Sunday, September 25

ঢাবি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গিনিপিগ হল কমিটি


শামসুদ্দোহা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে আরও চার মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো গঠন করা হয়নি তাদের অধীন ঢাবির হল কমিটিগুলো। কবে গঠিত হবে তা নিয়েও আছে বিভ্রান্তি। কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি গঠনের পর দ্রুততম সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ হল কমিটি গঠনের কথা থাকলেও সেটি হয়নি। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা ও ক্ষোভ। এবারই যে এমনটি হয়েছে তা নয়। অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে বরাবরই হল কমিটি গঠনে বিলম্ব করে অভিভাবক সংগঠন ঢাবি ছাত্রলীগ। তা ছাড়া আছে পছন্দের প্রার্থী ও নিজের অবস্থান পোক্ত করার কৌশল। হল কমিটি যেন ঢাবি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের গিনিপিগ। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলাগুলোর মধ্যে কেন্দ্রের পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু কমিটি গঠনের ব্যাপারে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনই যেন ঢাবি শাখার নিয়ম। সর্বশেষ কবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি দেয়া হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই সংগঠনের খোদ সাবেক ও বর্তমান নেতাদের। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার মাস খানেক আগে ২০১৫ সালের ১৮ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আংশিক নতুন কমিটি করা হয়। এর নেতৃত্বে আসেন সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসাইন প্রিন্স। এ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগে ঢাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়। আগের কমিটির আদলে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাবি ছাত্রলীগের এ কমিটির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে দুই মাস অতিক্রম করলেও হল কমিটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি ঢাবি ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। তারা বলছেন, নানা ব্যবস্ততার কারণে এত দিন হল কমিটি দিতে পারেননি। তবে শিগগিরই সেটি করবেন তারা। জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাংগঠনিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় এখনো কমিটি গঠন করা হয়ে ওঠেনি। তবে আশা করি সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বা অক্টোবরের প্রথম দিকে কমিটি দিতে পারব।’ কমিটি গঠনে বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে আবিদ বলেন, ‘সংগঠন নিয়ে আমাদের ভাবনা আছে। হুট করে কমিটি না দিয়ে আমরা চাই যোগ্য ও বিশ্বস্তদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতে।’ তবে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতির বক্তব্যের সঙ্গে মিল নেই সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসাইন প্রিন্সের। হল কমিটির বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে প্রিন্স বলেন, এ বছরের যেকোনো সময় কমিটি দেয়া হবে। সেটা ডিসেম্বর মাসও হতে পারে। এর আগে ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি মেহেদী হাসান মোল্লা ও ওমর শরিফ কমিটি নির্ধারিত মেয়াদ শেষে আরো এক বছর পর ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল হল কমিটি দিয়েছিলেন। সেবার মোল্লা-শরীফ কমিটি ছিল এক বছরের জায়গায় চার বছর। কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি গঠনের পর দ্রুততম সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ হল কমিটি গঠনের আশা করেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু বরাবরই হতাশ হন তারা। হল কমিটি গঠিত হয় ঢাবি শাখা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার বছর পরে। নিজেদের মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়ার জন্যই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও হল কমিটি গঠনে বিলম্ব করা হয় বলে অভিযোগ সংগঠনটির সাবেক নেতাকর্মীদের। আরো অভিযোগ রয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের উদাসীনতা ও কোনো কোনো নেতার আধিপত্য স্থায়ী করার কৌশল হিসেবেই হল কমিটি গঠনে বিলম্ব করা হয়। কমিটি গঠন না হওয়ার আর একটি প্রধান কারণ, কেন্দ্রীয় নেতার মনঃপুত হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নেতার মনঃপুত হয় না, আবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নেতার মন পেলে কেন্দ্রীয় নেতার মন পায় না। এভাবেই কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে হিসাব-নিকাশ। কেন্দ্র ও ঢাবি কমিটির নেতাদের এমন টানাপোড়েনের কারণে হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী উদীয়মান ছাত্রনেতাদের মধ্যে যেমন হতাশা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ক্ষোভও। সৃষ্টি হচ্ছে অন্তঃকোন্দল, দলাদলি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ‘শক্ত’ অবস্থানের এই সময়কালে নির্ধারিত সময়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি হবে বলেই আশা করেছিলেন হল কমিটির পদপ্রত্যাশীরা। কিন্তু তা আর হয়নি। অন্যবারের মতোই নানা অজুহাতে গুরুত্বপূর্ণ এই শাখা কমিটি গঠন মুখের বুলিতেই আটকে আছে। কমিটি গঠনে বিলম্বের কারণে কর্মী ও পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে নানা সময় ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও পদবঞ্চিত হওয়ার ভয়ে তা চাপা রাখেন নিজেদের মধ্যে। হল শাখায় পদপ্রত্যাশী একজন বলেন, ‘কমিটি কবে হবে জানি না। তবে দেরি হলে দ্বন্দ্বই কেবল বাড়বে। দ্রুতই কমিটি দিয়ে দেয়া উচিত।’ ছাত্রলগের বিভিন্ন হল সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতাদের পছন্দসই প্রার্থী বাছাই ও ‘ভাইতন্ত্র’ বজায় রাখতে গিয়ে বরাবরই কমিটি গঠনের উদ্যোগ থমকে যাচ্ছে। এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় হলগুলোতে বাড়ছে নানা গ্রুপ, উপগ্রুপ। তৈরি হচ্ছে নানা সংকট, সমস্যা আর নিত্যনতুন সংঘাত। কমিটি না থাকায় চলছে নেতৃত্বশূন্যতা। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। তার পরও হল কমিটি কবে গঠিত হবে, কিংবা আদৌ হবে কি না– এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে বিভ্রান্তি আর হতাশা। ---ঢাকাটাইমস

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়