Wednesday, November 16

১২৮ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার এমন লজ্জা!

১২৮ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার এমন লজ্জা!

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: হোবার্ট টেস্টকে অস্ট্রেলিয়ার ‘লজ্জার টেস্ট’ বললেও ভুল হবে না। শত বছরের পুরনো লজ্জার রেকর্ডের পাতা খুলতে হয়েছে তাদের দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইনিংস ও ৮০ রানের হারে। ১২৮ বছর পর যেমন ৩২ রানে শেষ ৮ উইকেট হারানোর লজ্জায় মাথা নিচু করতে হয়েছে, তেমনি মুখ লুকাতে হচ্ছে সবচেয়ে কম বল খেলার রেকর্ডের পাতা খুলে।

কেপ টাউন বা ট্রেন্ট ব্রিজ, এজবাস্টন কিংবা গল, হায়দরাবাদ থেকে মেলবোর্ন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ের সমার্থক হয়ে গেছে ধস। তবে এবার হোবার্ট ছাড়িয়ে গেছে যেন সব কিছুকেই। দ্বিতীয় ইনিংসে যে ধস নামল, তেমন কিছুর নজির খুঁজতে যেতে হচ্ছে যে ১২৮ বছর পেছনে! নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যটিং ধসকে স্পর্শ করেছে এই ধস।

১২৮ বছর আগের ইতিহাসে যাওয়ার আগেই যে রিকি পন্টিং একবার ধুয়ে দিলেন নিজের দলকে। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা মনে হয় ব্যাটিং করতেই ভুলে গেছে।

সেই ১৮৮৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিডনিতে সবশেষ এমন ধস নেমেছিল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ে। প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল পার্সি ম্যাকডনেলের অস্ট্রেলিয়া। ৫টি করে উইকেট নিয়েছিলেন জর্জ লোহম্যান ও ববি পিল। সেই ইনিংসে ৩২ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

সেই বিপর্যয় তবু ছিল বোধগম্য। সেই যুগে উইকেট ঢেকে রাখার নিয়ম বা রীতি ছিল না। সিডনির উইকেট ছিল বৃষ্টিভেজা, স্যাঁতস্যাঁতে। গোটা ম্যাচেই ধুঁকতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। দুই ইনিংসে ইংল্যান্ডের রান ছিল ১১৩ ও ১৩৭, অস্ট্রেলিয়ার ৪২ ও ৮২।

কিন্তু এবার উইকেট তেমন কোনো ‘মাইন ফিল্ড’ ছিল না। স্রেফ খানিকটা সিম আর সুইং করেছে। তাতেই কুপোকাত এক সময়ের প্রবল পরাক্রমশালী দলটির ব্যাটসম্যানরা।

দ্বিতীয় ইনিংসে অমন ধসের আগে প্রথম ইনিংসে ৮৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল স্টিভেন স্মিথের দল। গোটা টেস্টে খেলতে পেরেছে মাত্র ৫৫৮ বল। গত ৮৮ বছরে দেশের মাটিতে কোনো টেস্টে এত কম বল খেলেনি অস্ট্রেলিয়া। সবশেষ ১৯২৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রিসবেনে স্বাগতিকরা খেলেছিল ৪৫৭ বল।

নিজেদের আরেকটি বিব্রতকর রেকর্ডও স্পর্শ করেছে স্মিথের এই অস্ট্রেলিয়া। এই টেস্টে দু অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই আউট হয়েছে দলের ১৬ ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসে এমনটি হয়েছিল আর একবারই। ১৯১২ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক অঙ্কে আউট হয়েছিল ১৬ অস্ট্রেলিয়ান।

গোটা টেস্টে দুই দল মিলিয়েই মোট খেলা হয়েছে ১৯৩.৫ ওভার। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এর চেয়ে কম ওভারে কোন টেস্টে ফল হয়েছিল সেই ১৯৫০ সালে। অ্যাশেজের ব্রিসবেন টেস্টে।

সব কিছুই ফুটিয়ে তুলছে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ের বর্তমান চিত্র। ম্যাচ শেষে অসহায় কণ্ঠে অধিনায়ক স্মিথের সরল স্বীকারোক্তিই বলে দিচ্ছে বাস্তবতা, “বল সিম করুক, স্পিন করুক বা সুইং, কোনোটিরই জবাব এই মুহূর্তে জানা নেই আমাদের!”

জেনে নেয়া যাক অস্ট্রেলিয়ার আরো কিছু লজ্জার রেকর্ড

- অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে টানা তিন সিরিজ হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জেতার আগে প্রোটিয়ারা জিতে ফিরেছিল ২০০৮-০৯ ও ২০১২-১৩ মৌসুমে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের পর তৃতীয় দল হিসেবে এই অর্জনের খাতায় নাম তুললো দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল ১৯৮৪ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে। আর ইংল্যান্ডের টানা তিন সিরিজ জয়টা এসেছিল ১৮৮৪ ও ১৮৮৮ সালের মধ্যে।

- এর আগে কখনও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জেতার রেকর্ড ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার। এবারের ইনিংস ও ৮০ রানের জয়টা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রোটিয়াদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়। এতদিন সর্বোচ্চ ছিল ২০১২ সালে পার্থের ৩০৯ রানের জয়।

- হোবার্ট টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া খেলেছে ৫৫৮ বল। যা গত ১০০ বছরে ঘরের মাঠে কম বল খেলার হিসাবে দ্বিতীয়। তাতে ফিরে এসেছে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের অভিষেক ম্যাচের স্মৃতি। ১৯২৮-২৯ মৌসুমে এই কিংবদন্তির অভিষেক ম্যাচেই এই শতাব্দীতে ঘরের মাঠে সবচেয়ে কম বল খেলার লজ্জার রেকর্ড গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া খেলেছিল ৪৫৭ বল।

- হোবার্ট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছে ৩২ রানে। তাতে ফিরে এসেছে ১২৮ বছর আগের লজ্জা। ১৮৮৮ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারা শেষবার ৩২ রানে হারিয়েছিল শেষ ৮ উইকেট। সেটাই এবার স্পর্শ করল এই অস্ট্রেলিয়া।

- দুই ইনিংস মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার হারানো ২০ উইকেটের ১৬টি আউট হয়েছে একক-অঙ্কে। মানে ১৬ ‘ব্যাটসম্যান’ যেতেই পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে। শেষবার এই লজ্জার সামনে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া ১৯১২ সালে ওভালে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়