কয়েক বছর পর ছুটিতে দেশে আসেন তিনি। সিলেট উকীলবারে এক অনুষ্ঠানে কাজল ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়। গত ১৯ বছর তাঁর আমার দেখা না হলেও তিনি আছেন এবং থাকবেন আমার হৃদয়ে। ফেইসবুকে জানতে পারি ইসহাক কাজল অসুস্থ। মনটা ভেঙ্গে গেলো। কাজল ভাইকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত ম্যাগাজিনে প্রকাশের জন্য আমার কাছে লেখা চাওয়া হয়েছিলো। আমি অসুস্থ থাকার কারণে সময় মতো লেখা দিতে পারিনি বলে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। ইসহাক কাজলের মতো জনদরদী মানুষ এই সমাজে বড়ই প্রয়োজন।
খবর বিভাগঃ
মতামত
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়