কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: নতুন
কমিটি নিয়ে ফিনিক্স পাখির মতো ওড়া তো দূরের কথা, শুরুতেই হোঁচট খেল
বিএনপি। দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল কেন্দ্রীয় নির্বাহী
কমিটি গঠনের পরপরই দ্রুততম সময়ে বিএনপি জনগণের সামনে নতুনভাবে আবির্ভূত
হবে, নিদেনপক্ষে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের ঘোষণা আসবে। দলীয় চেয়ারপারসন
রাজপথের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হবেন। কিন্তু এসব প্রত্যাশার রঙ
শুরুতেই ফিকে হতে বসেছে।
কমিটি গঠন-পরবর্তী ক্ষোভ-অসন্তোষ নিয়ে দলটিকে বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। বিশেষ করে দলের কিছু ত্যাগী ও হাইপ্রোফাইল নেতার যথাযথ প্রাপ্তিযোগ না হওয়ায় নানা শংকা তৈরি হয়েছে। অনেকে দল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে না বললেও তাদের নিয়ে কানাঘুষার শেষ নেই।
আর রাজপথের প্রধান বিরোধী দলের কমিটি গঠন-পরবর্তী হিসাব-নিকাশ নিয়ে এই যখন সারমর্ম তখন দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের ক্ষোভ-হতাশার অন্ত নেই। সূত্র বলছে, দলটির বেশির ভাগ নেতাকর্মীর নতুন কর্মসূচি নিয়ে চরম প্রত্যাশা থাকলেও আপাতত তার দেখা মিলছে না।
এমনকি নতুন নির্বাহী কমিটির কোনো বৈঠকও সহসা হওয়ার আভাস নেই। ওদিকে কমিটিতে ঠাঁই না হওয়া কিংবা যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার ক্ষোভের আগুন এখন আর ছাইচাপা থাকছে না। রূপ নিচ্ছে প্রকাশ্যে। সোমবার দলীয় কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এর প্রকাশ্য রূপ দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, গেল মার্চে বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হওয়ার প্রাক্কালে বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব (বর্তমান মহাসচিব) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কাউন্সিলের পর বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু মহাসচিবের বিপুল প্রত্যাশা তৈরির সেই বক্তব্য এখন অনেকটা স্বপ্ন বিলাসে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অনেকে তেমনটি মনে করেন।
তারা বলছেন, ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণার দিন নবগঠিত কমিটিকে ‘ভাইব্রেন্ট ও ডায়নামিক’ কমিটি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রশ্ন হল- কমিটি নিয়ে মহাসচিবের এত বিশেষণ শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নেবে তো, না মুখের কথা কিংবা কাগুজে শব্দে পরিণত হবে। সে রকম কিছু হলে ভবিষ্যতে কোনো বিশেষণ শব্দ আর কাজে দেবে না।
এদিকে সূত্র জানায়, কমিটি গঠন-পরবর্তী বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় রোববার রাতে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে সৃষ্ট সংকট নিরসনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, দলকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে কমিটি গঠন-পরবর্তী মান-অভিমানের সংকট দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। এরপর দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নতুন নির্বাহী কমিটিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। এর কোনো বিকল্প পথ নেই।
জানা গেছে, কমিটি ঘোষণার একদিন পর রোববার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা শুরুতেই খালেদা জিয়াকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয়ার জন্য অভিনন্দন জানান।
নতুন কমিটি ঘোষণা ও নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে আকার ইঙ্গিতে কথা বলেন তারা। দলের সিনিয়র এসব নেতা খালেদা জিয়াকে বলার চেষ্টা করেন, কমিটিতে যদি সবার মতামত নেয়া হতো- তাহলে এত সমালোচনা হতো না। তবে যা হওয়ার হয়েছে, এখন নতুন কমিটির নেতাদের নিয়ে ঘন ঘন বৈঠক করতে তারা চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দেন।
দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরব যাবেন। এর আগে চলতি মাসের ২৫ অথবা ২৬ তারিখ তিনি নবঘোষিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাহী কমিটি বা উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়ে এখনই বৈঠক হচ্ছে না। তবে হজ পালন শেষে দেশে ফেরার পর বিএনপি চেয়ারপারসন অন্যান্য কমিটির বৈঠক ডাকবেন বলে জানা গেছে।
কমিটি নিয়ে দলের সমালোচনা বলছেন, সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে ‘বিশাল আকারে’ ঢাউস মার্কা কমিটি ঘোষণা করা হয়। ফলে স্বস্তির পরিবর্তে অস্বস্তির পাল্লা ভারি হয়েছে। প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম পদত্যাগ করেছেন।
বিএনপির নতুন কমিটিতে স্থান না হওয়ায় জিয়া পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনের সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহার। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আরও সময় নিয়ে নতুন কমিটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিশেষ সম্পাদক, সহ-সম্পাদক এবং সদস্যপদ থেকে প্রায় অর্ধশত নেতা দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় বা দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিতে পারেন।
পদ পেলেও কমিটির ক্রমবিন্যাসে জুনিয়র সিনিয়রের ওপরে চলে যাওয়ায় স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যও ক্ষুব্ধ বলে তারা জানিয়েছেন। নতুন কমিটিতে পদ দেয়া হয়নি সংস্কারপন্থীদের। সেক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ ও সংস্কারপন্থী নেতারা সুযোগ পেলে দলে ভাঙনও ধরতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।
তারা বলেন, শুধু দলের এসব নেতাই নন, কমিটি দেখার পর ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। প্রতিনিধির মাধ্যমে পাঠানো তার তালিকাও কাটছাঁট করা হয়েছে। দলের দফতর সাজানোর ক্ষেত্রে তারেক রহমানের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।
এসব নিয়ে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন তারেক রহমান। সূত্র জানায়, দলের হাইকমান্ড তারেক রহমানের পরামর্শ ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে দলের দফতরে একজন সম্পাদক এবং একজন সহ-দফতর সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হতে পারে। তবে দফতরের একজনকে সরিয়ে অন্য কোনো পদে দেয়া হতে পারে।
এদিকে সোমবারও বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হাতেগোনা কয়েকজন নেতা ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। রোববার কার্যালয় প্রায় ফাঁকাই ছিল। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকায় গতকালও ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোর বিভিন্ন স্থানে নতুন কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কোনো মিছিল বের হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
বরং কমিটিতে স্থান না হওয়ায় যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএম জিলানী সোমবার সাড়ে ১০টার দিকে তার অর্ধশতাধিক সমর্থক নিয়ে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন এসএম জিলানী। কিছুক্ষণ অবস্থান করে জিলানী তার সমর্থকদের নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কার্যালয় ত্যাগ করেন।
শুধু এখানে শেষ নয়, কমিটি ঘোষণার পর অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, ২৫টি ভুঁইফোড় সংগঠনের সমন্বয়ে ‘বিএনপি’র সহযোগী সংগঠন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে একটি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়। বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে স্থান না হওয়ায় তারাও জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। যদিও বিএনপির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের হস্তক্ষেপে তারা তাদের সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেন।
জানা গেছে, নতুন কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের স্থান দেয়া হতে পারে। এখনও স্থায়ী কমিটির দুটি এবং নির্বাহী কমিটির ছয়টি পদ ফাঁকা আছে। সেক্ষেত্রে ঘোষিত নির্বাহী কমিটিতে যেসব নেতা শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাদের সরিয়ে দেয়া হতে পারে। আর অঙ্গসংগঠন এবং বিএনপির জেলা মহানগর কমিটি গঠনে এক নেতার এক পদ কার্যকর করা হলে আরও বেশ কিছু কেন্দ্রীয় পদ ফাঁকা হবে।
সব মিলিয়ে নতুন কমিটিতে ৩০-৩৫টি পদ ফাঁকা হতে পারে। এসব পদেই বঞ্চিতদের স্থান দেয়া হতে পারে। তবে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে নিয়োগ দেয়ার আগে ওয়ান-ইলেভেনে পুরো বিষয়টি বিবেচনায় আনা হতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, সামনে যে সময় আসছে, সেটা বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য ভালো সময় নয়। তখন কার কি ভূমিকা হবে সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে। একবার যারা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তারা যে আবারও সুযোগ এলে নেবেন না তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ঘোষিত কমিটিতে অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদের যদি সম্মানের সঙ্গে নির্বাহী কমিটি থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং এক নেতার এক পদ কার্যকর করা হলে অনেক পদই শূন্য হবে। এসব শূন্য পদে বঞ্চিত যোগ্যদের কমিটিতে স্থান করে দিলে এসব ক্ষোভ থাকবে না বলে মনে করেন এ বিএনপি নেতা।
সূত্র: যুগান্তর
কমিটি গঠন-পরবর্তী ক্ষোভ-অসন্তোষ নিয়ে দলটিকে বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। বিশেষ করে দলের কিছু ত্যাগী ও হাইপ্রোফাইল নেতার যথাযথ প্রাপ্তিযোগ না হওয়ায় নানা শংকা তৈরি হয়েছে। অনেকে দল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে না বললেও তাদের নিয়ে কানাঘুষার শেষ নেই।
আর রাজপথের প্রধান বিরোধী দলের কমিটি গঠন-পরবর্তী হিসাব-নিকাশ নিয়ে এই যখন সারমর্ম তখন দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের ক্ষোভ-হতাশার অন্ত নেই। সূত্র বলছে, দলটির বেশির ভাগ নেতাকর্মীর নতুন কর্মসূচি নিয়ে চরম প্রত্যাশা থাকলেও আপাতত তার দেখা মিলছে না।
এমনকি নতুন নির্বাহী কমিটির কোনো বৈঠকও সহসা হওয়ার আভাস নেই। ওদিকে কমিটিতে ঠাঁই না হওয়া কিংবা যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার ক্ষোভের আগুন এখন আর ছাইচাপা থাকছে না। রূপ নিচ্ছে প্রকাশ্যে। সোমবার দলীয় কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এর প্রকাশ্য রূপ দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, গেল মার্চে বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হওয়ার প্রাক্কালে বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব (বর্তমান মহাসচিব) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কাউন্সিলের পর বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু মহাসচিবের বিপুল প্রত্যাশা তৈরির সেই বক্তব্য এখন অনেকটা স্বপ্ন বিলাসে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অনেকে তেমনটি মনে করেন।
তারা বলছেন, ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণার দিন নবগঠিত কমিটিকে ‘ভাইব্রেন্ট ও ডায়নামিক’ কমিটি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রশ্ন হল- কমিটি নিয়ে মহাসচিবের এত বিশেষণ শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নেবে তো, না মুখের কথা কিংবা কাগুজে শব্দে পরিণত হবে। সে রকম কিছু হলে ভবিষ্যতে কোনো বিশেষণ শব্দ আর কাজে দেবে না।
এদিকে সূত্র জানায়, কমিটি গঠন-পরবর্তী বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় রোববার রাতে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে সৃষ্ট সংকট নিরসনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, দলকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে কমিটি গঠন-পরবর্তী মান-অভিমানের সংকট দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। এরপর দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নতুন নির্বাহী কমিটিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। এর কোনো বিকল্প পথ নেই।
জানা গেছে, কমিটি ঘোষণার একদিন পর রোববার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা শুরুতেই খালেদা জিয়াকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয়ার জন্য অভিনন্দন জানান।
নতুন কমিটি ঘোষণা ও নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে আকার ইঙ্গিতে কথা বলেন তারা। দলের সিনিয়র এসব নেতা খালেদা জিয়াকে বলার চেষ্টা করেন, কমিটিতে যদি সবার মতামত নেয়া হতো- তাহলে এত সমালোচনা হতো না। তবে যা হওয়ার হয়েছে, এখন নতুন কমিটির নেতাদের নিয়ে ঘন ঘন বৈঠক করতে তারা চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দেন।
দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরব যাবেন। এর আগে চলতি মাসের ২৫ অথবা ২৬ তারিখ তিনি নবঘোষিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাহী কমিটি বা উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়ে এখনই বৈঠক হচ্ছে না। তবে হজ পালন শেষে দেশে ফেরার পর বিএনপি চেয়ারপারসন অন্যান্য কমিটির বৈঠক ডাকবেন বলে জানা গেছে।
কমিটি নিয়ে দলের সমালোচনা বলছেন, সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে ‘বিশাল আকারে’ ঢাউস মার্কা কমিটি ঘোষণা করা হয়। ফলে স্বস্তির পরিবর্তে অস্বস্তির পাল্লা ভারি হয়েছে। প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম পদত্যাগ করেছেন।
বিএনপির নতুন কমিটিতে স্থান না হওয়ায় জিয়া পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনের সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহার। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আরও সময় নিয়ে নতুন কমিটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিশেষ সম্পাদক, সহ-সম্পাদক এবং সদস্যপদ থেকে প্রায় অর্ধশত নেতা দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় বা দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিতে পারেন।
পদ পেলেও কমিটির ক্রমবিন্যাসে জুনিয়র সিনিয়রের ওপরে চলে যাওয়ায় স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যও ক্ষুব্ধ বলে তারা জানিয়েছেন। নতুন কমিটিতে পদ দেয়া হয়নি সংস্কারপন্থীদের। সেক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ ও সংস্কারপন্থী নেতারা সুযোগ পেলে দলে ভাঙনও ধরতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।
তারা বলেন, শুধু দলের এসব নেতাই নন, কমিটি দেখার পর ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। প্রতিনিধির মাধ্যমে পাঠানো তার তালিকাও কাটছাঁট করা হয়েছে। দলের দফতর সাজানোর ক্ষেত্রে তারেক রহমানের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।
এসব নিয়ে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন তারেক রহমান। সূত্র জানায়, দলের হাইকমান্ড তারেক রহমানের পরামর্শ ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে দলের দফতরে একজন সম্পাদক এবং একজন সহ-দফতর সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হতে পারে। তবে দফতরের একজনকে সরিয়ে অন্য কোনো পদে দেয়া হতে পারে।
এদিকে সোমবারও বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হাতেগোনা কয়েকজন নেতা ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। রোববার কার্যালয় প্রায় ফাঁকাই ছিল। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকায় গতকালও ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোর বিভিন্ন স্থানে নতুন কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কোনো মিছিল বের হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
বরং কমিটিতে স্থান না হওয়ায় যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএম জিলানী সোমবার সাড়ে ১০টার দিকে তার অর্ধশতাধিক সমর্থক নিয়ে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন এসএম জিলানী। কিছুক্ষণ অবস্থান করে জিলানী তার সমর্থকদের নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কার্যালয় ত্যাগ করেন।
শুধু এখানে শেষ নয়, কমিটি ঘোষণার পর অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, ২৫টি ভুঁইফোড় সংগঠনের সমন্বয়ে ‘বিএনপি’র সহযোগী সংগঠন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে একটি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়। বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে স্থান না হওয়ায় তারাও জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। যদিও বিএনপির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের হস্তক্ষেপে তারা তাদের সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেন।
জানা গেছে, নতুন কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের স্থান দেয়া হতে পারে। এখনও স্থায়ী কমিটির দুটি এবং নির্বাহী কমিটির ছয়টি পদ ফাঁকা আছে। সেক্ষেত্রে ঘোষিত নির্বাহী কমিটিতে যেসব নেতা শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাদের সরিয়ে দেয়া হতে পারে। আর অঙ্গসংগঠন এবং বিএনপির জেলা মহানগর কমিটি গঠনে এক নেতার এক পদ কার্যকর করা হলে আরও বেশ কিছু কেন্দ্রীয় পদ ফাঁকা হবে।
সব মিলিয়ে নতুন কমিটিতে ৩০-৩৫টি পদ ফাঁকা হতে পারে। এসব পদেই বঞ্চিতদের স্থান দেয়া হতে পারে। তবে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে নিয়োগ দেয়ার আগে ওয়ান-ইলেভেনে পুরো বিষয়টি বিবেচনায় আনা হতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, সামনে যে সময় আসছে, সেটা বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য ভালো সময় নয়। তখন কার কি ভূমিকা হবে সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে। একবার যারা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তারা যে আবারও সুযোগ এলে নেবেন না তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ঘোষিত কমিটিতে অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদের যদি সম্মানের সঙ্গে নির্বাহী কমিটি থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং এক নেতার এক পদ কার্যকর করা হলে অনেক পদই শূন্য হবে। এসব শূন্য পদে বঞ্চিত যোগ্যদের কমিটিতে স্থান করে দিলে এসব ক্ষোভ থাকবে না বলে মনে করেন এ বিএনপি নেতা।
সূত্র: যুগান্তর
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়