কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
সংসার। তিন অক্ষরের এই শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না। সংসার করে হয়তো কেউ সুখি অথবা কেউ দুখি। আর এই নিয়েই তো জীবন। সেই সংসার জীবনে কিছু চাওয়া থাকে কিছু পাওয়া থাকে। কখনও পূরণ হয় আবার কখনও পূরণ হয়না। কিন্তু তাই বলে তো আর থেমে নেই জীবন। অনেক স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে জীবন।
বেঁচে থাকতে হলে প্রয়োজন জীবীকার।সেই জীবিকার তাগিদেই সবাই যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অথচ এই সংসার নিয়েই নিজেদের কর্মের জায়গা ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র সংসার নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন এক সময়কার জনপ্রিয় তারকারা।তারা হলেন চিত্রনায়িকা শাবানা, নাঈম-শাবনাজ, অভিনেত্রী রোমানা, বিন্দু, নাফিজা। তারা অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়লেও পরবর্তীতে তারা হয়ে উঠেছেন ‘ফুলটাইম সংসারী’। এই ফুলটাইম সংসারীদের নিয়েই আজকের বিশেষ আয়োজন।
শাবানা
ঢালিউডের বিউটি কুইনখ্যাত জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা এখন ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসারী। বড় পর্দার শাবানার সাথে বাস্তবের শাবানার এখন কোনো মিল নেই। ফুলহাতা কামিজ ও হিজাব সেই শাবানাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। এখন তার দেখা পাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে তো বটেই, কোনো সাংবাদিকের পক্ষেও প্রায় অসম্ভব। স্বামী ওয়াহিদ সাদিক, দুই মেয়ে সুমী ও উর্মি এবং একমাত্র পুত্র নাহিনকে নিয়ে তিনি এখন বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। গুণী এই অভিনেত্রী এখন অনেকটাই লোকচুক্ষুর আড়ালে। এখন তিনি আত্মীয়স্বজন ছাড়া কারো সাথে দেখা দেন না, কথাও বলেন না।
কোটি দর্শকের স্বপ্নের নায়িকা হিজাবপরা শাবানাকে এখন দেশে-বিদেশে দেখলে তার পরিচিতরা অবাক হন। একজন শীর্ষস্থানীয় নায়িকা হঠাৎ পর্দার অন্তরালে নিজেকে এভাবে লুকিয়ে রাখবেন এটা তারা ভাবতেও পারেন না।
শাবানা তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, হজ করার পর তিনি আর ছবি না করে পর্দা করার সিদ্ধান্ত নেন। তাছাড়া এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সাধারণ জীবন-যাপন তার খুব ভালো লাগছে। এই দূর প্রবাসে সংসার, সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়েই একান্ত সময় কেটে যায় শাবানার। তিনি এখন প্রবাসে একটা বুটিক হাউস দেয়ার চিন্তা করছেন।
শাবানার আসল নাম রত্না। মাত্র ৯ বছর বয়সে ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ ছবিতে ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে শাবানার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে। তার বাবা ফয়েজ চৌধুরী একসময় চিত্র পরিচালক ছিলেন। এরও আগে তার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় মেয়েকে ফিল্মে দিয়ে এবং নিজে চলচ্চিত্রে জড়িয়ে ভাগ্য গড়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন। একদিন তার সে আশা পূরণ হয়েছিল। শাবানা তখন রত্না নামে ‘নতুন সুর’ ছবিতে অভিনয়ের পরে তালাশ, সাগর, ভাইয়াসহ আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করলেন।
১৯৬৬ সাল থেকে তার উত্থান ঘটতে শুরু হয়। সে বছরই ‘আবার বনবাসে রূপবান’-এ সুলতানা জামানের কন্যা সোনাভানের চরিত্রে অভিনয় করে নায়িকা হিসেবে রত্না প্রথম দর্শকের মন কাড়লেন। এরপর ‘জংলি মেয়ে’ এবং ‘চকোরি’ ছবি দুটিতে প্রধান নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করার পর শাবানাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
শাবানা তার অভিনয়ের প্রথম দিককার সম্পর্কে একবার বলেছিলেন, ১৯৬৭ সালে ‘চকোরি’ রিলিজের পর থেকে আমার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল ঢাকার বাইরে লাহোর ও করাচিতে। ১৯৬৮ সালে নায়িকা হিসেচে চাঁদ আওর চাঁদনি, ভাগ্যচক্র এবং কুলিতে; ১৯৬৯ সালে-দাগ, মুক্তি; ১৯৭০ সালে ‘পায়েল, সমাপ্তি, ছদ্মবেশী, বাবুল, মধু মিলন ও একই অঙ্গে এত রূপ’-এ অভিনয় করলাম। রাজ্জাক-সুচন্দা জুটির অসম্ভব জনপ্রিয়তার সময় কাজী জহিরের ‘মধুমিলন’-এ অভিনয় দেখে দর্শক প্রশংসা শুরু করল আমাকে নিয়ে। দ্বৈত অনুরাগের সংঘাত ও পরিণতির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এ ছবি দর্শকের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। আমার তো মনে হয়, ‘মধু মিলন’ ছবিতে সম্ভবত প্রথম হৃদয়স্পর্শী অভিনয় দেখাতে সক্ষম হয়েছিলাম।
স্বাধীনতার পর আবার ছবি নির্মাণ শুরু। শাবানা আগের জনপ্রিয়তা নিয়ে ১৯৭২ সালেই ৮টি ছবির নায়িকা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা এগারো জন’ আর কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন’ করে সারা বাংলাদেশে জানান দিলেন ঢাকার ফিল্মে শাবানার তুলনা হয় না। অন্যান্য ছবি যেমন- সমাধান, ছন্দ হারিয়ে গেল, এরাও মানুষ, মুন্না আওর বিজলি, চৌধুরী বাড়ি আর স্বীকৃতিও সফল হয়েছিল।
শাবানা মোট ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথম এই পুরস্কার পান ‘জননী’ সিনেমার জন্য। এরপর ১৯৮০, ১৯৮২, ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৭, ১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৪ সালেও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তার অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে আছে ১৯৯১ সালে প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, ১৯৮২ ও ১৯৮৭ সালে বাচসাস পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে আর্ট ফোরাম পুরস্কার, ১৯৮৮ সালে আর্ট ফোরাম পুরস্কার, ১৯৮৮ সালে নাট্যসভা পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে কামরুল হাসান পুরস্কার, ১৯৮২ সালে নাট্য নিকেতন পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে ললিতকলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সায়েন্স ক্লাব পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে কথক একাডেমী পুরস্কার এবং জাতীয় যুব সংগঠন পুরস্কার।
শাবানা ১৯৭৩ সালে ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন। তখন সাদিক ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। শাবানার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস এস প্রোডাকশনের দেখাশোনার ভার তার স্বামীর ওপর পড়ে। ১৯৯৭ সালে শাবানা দীর্ঘ ৩৪ বছর কাজ শেষে হঠাৎ চলচ্চিত্র-অঙ্গন থেকে বিদায় নেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর তিনি আর নতুন কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। ২০০০ সালে তিনি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
নাঈম-শাবনাজ
বাংলাদেশের অন্যতম চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী’ ছবির মাধ্যমে নাঈম-শাবনাজ জুটির অভিষেক হয়। এরপর থেকে রূপালী পর্দায় তারা জুটি বেঁধে দারুণ সাড়া ফেলেন। নাঈম-শাবনাজ অতিনীত অধিকাংশ ছবিই ছিল ব্যবসা সফল। সফল স্ক্রিনে নাঈম-শাবনাজ বাস্তব জীবনেও সফল। অভিনয় করতে গিয়েই প্রেম। প্রেম থেকেই বিয়ে। ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর তারা দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ঘরে রয়েছে দুই কন্যা সন্তান। দাম্পত্য জীবনের ২৩ বছরে পদার্পণ করলো।
নাঈম-শাবনাজ বর্তমানে চলচ্চিত্র ছেড়ে দূরে আছেন। নাঈম মনোযোগী তার ব্যবসা নিয়ে এবং শাহনাজ ব্যস্ত সংসার নিয়ে। তারা জুটি বেঁধ বিশটির মতো ছবিতে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘জিদ, ‘লাভ, ‘চোখে চোখে, ‘অনুতপ্ত, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সোনিয়া’, ‘টাকার অহংকার’, ‘সাক্ষাৎ ও ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’।
নাঈম-শাবনাজ অভিনীত প্রথম ছবি চাঁদনী ১৯৯১ সালের ২ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল। সেসময় ছবিটি ছিল দারুণ সুপারহিট। দেখতে দেখতে নাঈম-শাবনাজ অভিনীত চলচ্চিত্র ‘চাঁদনী’র ২৫ বছর অর্থাৎ রজতজয়ন্তীতে পা রেখেছে গেল ২ অক্টোবর।
নিজেদের জীবনের প্রথম চলচ্চিত্রের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে নাঈম-শাবনাজ এবং ‘চাঁদনী’ পরিবার এবার একটি ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ‘চাঁদনী’ ছবির নির্মাণের সঙ্গে জড়িত শিল্পী-কুশলীদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তারা।
রোমানা খান
জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোমানা খান। এ মুহূর্তে আমেরিকাতে অবস্থান করছেন। স্থায়ীভাবেই বাস করছেন নিউইয়র্কে। দেশে ফিরবেন কি ফিরবেন না এমন কিছুই জানা যায়নি। গত বছরই বিয়ে করেছিলেন আমেরিকার বাংলাদেশি প্রবাসী ও ব্যবসায়ী এলিন রহমানকে। এরপর থেকে স্বামীর সঙ্গে সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন রোমানা। বিয়ের পর বেশ সুখেই আছেন জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। আর সেটা তার ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে দেখলে বোঝা যায়। নিউ ইয়র্কে থাকার কারণে দেশের শোবিজ অঙ্গনের বন্ধুদের সঙ্গেই যোগাযোগ নেই রোমানার। শুধু তাই নয় বিয়ের পরপরেই তিনি ঘোষণা দিয়ে অভিনয় ছেড়ে দেন। ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তার সংসার জীবন নিয়ে।
আফসানা আরা বিন্দু
বিন্দু লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগীর মাধ্যমে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেন। যদিও তিনি সেখানে প্রথম রানার আপ হয়েছিলেন। বিন্দুর প্রথম চলচ্চিত্র হুমায়ূন আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছিল ব্যবসায়িকভাবে সফল। ধীরে ধীরে তিনি মডেল এবং উপস্থাপক হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেন। এরপর জাগো তাঁর আরও একটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। বিন্দু অসংখ্য জনপ্রিয় টেলিফিল্ম, নাটক, মডেলিং এবং বিজ্ঞাপণ চিত্রে কাজ করেছেন। তার সর্বশেষ অভিনীত ‘এইতো প্রেম’ চলচ্চিত্রটি গত ১৩ মার্চ ২০১৫ মুক্তি পায়। কিন্তু এর আগে ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর আমেরিকা প্রবাসী আসিফ সালাহউদ্দিন মালিক এর সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যান। তারপর থেকেই তিন আর অভিনয়ে নিয়মিত হতে পারেননি। তার ঘোষণা দিয়েই মিডিয়া ছেড়ে দেন তিনি। স্বামীর সঙ্গে আমেরিকাতে এখন বর্তমানে সংসার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি।
নাফিজা
লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার মঞ্চ থেকে মিডিয়াতে নাম লেখান নাফিজা জাহান। নাটক ও টেলিফিল্মে নিজেকে প্রমাণ করেন, হয়ে ওঠেন ব্যস্ত তারকা। তবে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি দেশ ছাড়েন তিনি, পাড়ি জমান আমেরিকায়।
ছয় মাস পরে দেশে ফিরে এসেছিলেন নাফিজা, হাতেগােনা কয়েকটি কাজ করে আবারও উড়াল দেন যুক্তরাষ্ট্রে। গুঞ্জন শােনা যায় সংগীতশিল্পী এস আই টুটুল ও অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদের ভাগ্নে দীপকে বিয়ে করেছেন নাফিজা। তবে তিনি নিজেই বিয়ের খবর অস্বীকার করে সমালোচিত হন- কারণ যুক্তরাষ্ট্রে একসঙ্গেই থাকতেন তারা।
মিডিয়াতে কাজ করার সময় শরীর সচেতন থাকলেও বিদেশে পড়াশােনা এবং গুঞ্জনে থাকা সংসার করতে গিয়ে বেশ স্বাস্থ্যবান হয়েছেন নাফিজা। দেখলেই বোঝা যায়, অনেকদিন মিডিয়াতে অনুপস্থিত তিনি। তিনিও আর অভিনয়ে ফিরছেন না। মোটকথা আমেরিকাতেই গুঞ্জনে থাকা সংসার নিয়েই তিনি ব্যস্ত রয়েছেন।
পরিশেষে বলা যায়, উপরের এই কয়জন তারকা তার তারকাখ্যাতি নিয়েই বর্তমানে অবস্থান করছেন দেশের বাইরে। মাঝে মধ্যে হুট করেই তাদের দেশে ফিরতে দেখা যায়। কিন্তু ফিরলেও তারা ক্যামেরার সামনে আর আসতে পারেননি। বা আসতেও চাননি। তারা এখন শুধুই তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তারা।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়