Wednesday, November 2

মিতব্যয়িতা মানুষের প্রশংসনীয় গুণ


 মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ : সম্পদ ব্যয়ে মিতব্যয়ী হওয়ার উপকারিতা ও মোমিনের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কৃপণতাও করে না এবং তারা আছে এ দুইয়ের মধ্যমপন্থায়।’এ কারণেই মিতব্যয় মানুষের সর্বোত্তম গুণ। আর মিতব্যয়িতার মাধ্যমেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ তাআলাও অপব্যয়কে বর্জন করে মিতব্যয়ী হওয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। আজ আন্তর্জাতিক মিতব্যয়িতা দিবস। ১৯২৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ দিবসটি পালন করে থাকে। এ দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো- ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণে মিতব্যয়ী হওয়ার প্রতি আত্মসচেতনাবোধ সৃষ্টি করা। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ সঞ্চয় করে। আবার কঠোর পরিশ্রমের হালাল রিজিক ছাড়া ইবাদত-বন্দেগিও কবুল হয় না। তাই সম্পদের অপচয় না করে মিত্যবয়ী হওয়া প্রত্যেক মানুষে একান্ত কর্তব্য। কুরআন হাদিসের অনেক জায়গায় অপব্যয় ও কার্পণ্য ত্যাগ করে মিতব্যয়ী হওয়ার প্রতি গরুত্বারোপ করেছেন। মানুষের জীনবযাত্রায় মিত্যবয়ীর গুণটি খুবই জরুরি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম অবস্থা অবলম্বন করাই হলো মিতব্যয়িতা। তাই কোনো কাজে সীমাহীন ও মাত্রাতিরিক্ত কিছু না করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, ‘আর তোমরা খাবে ও পান করবে, কিন্তু অপচয় করবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করার মাধ্যমে মানুষ যেমন সীমা লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচিত হয় তেমনি সমাজে এর কুপ্রভাব বিস্তার লাভ করে। এর ফলে মানুষ ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। এ বিষয়টি মানুষকে মিতব্যয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘বলেছি, আমার দেয়া পবিত্র বস্তুসমূহ খাও এবং এতে সীমালংঘন করো না, তা হলে তোমাদের ওপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে এবং যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসে সে ধবংস হয়ে যায়। (সুরা ত্বহা : আয়াহ ৮১) তাছাড়া অযথা মাত্রারিক্ত ব্যয় মিতব্যয়ীতার পরিপন্থী এবং পাপের কাজ। মাত্রারিক্ত ব্যয়ের স্বভাব একবার গড়ে ওঠলে তা থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কঠিন। এ অভ্যাস মানুষকে অন্যায় এবং অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনে উদ্বুদ্ধ করে। আর অবৈধ উপায়ে উপার্জন ইসলামে হারাম। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন- ‘হে বনি আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। (সুরা আরাফ : আয়াত ৩১) অপব্যয় থেকে বিরত থেকে মিতব্যয়ী হওয়ার মানে এই নয় যে কৃপনতা করা। ইসলামে মিতব্যয়কে তাগিদ দিয়ে উৎসাহিত করলেও কৃপনতাকে ভৎসনা করেছে। সুরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বদ্ধমুষ্ঠি হওয়া থেকে বিরত থাক এবং একেবারে মুক্তহস্তও হয়ে যেয়ো না; যদি তা হও তবে তুমি তিরস্কৃত ও অনুতপ্ত (নিঃস্ব) হয়ে পড়বে।’ মিতব্যয়িতার মাধ্যমে মানুষ সফলতা লাভ করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিতব্যয়িতার অভ্যাস তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিসে এসেছে, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিতব্যয়িতা অবলম্বন করে, আল্লাহ তাআলা তাকে ধনী বানিয়ে দেবেন, আর যে ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত খরচ করবে, আল্লাহ তাকে গরিব বানিয়ে দেবেন।’ পরিশেষে… অর্থ খরচের তিনটি অবস্থা কার্পণ্য, মিতব্যয় ও অপব্যয়। কার্পণ্য ও অপব্যয়কে ইসলামে নিন্দা জানিয়েছে আর মিতব্যয়কে উৎসাহিত করেছে। এ কারণে মিতব্যয় মধ্যম পন্থা ও উত্তম কাজ। আর অপব্যয় ও কার্পণ্য উভয়টাই নিন্দিত স্বভাব ও গোনাহের কাজ। যারা ইসলামের বিধান পালন করে থাকে তারা অপব্যয় ও কার্পণ্যকে পরিহার করে মিতব্যয়ী হয়। সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে মিতব্যয়িতার প্রতি উৎসাহ করতে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ তুলে ধরে বলেছেন, ‘ ‘তোমরা যদি প্রবহমান নদীর ঘাটেও বসে থাক তবুও পানির অপচয় কর না।’ আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অপচয় ও কৃপণতা পরিহার করে মিতব্যয়ী হওয়ার মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দয্য মানুষের মাঝে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়