Tuesday, October 18

ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক ও মুক্তির উপায়

ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক ও মুক্তির উপায়

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: এখন ফল থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, শাক সবজি, এমনকি দুধে পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে ফরমালিন। যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন অবিক্রীত রেখে বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য এই রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।

ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও মিথানল থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে প্রথমে ফরমালডিহাইড এবং পরে ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। দুটোই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক-

১) ফরমালিন ও অন্যান্য কেমিক্যাল সামগ্রী সব বয়সী মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে। ফরমালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল এবং বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। কিডনি, লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা দিন দিন কমছে।

২) ফরমালিনের মাত্রা বেশি থাকলে খাওয়ার পর পরই মানুষের শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে। গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে ও প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।

৩) বৃক্ক, যকৃত, ফুলকা ও পাকস্থলী সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। লিভারেও সমস্যা হতে পারে । দেখা যাচ্ছে, কয়েক দিন পরপর একই রোগী ডায়রিয়ায় ভুগছেন, পেটের পীড়া ভালো হচ্ছে না, চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

৪) শিশুদের দৈহিক স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়াও ফরমালিনের ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

৫) অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে।

৬) তাৎক্ষণিকভাবে ফরমালিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কারবাইডসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে।

ফরমালিন দূর করতে-

১) সবজি রান্না করার আগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট গরম পানির মাঝে বেশ খানিকটা লবণ মিশিয়ে তাতে ডুবিয়ে রাখুন। পানিটা সম্পূর্ণ ফেলে দিয়ে আবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

২) ফল খাওয়ার সময় কমপক্ষে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে। আপেল জাতীয় ফলের ক্ষেত্রেও খোসা ছিলে তারপর খান।

৩) ১ ঘন্টার বেশি সময় মাছ/মাংস পানিতে ডুবিয়ে রাখলে শতকরা ৬০ ভাগ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যায়।

৪) প্রথমে চাল ধোয়া পানিতে মাছ ভিজিয়ে রাখুন ঘণ্টা খানেক। তারপর সাধারণ পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিলে ৭০ ভাগ ফরমালিন দূর হয়।

৫) ভিনেগার ও পানি একসাথে মিশিয়ে ১৫ মিনিট মাছ/মাংস ডুবিয়ে রাখলে শতকরা ১০০ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যায়।

৬) শুটকি মাঝে প্রচুর ফরমালিন দেয়া হয়। এই ব্যাপার থেকে মুক্তি পেতে শুটকি মাছ প্রথমে গরম পানিতে একঘণ্টা, তারপর স্বাভাবিক পানিতে আরও এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। ফরমালিন মুক্ত হবার পাশাপাশি স্বাদও বাড়বে।

৭) আগুনের তাপে ফরমালিন অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই রান্নার আগে ফরমালিন কমানোর পদ্ধতি ব্যবহার করে রান্না করলে খাবার পুরোপুরি ফরমালিন মুক্ত করা সম্ভব।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়