কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: মাছ
চাষ ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অনন্য অবদানের জন্য ২০১৬ সালে জাতীয় মৎস্য
পুরস্কার পেয়েছেন ২০ জন। এরমধ্যে স্বর্ণপদক পেয়েছেন ৫ জন, আর রৌপ্যপদক
পেয়েছেন ১৫ জন।
ফিশারিতে মাছ চাষ করে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে দেশের লক্ষাধিক মানুষ। আর মাছ চাষের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। বর্তমানে স্থানীয় বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ক্রমাগত ফিশারির সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়াও স্বাধীনতা পরবর্তী ফিশারিজ থেকে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ১.৬ গুণ। দেশে প্রতিনিয়তই মাছ চাষের সম্প্রসারণ ঘটছে।
তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছের চাষাবাদে পিছিয়ে আছে দেশ। এক্ষেত্রে গুণগতমানের হ্যাচারির অপর্যাপ্ততা ও চাষের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করাকে দায়ী করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ এ্যান্ড এ্যাকোয়াকালচার-২০১৬’ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ফিশারিজ পদ্ধতিতে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। মৎস্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশের প্রায় ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষ কোন না কোনভাবে মৎস্য চাষ ও মৎস্য সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে প্রায় ১৪ লাখ নারী মৎস্য খাতের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিগত ৭ বছরে মৎস্য খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অতিরিক্ত প্রায় ৬ লক্ষাধিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে বদ্ধ জলাশয়ের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬১ হেক্টর। উন্মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ ৩৯ লাখ ৬ হাজার ৪৩৪ হেক্টর। জানা গেছে, দেশে মোট হ্যাচারির সংখ্যা ৯৪৬। এর মধ্যে সরকারী মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারের সংখ্যা ১৩৬। আর বেসরকারী মৎস্য হ্যাচারির সংখ্যা ৮৬৮। মোট ফিশারির সংখ্যা জানা না গেলেও মৎস্য অধিদফতর ও মৎস্য বিশেষজ্ঞদের দাবি দেশে দিনদিন বাড়ছে ফিশারির সংখ্যা।
মৎস্য অধিদফতরের ২০১৪-১৫ সালের তথ্যমতে, দেশে মৎস্য চাষীর সংখ্যা ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকেও অনেকেই এগিয়ে এসেছেন মাছ চাষে। তালিকায় যেমন রয়েছেন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তেমনি পল্লী চিকিৎসক। চাষীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মাছের উৎপাদন। ২০০৮-০৯ সালে ২৭ দশমিক শূন্য ১ লাখ মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন হলেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ৮৪ লাখ মেট্রিক টনে। আর সরকারের টার্গেট ২০২১ সালের মধ্যে তা ৪৫ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীতকরণের।
মাছ চাষের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন ওয়াহিদা হক বলেন, ‘বাজারে যেসব মাছ পাওয়া যায় তার অধিকাংশই চাষের মাছ। নিঃসন্দেহে বলা যায়, দেশে মাছ চাষের সম্প্রসারণ ঘটেছে। মাছ চাষের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনেকটা সম্প্রসারিত হলেও সব সময় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।’
আর মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক রিপন বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশে মাছ উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ফিশারিজে মাছের উৎপাদন কমেছে, বেড়েছে এ্যাকোয়াকালচারে। সাদা মাছ চাষের মাধ্যমে মাছের উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।
মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আকরামুল ইসলাম বলেন, মাছ চাষের নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। অবলুপ্ত মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করাই আমাদের মূল কাজ। অনেক সময় দেখা যায় টাকা আছে কিন্তু নির্দিষ্ট মাছ পাওয়া যাচ্ছে না; সেসব মাছের উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায়, কৃষক যাতে সেসব মাছ ক্রয়ে আগ্রহী হয়, সে লক্ষ্যে নানাভাবে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলছি।
মাছ চাষে যোগাযোগ ব্যবস্থাই প্রধান হাতিয়ার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পন্ন এলাকায় মাছ চাষের সম্প্রসারণ ঘটে না। এছাড়া গুণগত মানের হ্যাচারির অভাব, মাছের খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। মাছ চাষের প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জের মাছ চাষী খায়রুল বলেন, এলাকায় বড় বাজার নেই। স্বল্প জায়গার কাছারি বাজারে দাঁড়িয়ে মাছ বিক্রি করতে হয়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে দ্রুত সময়ে একটি বড় বাজার করে করে দেয়ার। এছাড়া মাছ বিক্রিতে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। আমাদের যে মাছ ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়, তারা সেই মাছ ১০০ টাকায় বিক্রি করে। এছাড়া মাছের প্রজেক্টে বিদ্যুত সংযোগের স্বল্পতা রয়েছে। আমার একটি প্রজেক্ট বিদ্যুত সংযোগ ছাড়াই চলছে। সরকারের কাছে দাবি, মাছ চাষকে জনপ্রিয় করে তুলতে বিদ্যুত প্রাপ্তি যেন সহজলভ্য করে দেয়া হয়।
প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভর (এডিআই) কুমিল্লা অঞ্চলের মৎস্য কর্মকর্তা আকরামুল ইসলাম বলেন, দেশে গুণগত মানের হ্যাচারির অভাব রয়েছে। ফলে মাছ চাষীদের পক্ষে অনেক সময় মানসম্পন্ন মাছের পোনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া মাছের খাদ্যের মূল্যের উর্ধ্বগতি, কারেন্ট জালের ব্যবহার ও বিভিন্ন জলাশয় ভরাটের কারণে কোন কোন অঞ্চলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক রিপন বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ কাজে নিয়োজিত জনবল যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞানভিত্তিক মাছ চাষ এগিয়ে নেয়ার জন্যও জনবল অত্যন্ত কম। মাছের খাদ্য বা খাদ্য উপকরণ পরীক্ষার জন্য মৎস্য অধিদফতরের কোন পরীক্ষাগার নেই। মাছের খাদ্যের দাম বেড়ে চলছে। কৃষিক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিলেও মাছের খাদ্যে কোন ভর্তুকি দেয়া না। এছাড়া মাছ চাষ বাণিজ্যিক খাত না কৃষির উপখাত তা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। ফলে মাছ চাষীদের ঋণ প্রাপ্তিতেও দেখা দেয় নানা সমস্যা।
মাছ চাষের মাধ্যমে দেশে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাড়ছে রফতানি আয়। স্বাধীনতা পরবর্তী মৎস্য ও মৎসজাত দ্রব্য রফতানি করে আয় বেড়েছে বহুগুণ। তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ সালে মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য রফতানি হয়েছে ৮৩ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন। আর বছরটিতে রফতানিকৃত দ্রব্যের অর্থমূল্য ছিল ৪৪৬ কোটি টাকা। শুধু রফতানি আয়ই নয়, মাছ চাষের মাধ্যমে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। বহু শিক্ষিত যুবক মাছ চাষকে পেশা হিসেবেও গ্রহণ করেছেন। মৎস্য কর্মকর্তা আকরাম বলেন, দেশে দিন দিন মাছ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। মাছ একদিকে যেমন আমিষের অভাব পূরণ করছে তেমনি মাছ চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূর হয়েছে। অর্জিত হচ্ছে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা, যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
মাছ চাষে সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন ওয়াহিদা হক বলেন, সম্ভাবনা অবশ্যই ভাল বলতে হবে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকলে ভবিষ্যতে এ খাতে আরও সাফল্য আসবে।
সামগ্রিক প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, মাত্র ৭ বছরে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১০ লাখ টন, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। ফিশারিজেও বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ৬ এর কাছাকাছি। দেশে প্রায় ২৮ লাখ পুকুর আছে, যার মধ্যে মাত্র ১ শতাংশে বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষ হয়। বাকিগুলোতে প্রচলিত বা সনাতন পদ্ধতিতে মাছের চাষ হয়ে আসছে। সর্বোপরি মাছের উৎপাদনে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রসার ঘটছে ফিশারিজের। মৎস্য খাতের প্রতিবন্ধকতা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণে আমরা অত্যন্ত পিছিয়ে আছি। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার মতো ট্রলার নেই।
ফিশারিতে মাছ চাষ করে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে দেশের লক্ষাধিক মানুষ। আর মাছ চাষের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। বর্তমানে স্থানীয় বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ক্রমাগত ফিশারির সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়াও স্বাধীনতা পরবর্তী ফিশারিজ থেকে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ১.৬ গুণ। দেশে প্রতিনিয়তই মাছ চাষের সম্প্রসারণ ঘটছে।
তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছের চাষাবাদে পিছিয়ে আছে দেশ। এক্ষেত্রে গুণগতমানের হ্যাচারির অপর্যাপ্ততা ও চাষের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করাকে দায়ী করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ এ্যান্ড এ্যাকোয়াকালচার-২০১৬’ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ফিশারিজ পদ্ধতিতে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। মৎস্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশের প্রায় ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষ কোন না কোনভাবে মৎস্য চাষ ও মৎস্য সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে প্রায় ১৪ লাখ নারী মৎস্য খাতের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিগত ৭ বছরে মৎস্য খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অতিরিক্ত প্রায় ৬ লক্ষাধিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে বদ্ধ জলাশয়ের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬১ হেক্টর। উন্মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ ৩৯ লাখ ৬ হাজার ৪৩৪ হেক্টর। জানা গেছে, দেশে মোট হ্যাচারির সংখ্যা ৯৪৬। এর মধ্যে সরকারী মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারের সংখ্যা ১৩৬। আর বেসরকারী মৎস্য হ্যাচারির সংখ্যা ৮৬৮। মোট ফিশারির সংখ্যা জানা না গেলেও মৎস্য অধিদফতর ও মৎস্য বিশেষজ্ঞদের দাবি দেশে দিনদিন বাড়ছে ফিশারির সংখ্যা।
মৎস্য অধিদফতরের ২০১৪-১৫ সালের তথ্যমতে, দেশে মৎস্য চাষীর সংখ্যা ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকেও অনেকেই এগিয়ে এসেছেন মাছ চাষে। তালিকায় যেমন রয়েছেন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তেমনি পল্লী চিকিৎসক। চাষীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মাছের উৎপাদন। ২০০৮-০৯ সালে ২৭ দশমিক শূন্য ১ লাখ মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন হলেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ৮৪ লাখ মেট্রিক টনে। আর সরকারের টার্গেট ২০২১ সালের মধ্যে তা ৪৫ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীতকরণের।
মাছ চাষের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন ওয়াহিদা হক বলেন, ‘বাজারে যেসব মাছ পাওয়া যায় তার অধিকাংশই চাষের মাছ। নিঃসন্দেহে বলা যায়, দেশে মাছ চাষের সম্প্রসারণ ঘটেছে। মাছ চাষের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনেকটা সম্প্রসারিত হলেও সব সময় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।’
আর মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক রিপন বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশে মাছ উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ফিশারিজে মাছের উৎপাদন কমেছে, বেড়েছে এ্যাকোয়াকালচারে। সাদা মাছ চাষের মাধ্যমে মাছের উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।
মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আকরামুল ইসলাম বলেন, মাছ চাষের নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। অবলুপ্ত মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করাই আমাদের মূল কাজ। অনেক সময় দেখা যায় টাকা আছে কিন্তু নির্দিষ্ট মাছ পাওয়া যাচ্ছে না; সেসব মাছের উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায়, কৃষক যাতে সেসব মাছ ক্রয়ে আগ্রহী হয়, সে লক্ষ্যে নানাভাবে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলছি।
মাছ চাষে যোগাযোগ ব্যবস্থাই প্রধান হাতিয়ার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পন্ন এলাকায় মাছ চাষের সম্প্রসারণ ঘটে না। এছাড়া গুণগত মানের হ্যাচারির অভাব, মাছের খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। মাছ চাষের প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জের মাছ চাষী খায়রুল বলেন, এলাকায় বড় বাজার নেই। স্বল্প জায়গার কাছারি বাজারে দাঁড়িয়ে মাছ বিক্রি করতে হয়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে দ্রুত সময়ে একটি বড় বাজার করে করে দেয়ার। এছাড়া মাছ বিক্রিতে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। আমাদের যে মাছ ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়, তারা সেই মাছ ১০০ টাকায় বিক্রি করে। এছাড়া মাছের প্রজেক্টে বিদ্যুত সংযোগের স্বল্পতা রয়েছে। আমার একটি প্রজেক্ট বিদ্যুত সংযোগ ছাড়াই চলছে। সরকারের কাছে দাবি, মাছ চাষকে জনপ্রিয় করে তুলতে বিদ্যুত প্রাপ্তি যেন সহজলভ্য করে দেয়া হয়।
প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভর (এডিআই) কুমিল্লা অঞ্চলের মৎস্য কর্মকর্তা আকরামুল ইসলাম বলেন, দেশে গুণগত মানের হ্যাচারির অভাব রয়েছে। ফলে মাছ চাষীদের পক্ষে অনেক সময় মানসম্পন্ন মাছের পোনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া মাছের খাদ্যের মূল্যের উর্ধ্বগতি, কারেন্ট জালের ব্যবহার ও বিভিন্ন জলাশয় ভরাটের কারণে কোন কোন অঞ্চলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক রিপন বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ কাজে নিয়োজিত জনবল যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞানভিত্তিক মাছ চাষ এগিয়ে নেয়ার জন্যও জনবল অত্যন্ত কম। মাছের খাদ্য বা খাদ্য উপকরণ পরীক্ষার জন্য মৎস্য অধিদফতরের কোন পরীক্ষাগার নেই। মাছের খাদ্যের দাম বেড়ে চলছে। কৃষিক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিলেও মাছের খাদ্যে কোন ভর্তুকি দেয়া না। এছাড়া মাছ চাষ বাণিজ্যিক খাত না কৃষির উপখাত তা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। ফলে মাছ চাষীদের ঋণ প্রাপ্তিতেও দেখা দেয় নানা সমস্যা।
মাছ চাষের মাধ্যমে দেশে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাড়ছে রফতানি আয়। স্বাধীনতা পরবর্তী মৎস্য ও মৎসজাত দ্রব্য রফতানি করে আয় বেড়েছে বহুগুণ। তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ সালে মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য রফতানি হয়েছে ৮৩ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন। আর বছরটিতে রফতানিকৃত দ্রব্যের অর্থমূল্য ছিল ৪৪৬ কোটি টাকা। শুধু রফতানি আয়ই নয়, মাছ চাষের মাধ্যমে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। বহু শিক্ষিত যুবক মাছ চাষকে পেশা হিসেবেও গ্রহণ করেছেন। মৎস্য কর্মকর্তা আকরাম বলেন, দেশে দিন দিন মাছ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। মাছ একদিকে যেমন আমিষের অভাব পূরণ করছে তেমনি মাছ চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূর হয়েছে। অর্জিত হচ্ছে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা, যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
মাছ চাষে সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন ওয়াহিদা হক বলেন, সম্ভাবনা অবশ্যই ভাল বলতে হবে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকলে ভবিষ্যতে এ খাতে আরও সাফল্য আসবে।
সামগ্রিক প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, মাত্র ৭ বছরে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১০ লাখ টন, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। ফিশারিজেও বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ৬ এর কাছাকাছি। দেশে প্রায় ২৮ লাখ পুকুর আছে, যার মধ্যে মাত্র ১ শতাংশে বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষ হয়। বাকিগুলোতে প্রচলিত বা সনাতন পদ্ধতিতে মাছের চাষ হয়ে আসছে। সর্বোপরি মাছের উৎপাদনে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রসার ঘটছে ফিশারিজের। মৎস্য খাতের প্রতিবন্ধকতা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণে আমরা অত্যন্ত পিছিয়ে আছি। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার মতো ট্রলার নেই।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়