Saturday, November 26

বদরুলের কোপানোর সেই স্মৃতি মনে নেই খাদিজার

বদরুলের কোপানোর সেই স্মৃতি মনে নেই নার্গিসের

  কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: স্কয়ার হাসপাতালের ১১ তলার নির্দিষ্ট কেবিনটির উত্তর দিকে বিশাল কাচের দেয়াল। দেয়াল ভেদ করে আসা সূর্যের আলোতে ঝকঝক করছে কেবিনটি। আর সেখানেই বিছানায় শুয়ে খাদিজা আক্তার নার্গিস মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন ভাইয়ের সঙ্গে। কাছে গিয়ে ডাকতেই মুখে ছড়িয়ে যায় হাসি।

আজ শনিবার প্রথমবারের মতো  নার্গিসকে গণমাধ্যমের সামনে নিয়ে আসেন স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্মীদের সহায়তায় হুইল চেয়ারে বসে সাংবাদিকদের সামনে আসেন নার্গিস। এরপর দুই চিকিৎসক নিউরো সার্জন ডা. এ এম রেজাউস সাত্তার ও স্কয়ার হাসপাতালের মেডিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিনের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, 'আমি ভালো আছি। সুস্থ আছি।'

পরে তার চিকিৎসক ডা. মির্জা নাজিমউদ্দিন স্বস্তির সঙ্গে বলেন, প্রথম যেদিন নার্গিস স্কয়ার হাসপাতালে আসে তখন তার চেতনাশক্তি ছিল নির্ণায়ক যন্ত্রে ১৫ এর মধ্যে মাত্র ৫ কিন্তু এখন সেটি আমার-আপনার মতো অর্থ্যাৎ একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো ১৫।

মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে, কেবল বাম হাতে ব্যান্ডেজ রয়েছে। তবে মাথায় করা জটিল অপারেশনের চিহ্নগুলো এখনো দগদগে। আগের থেকে অনেক ভালো অবস্থা হলেও শরীর এখনও পুরোপরি সেরে ওঠেনি। ফিজিওথেরাপির জন্য ডাক্তারদের পরামর্শে যেতে হবে সাভারের সিআরপিতে। তারপরেও খুশি নার্গিস।

কেমন আছেন জানতে চাইলে নার্গিস বলেন, ''আমি ভালো আছি, সুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা আমার, অনেক অনেক ধন্যবাদ।''

'আপনাকে তো হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেবে' এ কথা বলতেই হাসি মুখে নার্গিস বলেন, 'বাড়ি যেতে মন চাচ্ছে, এখানে আর ভালো লাগছে না।'

বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন দেখা নার্গিস হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যে সত্যি সত্যিই বাড়িতে ফিরে যাবেন। ডাক্তাররাও তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। স্কয়ার হাসপাতালে থাকার আর প্রয়োজন নেই তার। এবার একেবারে সুস্থ মানুষের মতো জীবনযাপন ও লেখাপড়া করার আকাঙ্ক্ষা তার মনে। সুপ্ত ইচ্ছা রয়েছে ব্যাংকার হওয়ারও।

খাদিজা বলেন, 'বাড়ি ফিরেই লেখাপড়া শুরু করবো, আমি ব্যাংকার হবো-বাবা-মাকে দেখবো।'

কথা হয়তো আরও বলতেন। কিন্তু, একসঙ্গে বেশি কথা বলাতে এখন বারণ আছে চিকিৎসকদের। তাই তাকে থামিয়ে দিলেন বাবা মাশুক মিয়া। মেয়েকে বললেন, 'আর কথা বইলো না, ডাক্তার না করছে।'

বাবার কথা মেনেই নার্গিস হাতের মোবাইল পাশে রেখে চোখ বুজলেন।

প্রসঙ্গত, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ৩ অক্টোবর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনার পর প্রথমে নার্গিসকে সিলেটে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৪ অক্টোবর ভোরে তাকে ঢাকায় আনা হয়। সেদিন দুপুরেই স্কয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তাকে ৯৬ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখেন এবং তারা বলেছিলেন, 'নার্গিসের মাথায় চাপাতির অসংখ্য কোপের চিহ্ন রয়েছে। তাকে এমনভাবে কোপানো হয়েছে যে, খুলি ভেদ করে ব্রেইন ইনজুরি হয়েছে। কোপানোর সময় হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করায় তার দুই হাতের রগ কেটে গেছে।'

নার্গিসের অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া চিকিৎসকদলের প্রধান নিউরো সার্জন ডা. এ এম রেজাউস সাত্তার তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'নার্গিসের মাথায় অসংখ্য আঘাত। তার যে অপারেশন হয়েছে, তাতে ৭২ ঘণ্টা আগে তার সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। তিনি ঝুঁকিতে আছেন। এ ধরনের রোগীদের বাঁচার সম্ভবনা শতকরা ৫ ভাগ।'

তবে সারা দেশের মানুষের দোয়া ও মঙ্গল কামনা এবং চিকিৎসকদের নিবিড় পরিচর্যায় সব অমঙ্গলের চিহ্ন দূরে সরিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হন নার্গিস। গত ৮ নভেম্বর নার্গিসকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।

নার্গিসের এমন সুস্থতায় খুশি তার চিকিৎসকরাও। তারা বলছেন, এখন নার্গিসের ফিজিওথেরাপি গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। তাই তাকে স্কয়ার হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে সাভারের সিআরপিতে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। আগামীকাল রবিবারের মধ্যেই তাকে সেখানে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

মেয়েকে বিশ্রাম দিয়ে তার সম্পর্কে আরও কথা হয় বাবা মাশুক মিয়ার সঙ্গে। আগের কোনও কথা নার্গিস মনে করতে পারে কিনা জানতে চাইলে মাশুক মিয়া বলেন, 'আমরা ওরে জিগাই, তুমি কি লেইগ্যা হসপিটালত আইল্যা, কিন্তু ও কইতে পারে না। আগের কোনও স্মৃতি নাই।'
-- বিডিলাইভ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়