নিজস্ব প্রতিবেদক:
নান্দনিক ও সৌন্দর্য্যে অপরূপ সীমান্তবর্তী কানাইঘাট লোভা নদী থেকে নির্বিচারে পাতর উত্তোলন করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করেই। আর পরিবেশ বিধ্বংসী শক্তিশালী ইঞ্জিন চালিত শ্যালো মেশিনের সাহায্যে শেইভ দিয়ে লোভা নদীর মারাত্মক ভাঙ্গন কবলিত তীর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। শ্যালো মেশিনের সাহায্যে বারকি নৌকার মাধ্যমে শেইভ দিয়ে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ ভাবে বেআইনী হলেও এর কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না এখানে। প্রশাসনের কোন ধরনের শক্ত ভূমিকা না-থাকায় একটি শক্তিশালী পাথর খেকো চক্র লোভা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে শেইভ মেশিন দিয়ে নৌকা দিয়ে বেপরোয়া ভাবে পাথর উত্তোলন করে যাচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সরকারী ভাবে লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর নির্ধারিত এলাকার বাইরে লোভানদী ও আশপাশ এলাকা থেকে শত শত পাথর শ্রমিক ইঞ্জিন চালিত বারকি নৌকার মাধ্যমে শেইভ মেশিন দিয়ে মাটি খোঁড়ে পাথর তুলছে। একদিকে শেইভ দিয়ে পাথর তোলা হচ্ছে অপরদিকে ধ্বসে পড়েছে লোভানদীর তীর। চারিদিকে পরিবেশ বিধ্বংসী তৎপরতা চলছে, ভাঙ্গছে লোভার দু’পারের বিস্তৃর্ণ এলাকা। দেখে যেন মনে হয়, এখানে কোন প্রশাসন নেই, শুধু পাথর খেকোদের রাম রাজত্ব চলছে। স্থানীয় এলাকাবাসী বলেছেন এভাবে গর্ত করে শেইভ মেশিন দিয়ে লোভা নদী থেকে সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকলে মানুষের বাড়ীঘর বিস্তৃীর্ণ ফসলী জমি লোভার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। দিনে দিনে বিস্তৃীর্ণ ফসলি জমি নদী ভাঙ্গনের কারনে কমে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রাচীনতম মুলাগুল বাজারের পাশ থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে বাজারটির এক তৃতিয়াংশ দোকানপাঠ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মারাত্মক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে স্থানীয় বড়গ্রাম, সাউদগ্রাম, কান্দলা, সতিপুর, বাজেখেল গ্রামে। হুমকির মুখে মুলাগুল নয়াবাজারটিও। গত কয়েক বছর ধরে কোন ধরনের নিয়ম কানুনকে তোয়াক্কা না করে শক্তিশালী শ্যালো মেশিন দিয়ে বড় বড় গর্ত করে এবং লোভা নদীর দু’পার থেকে মাটি খোঁড়ে এবং শেইভ মেশিনের সাহায্যে পাথর উত্তোলন করায় নদী ভাঙ্গান তীব্র আকার ধারণ করেছে। সরকারের কোন ধরনের আইন কানুন লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে মানা হচ্ছে না। একদিকে লোভা নদী থেকে পরিবেশ বিধ্বংসী তৎপরতা চালিয়ে পাথর উত্তোলন, অপরদিকে সরকারী জায়গা থেকে মাটি খোঁড়ে গর্ত তৈরি করে পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকায় দিনে দিনে নান্দনিক সৌন্দের্য্যরে অপরূপ সীমান্তবর্তী পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় লোভাছড়া এলাকা তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের পাথর কোয়ারীগুলোতে পরিবেশ বিধ্বংসী তৎপরতা চালিয়ে যাতে কেউ পাথর উত্তোলন করতে না পারে এজন্য তাহার কঠুর নির্দেশ থাকলেও লোভাছড়া পাথর কোয়ারী এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত হচ্ছে। সম্প্রতি কয়েক মাস পূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর ইজারা এলাকা চিহ্নিত করে ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেন। ইজারার নির্ধারিত স্থান ব্যতীত সরকারী খাস ও মালিকানাধীন জায়গা থেকে পাথর উত্তোলন করা হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে কোয়ারী এলাকায় নির্দেশ দেওয়ার পরও ইজারাদারের মনোনীত লোকজন ও পাথর খেকো চক্র সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে কোয়ারীর ইজারা ব্যতীত বণ বিভাগের জায়গা ও অন্যান্য স্থান থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন করে আসছে। মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন শেইভ দিয়ে পাথর উত্তোলনের অপরাধে ইঞ্জিন নৌকা আটক করে পরে জরিমানার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার পাথর কোয়ারী এলাকায় গিয়ে দেখা যায় শত শত পাথর শ্রমিক শ্যালো মেশিনের সাহায্যে শেইভ দিয়ে লোভা নদীর একেবারে ভাঙ্গন কবলিত তীর এলাকা থেকে নৌকা দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে। এ সময় পাথর উত্তোলনকারী দক্ষিণ লক্ষীপ্রসাদ গ্রামের নিজাম উদ্দিন, আমির উদ্দিন, সুলেমান, আব্দুল্লাহ, তাজ উদ্দিন ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আবুল কালাম, আব্বাস আলী, কামাল হোসেন, মঈন উদ্দিন, আলমগীর, কানাইঘাট উপজেলার বায়মপুর গ্রামের রেজাউল, শুক্কুর, আবুল সহ শতাধিক পাথর শ্রমিকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, শেইভ মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন যারা তাদেরকে দিয়ে পাথর তোলাচ্ছেন। উত্তোলনকৃত পাথর যারা নির্ধারিত স্থান থেকে তুলেন তাদের কাছে তারা বিক্রি করে থাকেন। প্রতি ফুট পাথরের জন্য ইজারাদার মনোনীত লোকদের ৪/৫ টাকা হারে রয়্যেলিটি স্থানীয় প্রশাসনের নামে তাদের কাছ থেকে আলাদা টাকা নেওয়া হয় বলে পাথর শ্রমিকরা জানিয়েছেন। শেইভ মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বেআইনী তারা স্বীকার করে বলেন, আমাদের কোন সমস্যা হবে না। যারা পাথর উত্তোলন করছে তারা দায়িত্ব নিবেন বিধায় আমরা নিরাপদে আছি। সচেতন মহল সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারী ও লোভা নদী থেকে শেইভ দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধে খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে দ্রুত এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাথর কোয়ারী এলাকায় ইঞ্জিন চালিত শ্যালো মেশিনের সাহায্যে শেইভ দিয়ে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও বেআইনী। এসব কর্মকান্ডের সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা মাঝে মধ্যে অভিযান করে থাকি। শীঘ্রই কোয়ারী এলাকা পরিদর্শন করে শেইভ দিয়ে যারা পাথর উত্তোলন করছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন মহল কোয়ারী এলাকা থেকে শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়