Wednesday, November 2

পারিশ্রমিক না পেলে কাজ করবো না: নিরব

পারিশ্রমিক না পেলে কাজ করবো না: নিরব
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি বলিউডে পা রেখেছেন নিরব।  অমিতাভ রেজার নির্মাণে বাংলালিংক দেশ বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। বিজ্ঞাপন, নাটাকের পাশাপাশি সমানতালে অভিনয় করছেন চলচ্চিত্রে। ইতিপূর্বে মুক্তি পেয়েছে প্রায় ২৫টি সিনেমা। মুক্তির মিছিলে আছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রও। চলচ্চিত্র ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ'র সঙ্গে কথা বলেছেন নিরব।

-কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ, সবার দোয়ায় ভালো আছি।

-একটু আগে ডাক্তারের কাছে ছিলেন?
-হ্যাঁ, দাঁতে রুট ক্যানেল করতে হয়েছে। এখনো ডান পাশের মাড়ি অবশ, এনেস্থেশিয়া করেছিল। ডাক্তারের চেম্বার থেকে সোজা এলাম।

-দাঁতে ব্যথা নিয়ে কথা বলতে অসুবিধা হবে না?
-না, দাঁত তো অবশ, ব্যথা পাব কী করে? হাহহা। না কথা বলতে সমস্যা হবে না। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেছি কথা বলতে সমস্যা হবে কি না। ডাক্তার বলেছেন পারবো।

-দেশে এসে দাঁতে অপারেশন করিয়েই আমাকে সময় দিচ্ছেন। আগাম ধন্যবাদ দিয়ে রাখলাম।
-আরে কী বলেন, যাদের ভালোবাসি তাদের জন্য কষ্ট করতে আপত্তি নেই।

-আচ্ছা, কাজের কথায় আসি। আপনার বাল্যবেলা নিয়ে বলুন।
-আমার বাবা বিমান বাহিনীতে জব করতেন। ফলে ছোটবেলা থেকেই ছিলাম সুশৃংখল, নিয়মানুবর্তি। সাত সকালে উঠে নাস্তা করে ক্লাস। সারাদিন ক্লাস, পড়াশুনার ভেতর কাটত। বিকেলে মাঠে যাওয়ার সুযোগ ছিল। সন্ধ্যায় নামায পড়ে পড়তে বসতাম। এই রুটিনেই কেটেছে জীবনের বড় একটা সময়।

-আপনারা কয় ভাই-বোন? আপনার অবস্থান কত?
- আমরা চার ভাই-বোন। এর মধ্যে আমি সবার ছোট। চাচাতো-মামাতে ভাই-বোনদেরে মাঝেও সবার ছোট আমি।

-তাহলে তো বেশ আদরে আদরে বড় হয়েছেন?
-হ্যাঁ, একটু বেশিই আদুরে ছিলাম। পাশাপাশি পেয়েছি কড়া খবরদারী। কারণ সবাই আমার বড়। সুযোগ পেলেই উপদেশ শুনিয়েছে সবাই।

-ছোটবেলার বিশেষ কোন স্মৃতি?
- ছোটবেলার সব স্মৃতিই তো বিশেষ স্মৃতি। তবে একটা কথা ভেবে খুব হাসি পায়। ছোটবেলায় আমার চেহারা ছিল আরো সুন্দর। দেখলেই আদর করে দিতে ইচ্ছে করে, এমন। গাল টিপে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতো না ছোট-বড় আপুরা। আমি ব্যথায় লাল হয়ে যেতাম। তারা যেন এতে আরো মজা পেত।

-আপনার স্কুল জীবন?
-বাবার চাকরির সুবাদে আমার জন্ম ঢাকায় হলেও স্কুলে যাওয়ার বয়স যখন হয় তথন বাবার বদলী হয় চট্রগ্রামে। ফলে চট্রগ্রাম শাহীন স্কুল এন্ড কলেজ আমার প্রথম বিদ্যালয়। এরপর বাবা আবার বদলী হলেন। দ্বিতীয় শ্রেনী থেকে  পড়াশুনা করলাম ঢাকায়। বিএফ শাহীন কলেজ। এই কলেজ থেকেই  এসএসসি ও এইসসি পাশ করেছি। এরপর নিরাপদ কর্মমুখর ভবিষ্যতের আশায় ভর্তি হই এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে। ফার্মেসি বিভাগে।

-মিডিয়ায় যাত্রা কিভাবে?
-সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। হঠাৎ একদিন প্রিয় বন্ধু ডেভিড এর বাসায় গিয়ে দেখি সে ফটোসেশন করে অনেক ছবি তুলেছে। ছবিতে ডেভিডকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিল। তখনই আমার মাথায় ভূত চেপে বসে। ডেভিডের মতো ফটোসেশন করবো। সুন্দর সুন্দর ছবি তুলবো। কিন্তু ফটোসেশনের জন্য চাই সাড়ে চার হাজার টাকা। আমার কাছে এত টাকা ছিল না।  বড় ভাইয়া, আপুদের কাছে আবদার করলাম। আদরের ভাইয়ের সখ বলে কথা। বোন দিল দেড় হাজার টাকা। ভাই একহাজার। বাকিটা নিজে ম্যানেজ করলাম। সে টাকা দিয়ে ফটোগ্রাফার তানভির হোসেনকে দিয়ে ছবি ওঠালাম অনেকগুলো। সে ছবি দেখে একটি ফ্যাশন হাউজের মডেল হওয়ার প্রস্তাব আসে। সেটি ছিল স্টিল ফটোশুট। অভিনেত্রী তিশার সঙ্গে ফটোশুটের অফার লুফে নিতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয় নাই।

-সে সময় পরিবার থেকে কোন চাপ আসেনি?
-না, পরিবারের একটা কথা ছিল- যাই করো ভালো করতে হবে। আর আমার উপর তাদের আস্থা ছিল। ফলে এটা নিয়ে কোন চপে পড়তে হয়নি।

-এরপর?
-২০০৪ সালে র‌্যাম্পে হাঁটা শুরু করি। র‌্যাম্পের সুযোগ মিলেছিল বন্ধু ডেভিডের মাধ্যমেই।  এক মন্ত্রীর আয়োজিত ফ্যাশন শোতে প্রথম র‌্যাম্পে হাঁটা। এরপর দশটির মতো ফ্যাশন শোতে মডেলিং করি। সেগুলোর মধ্যে বাটেক্সপো শো ছিলো অন্যতম। সেসময়  ‘ইউ গট দ্য লুক’ নামে একটি  প্রতিযোগিতার শীর্ষ পাঁচে ছিলাম।

-দেশের মানুষ নিরবকে চিনলো বাংলালিংক দেশ এর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। সেটা নিয়ে বলুন।
-২০০৪ সালের মে মাসের কথা। বন্ধু সুমাইয়ার কথা মতো বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজার অফিসে ছবি জমা দেই। তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে দেখা পাই অমিতাভ রেজার। সেদিন সিভি ও ছবি রেখে দিয়ে বিদায় করে দেন। দরকার পড়লে ডাকবেন। তার কথায় খুব একটা ভরসা পেলাম না। আমাকে অবাক করে দিয়ে সেদিনই বিকেল বেলা হাফস্টপ ডাউন (অমিতাভ রেজার অফিস) থেকে ডাক আসে। ফোন করেছেন অমিতাভ রেজার বোন। একটি কফি কোম্পানির বিজ্ঞাপনের জন্য আমাকে নির্বাচন করলেন। ‘দু টাকা দে, জাগিয়ে দিচ্ছি’ শিরোনামের এই টিভিসি টাই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। ঝলমলে হয়ে জেগে উঠলো আমার ক্যারিয়ার। এই টিভিসির কল্যাণে আরও বেশ কয়েকটি পণ্যের বিজ্ঞাপনের অফার আসতে লাগল। বিজ্ঞাপনে নিয়মিত হয়ে উঠলাম। এরপর আসলো সে সময়ের জনপ্রিয় সেই বিজ্ঞাপন, বাংলালিংক দেশ। অমিতাভ রেজার এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়লো আমার নাম। সবাই চিনতে শুরু করলো। প্রশংসা পেতে থাকলাম।



-নাটকে কিভাবে আগমন?
-মডেলিং করার সুবাদে নাটকে অভিনয়ের অফার আসতে থাকে।  নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছা তখন ছিল না, কিন্তু  অনেকের অনুরোধ ফেলতে পারিনি। এরমধ্যে  চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় ৮টি নাটকে অভিনয় করালাম। এছাড়া চয়নিকা চৌধুরীর ১৩ পর্বের ধারাবাহিক ‘বৈশাখ থেকে শ্রাবণ’ এবং নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের ‘১০১ এন্যালসন নাম্বার’ ধারাবাহিকে অভিনয় করলাম। এছাড়া প্রচুর খন্ড নাটক তো করলামই।

-ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় আগমন যেভাবে?
-ছোট পর্দায় কাজের মধ্য দিয়ে হৃদয়ে একটা স্বপ্ন গেঁথে যায়। বড় পর্দায় কাজ করার। সালমান শাহ্ ছিল আমার ছোটবেলার হিরো। তার ছবি দেখে তার মতো হতে চাইতাম মনে মনে। এরমধ্যে পরিচালক শাহিন সুমনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে। সিনেমায় কাজের। ‘মন যেখানে হৃদয় সেখানে’ চলচ্চিত্রের গল্প পড়ে ভালো লাগলে সাত-পাাঁচ  না ভেবে হ্যাঁ বলে দেই। সেই থেকে শুরু। এক এক করে ইতিমধ্যেই মুক্তি পেয়েছে প্রায় ২৫ টা ছবি। মুক্তির মিছিলে রয়েছে আরো কয়টা।

-বড় পর্দা থেকে বলিউডে কিভবে?
-ভাগ্য আমাকে বলিউডে নিয়ে গেছে। আমি নিজেও ভাবিনি এভাবে এখানে কাজের সুযোগ মিলবে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাবেক স্টাফ কোনাল নামে এক ভদ্রলোকের সাথে আমার দেখা হয় কয়েকবছর আগে। ২০১২ সালের কোন একটা অনুষ্টানে। বাংলাদেশের একটি ফাইভ স্টার হোটেলে। হঠাৎ করে এবার রোজার ভেতর সে আমাকে ফেসবুকে নক করে। ‘নিরব, দিস ইজ কোনাল, উই মিট অ্যাট.. রিমেম্বর?  আমি তাকে ভুলেই গিয়েছিলাম। এখন একজন মানুষকে আমি যদি বলি আপনাকে চিনি নাই কেমন হয় না? আমি বললাম হ্যাঁ কী অবস্থা এই সেই। এরপর সে আমার নাম্বার নিল এবং সাথে সাথেই ইন্ডিয়া থেকে ফোন করলো। ফেসবুকে সে আমার কাজকর্ম দেখেছে বলে জানালো এবং এপিশিয়েট করলো। তখন সে বলল, আমার এক ফ্রেন্ড আছে, ফয়সাল সাইফ। এর আগে বলিউডে তিন চারটা ফিল্ম বানিয়েছে। তোমার ছবি ও কিছু কাজ দেখে ও বেশ পছন্দ করেছে।  ওর একটা ফিল্মে তোমাকে নিতে চায়। তখন কোনালকে বললাম ঠিক আছে ফয়সাল সাইফকে নাম্বার দেন কথা বলে দেখি।

আমি ছিলাম মিরপুর ডিওএইসএসও। ফয়সাল সাইফ ফোন দিল। তখন অনেক চেচামেচি আর ফোনে নেটওয়ার্ক না থাকায় কথা বলা যাচ্ছিল না। আমি তাকে বললাম, আমি তো রাশ এরিয়ায় আছি। রাতে যেন ফোন দেয়।

কাজ শেষ করে বাসায় এসে দেখি ফয়সাল সাইফ তার বেশকিছু কাজ, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয়ত পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ অনেক ডকুমেন্ট হটসঅ্যাপে পাঠিয়েছে। যাতে তাকে ফেইক ভাবতে না পারি।
রাতে ফোনে কথা হলো। সে স্টোরি বলল, প্লানিং জানালো। আর্টিস্ট কে। কোথায় শুট করবে ডিটেইলস জানালো। এরপর আমি পেমেন্টের বিষয়ে কথা তুলি। ডিরেক্টর তখন বলল, ধরে নাও আমি কোন টাকা দেব না। তখন আমি বললাম, তুমি ধরে নাও আমি তাহলে কাজ করবো না। তখন সে বলল, আমরা কাজ করি একসাথে। একটা রিলেশন হোক। তখন তো আরো কাজ করবো সমস্যা হবে না। আমি বলছি না। আমার শ্রমের তো এটা মুল্য আছে। এদেশে কাজ করলে পারিশ্রমিক পাই। সেই সময় দিয়ে তোমার অখানে ফ্রি কাজ করে আমার লাভ কী?
তো এভাবে কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমি বললাম, ঠিক আছে আমি পেমেন্ট নিব না এক শর্তে। সে জানতে চাইলো কী শর্ত? মজা করে বললাম, আমার সাথে কারিনা কাপুরকে কাস্ট করতে হবে। শুনে ফয়সাল হেসে দিল। এবং আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধন্তে আসি। এরপর স্ক্রিপ্ট পাঠাতে থাকে। নানান দিক নিয়ে কথা হয়।

-বলিউডে কাজের অভিজ্ঞতাটা কেমন?
-অভিজ্ঞতা বলতে অনেক কিছু দেখলাম, শিখলাম। ওদের কাজের ধরন আলাদা। কাস্টিং এর ধরন আলাদা। সব ক্ষেত্রে সেরাদের নিয়ে কাজ করে।

-কি নিয়ে বালা? গল্পের ধরণ কেমন?
-বালা মসিবত আছে না? সেই বালাই এই বালা। শিয়া-সুন্নীর কন্ট্রোভার্সি নিয়ে গল্প। এখানে শিয়াদের ভেতরকার ব্ল্যাক ম্যাজিক ও ভৌতিক বিষয় বস্তু নিয়ে চমৎকার একট গল্প সাঁজানো হয়েছে। আমার চরিত্র সিবিআই অফিসার। ভৌতিক কিছু ঘটনায় তাল-বেতাল হারানো একটা  পারিবারের কাহিনি নিয়ে বালা। গল্পের নান্দনিক উপস্থাপা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

-ভাষা কোন সমস্যা হয়েছে কী না?
-ভাষা একটু সমস্যা হয়েছে। তবে ফয়সাল সাহেব আমার ডিরেক্টর সে সব হেল্প করেছে। পুরো স্ক্রিপ্টটা হিংলিশে পাঠিয়েছিল আমাকে। মানে হিন্দি+ইংলিশ।

-এ ছাড়া আর কী সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছে?
-খাবার নিয়ে চরম সমস্যায় ছিলাম। ওখানকার খাবারে না আছে স্বাদ, না আছে গন্ধ। সব মিলিয়ে যে কয়দিন ছিলাম হয়তো  স্নাকস বা মিট খাচ্ছি। সেটা ভালো। কিন্তু ভাতের সাথে তরকারির যে স্বাদ সেটা ভিষণভাবে মিস করেছি। ২৬ দিন ভাত ছাড়া টেস্টলেস খাবার খাওয়া যে কী কষ্টের।

-জাতীয়তা নিয়ে কোন সমস্যা হয়েছে কী না? অন্য দেশে কাজ করছেন। সে দেশের মানুষ কিভাবে নিল?
-এটা আসলে অকল্পনীয় ছিল। ফয়সাল সাহেব আমাকে যেভাবে ট্রিট করেছে, অনেক সময় এ দেশেও সেভাবে আমাদের ট্রিট করা হয় না। আমাকে একটা দিন মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতে দেয় নাই। সব বিষয়ে আমাকে অনেক প্রধান্য দিয়েছে।

-বালা আমরা কবে পাচ্ছি?
-শুটিং তো শেষ। সম্পাদনাও প্রায় শেষের দিকে। সব মিলিয়ে আগামী মার্চের দিকে মুক্তি দেওয়ার চিন্তাভাবনা নিয়ে আগাচ্ছে পরিচালক।

- দেশে এখন কী কাজ করছেন?
-মমর সাথে ভালোবেসে তোর হবো ছবির কাজ করছি। গ্যাংস্টার রিটার্ন ছবি শেষ করলাম। আরো কয়েকটা ছবির কাজ হাতে আছে।

-ধন্যবাদ নিরব, আপনার জন্য শুভ কামনা।
-ধন্যবাদ, প্রতিদিনের সংবাদ ও তার পাঠকদের জন্য রইলো ভালোবাসা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়