কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: স্কয়ার
হাসপাতালের ওই পাশটায় ছোট্ট এক চিলতে বারান্দা। সামনে কাচের দেয়াল।
হুইলচেয়ারে বসে কাচের দেয়াল দিয়ে বাইরের পৃথিবী দেখছিলেন তিনি। ‘খাদিজা’
বলে ডাকতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। মাথায় শুকিয়ে আসা ক্ষত, কপাল থেকে নাক
বরাবর স্পষ্ট কোপের দাগ, গলায় ছিদ্র, হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ। তবে মুখে হাসি।
বললেন, ‘আমি ভালো আছি। সবাইকে ধন্যবাদ।’
এ ঘটনা গতকাল বুধবারের। সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা বেগমের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথোপকথনের সময় সেখানে ছিলেন তার বাবা মাশুক মিয়া, মা মনোয়ারা বেগম ও হাসপাতালের দুজন অফিস ব্যবস্থাপক। সবার মুখে হাসি। খাদিজা যেদিন থেকে উঠে বসতে পারছেন, সেদিন থেকে প্রতিদিন বিকেলে মাশুক মিয়া মেয়েকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে নিয়ে ঘোরেন। গতকালও ঘুরছিলেন।
কেমন আছেন, জানতে চাইলে খাদিজা বলেন, ‘আমি ভালো আছি।’ মানুষ আপনার খোঁজখবর করেছেন, আপনার জন্য প্রার্থনা করেছেন, এ খবর জানেন—জবাবে বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। আমি শুনেছি, সবাই দোয়া করেছেন। আমি এখন ভালো আছি।’ তাঁর জন্য চকলেট আছে শুনে ব্যান্ডেজ মোড়া ডান হাত এগিয়ে দিলেন। একটি চকলেট মুখে পুরে, অন্যদেরও চকলেট সাধলেন। বললেন, বাড়ি যেতে মন চায়। পারলে এখনই চলে যান। এসময় একবারের জন্যও খাদিজার মুখ থেকে হাসি সরেনি।
গত ৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এমসি কলেজে ছাত্রলীগ নেতা এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র বদরুল আলমের নৃশংসতার শিকার হন। বদরুল তাঁকে উপর্যুপরি কোপান। গুরুতর আহত অবস্থায় খাদিজাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সিলেটের জালালাবাদের আউশা গ্রামে খাদিজাদের বাড়ি। রক্ষণশীল যৌথ পরিবার। উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়ে কী হবে—এমন প্রশ্ন তুলেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু ব্যাংকার হতে চাওয়া খাদিজা গোঁ ধরেছিলেন—পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন। পাশে দাঁড়ান বড় ভাই শাহীন আহমেদ। সহশিক্ষায় কারও কারও আপত্তি ছিল। তাই স্নাতক সম্মানে ভর্তির সুযোগ পেয়েও খাদিজা সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হন।
গতকাল খাদিজা বলেন, ‘আমি বাড়ি ফিরে আবার লেখাপড়া করব। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এসেছিলেন। তাঁরা আমাকে ভর্তি করবেন বলে গেছেন। আমি হয় ইংরেজিতে পড়ব, নইলে অর্থনীতিতে।’ বললেন, যে বিষয়েই সম্মান পড়ুন না কেন, তিনি ব্যাংকার হবেন।
৩ অক্টোবর মাকে বলেছিলেন, পরীক্ষা দিয়ে ফিরে ভাত খাবেন। বদরুলের কোপে গুরুতর আহত হওয়ায় বাড়ি ফেরা হয়নি, ভাতও খাওয়া হয়নি। মনোয়ারা বেগমও ভাত না খেয়ে ছিলেন। খাদিজাকে এখন আর নল ঢুকিয়ে খাওয়াতে হয় না। বললেন, স্বাভাবিক সব খাবার খাচ্ছেন তিনি। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
গতকালই প্রথম খাদিজা অনানুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন। পরিবারের শর্ত ছিল—ছবি তোলা যাবে না, রেকর্ড করা যাবে না।
৩ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়েছিল খাদিজাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় তখন তাঁর ওপর হামলার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। খাদিজা অচেতন। ৪ অক্টোবর স্কয়ার হাসপাতালের নিউরোসার্জারির চিকিৎসক রেজাউস সাত্তার বলেছিলেন, ‘এ ধরনের রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ আর গতকাল রেজাউস সাত্তার বলেন, ‘ও ভালোভাবে সেরে উঠছে। এখনো তারিখ ঠিক না হলেও আশা করি, কয়েক দিন পরই হাসপাতাল থেকে ছুটি পাবে।’
খাদিজার মস্তিষ্কে দুই দফা এবং দুই হাতে ও পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। বাঁ হাত, বাঁ পা এখনো ঠিকমতো নাড়াতে পারেন না। তবে চিকিৎসকদের আশা, তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। ২৪-২৫ নভেম্বরের দিকে তাঁকে সিআরপিতে নেওয়া হবে। সেখানকার চিকিৎসা শেষে খাদিজার বাড়ি ফেরার কথা।
৩ অক্টোবরের ঘটনা সম্পর্কে খাদিজা কিছু বলেন কি না, জানতে চাইলে মাশুক মিয়া বলেন, ‘তারে আমি জিগাইসি, আব্বু, তুমি যে আইলায় হাসপাতালে, কী হইছিল? বাচ্চা আউলিয়া ফালায়। ডাক্তার বেশি মাতত না করছে।’
প্রথম আলোর সৌজন্যে
এ ঘটনা গতকাল বুধবারের। সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা বেগমের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথোপকথনের সময় সেখানে ছিলেন তার বাবা মাশুক মিয়া, মা মনোয়ারা বেগম ও হাসপাতালের দুজন অফিস ব্যবস্থাপক। সবার মুখে হাসি। খাদিজা যেদিন থেকে উঠে বসতে পারছেন, সেদিন থেকে প্রতিদিন বিকেলে মাশুক মিয়া মেয়েকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে নিয়ে ঘোরেন। গতকালও ঘুরছিলেন।
কেমন আছেন, জানতে চাইলে খাদিজা বলেন, ‘আমি ভালো আছি।’ মানুষ আপনার খোঁজখবর করেছেন, আপনার জন্য প্রার্থনা করেছেন, এ খবর জানেন—জবাবে বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। আমি শুনেছি, সবাই দোয়া করেছেন। আমি এখন ভালো আছি।’ তাঁর জন্য চকলেট আছে শুনে ব্যান্ডেজ মোড়া ডান হাত এগিয়ে দিলেন। একটি চকলেট মুখে পুরে, অন্যদেরও চকলেট সাধলেন। বললেন, বাড়ি যেতে মন চায়। পারলে এখনই চলে যান। এসময় একবারের জন্যও খাদিজার মুখ থেকে হাসি সরেনি।
গত ৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এমসি কলেজে ছাত্রলীগ নেতা এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র বদরুল আলমের নৃশংসতার শিকার হন। বদরুল তাঁকে উপর্যুপরি কোপান। গুরুতর আহত অবস্থায় খাদিজাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সিলেটের জালালাবাদের আউশা গ্রামে খাদিজাদের বাড়ি। রক্ষণশীল যৌথ পরিবার। উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়ে কী হবে—এমন প্রশ্ন তুলেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু ব্যাংকার হতে চাওয়া খাদিজা গোঁ ধরেছিলেন—পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন। পাশে দাঁড়ান বড় ভাই শাহীন আহমেদ। সহশিক্ষায় কারও কারও আপত্তি ছিল। তাই স্নাতক সম্মানে ভর্তির সুযোগ পেয়েও খাদিজা সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হন।
গতকাল খাদিজা বলেন, ‘আমি বাড়ি ফিরে আবার লেখাপড়া করব। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এসেছিলেন। তাঁরা আমাকে ভর্তি করবেন বলে গেছেন। আমি হয় ইংরেজিতে পড়ব, নইলে অর্থনীতিতে।’ বললেন, যে বিষয়েই সম্মান পড়ুন না কেন, তিনি ব্যাংকার হবেন।
৩ অক্টোবর মাকে বলেছিলেন, পরীক্ষা দিয়ে ফিরে ভাত খাবেন। বদরুলের কোপে গুরুতর আহত হওয়ায় বাড়ি ফেরা হয়নি, ভাতও খাওয়া হয়নি। মনোয়ারা বেগমও ভাত না খেয়ে ছিলেন। খাদিজাকে এখন আর নল ঢুকিয়ে খাওয়াতে হয় না। বললেন, স্বাভাবিক সব খাবার খাচ্ছেন তিনি। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
গতকালই প্রথম খাদিজা অনানুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন। পরিবারের শর্ত ছিল—ছবি তোলা যাবে না, রেকর্ড করা যাবে না।
৩ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়েছিল খাদিজাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় তখন তাঁর ওপর হামলার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। খাদিজা অচেতন। ৪ অক্টোবর স্কয়ার হাসপাতালের নিউরোসার্জারির চিকিৎসক রেজাউস সাত্তার বলেছিলেন, ‘এ ধরনের রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ আর গতকাল রেজাউস সাত্তার বলেন, ‘ও ভালোভাবে সেরে উঠছে। এখনো তারিখ ঠিক না হলেও আশা করি, কয়েক দিন পরই হাসপাতাল থেকে ছুটি পাবে।’
খাদিজার মস্তিষ্কে দুই দফা এবং দুই হাতে ও পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। বাঁ হাত, বাঁ পা এখনো ঠিকমতো নাড়াতে পারেন না। তবে চিকিৎসকদের আশা, তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। ২৪-২৫ নভেম্বরের দিকে তাঁকে সিআরপিতে নেওয়া হবে। সেখানকার চিকিৎসা শেষে খাদিজার বাড়ি ফেরার কথা।
৩ অক্টোবরের ঘটনা সম্পর্কে খাদিজা কিছু বলেন কি না, জানতে চাইলে মাশুক মিয়া বলেন, ‘তারে আমি জিগাইসি, আব্বু, তুমি যে আইলায় হাসপাতালে, কী হইছিল? বাচ্চা আউলিয়া ফালায়। ডাক্তার বেশি মাতত না করছে।’
প্রথম আলোর সৌজন্যে
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়