কেয়া চৌধুরী :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুপ্তহত্যাকারীদের দমনে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বেশ কয়েকবারই বলেছেন, ‘জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও শুপ্তহত্যাকারীরা যে দলেরই হোক, আমাদের হাত থেকে তারা রেহাই পাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ তৎপর রয়েছেন। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়, এমন কিছু করতে আমরা কাউকে সুযোগ দেব না’। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে সব চাইতে আতংকের বিষয় জঙ্গিবাদের উত্থ্যান ও একের পর এক গুপ্তহত্যা।
টার্গেট কিলিং, সন্ত্রাসী কায়দায় মানুষ হত্যা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়, পচাত্তরের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্ঠা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা থেকে শুরু করে, এমন দানবীয় দেশ বিরোধী ঘটনার সংখ্যা নিছক কম নয়। মৃত্যুর এই মিছিলে নাম এসেছে অনেক দেশপ্রেমিকের। ৩রা নভেম্বরে জেলের ভিতরে জাতীয় চার নেতাসহ পচাত্তরের ১৫ই আগস্ট; দুধের শিশু শেখ রাসেলও এ থেকে বাদ পড়েনি। ৯০ এর দশক থেকে বাংলার মানুষ ‘জঙ্গিবাদ’ শব্দটিকে জানতে শুরু করে। বাংলার মাটিতে বিষবৃক্ষ ‘জঙ্গিবাদ’ মাথাছাড়া দিয়ে যখন ‘তর-তর’ করে উঠতে দেখে শান্তিপ্রিয় দেশবাসী; ভয়ে শিউরে উঠে। দূভার্গ্যজনক হলেও সত্য, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে উঠে ‘জঙ্গিবাদ’ নামক এই বিষবৃক্ষের। এভাবেই স্বাধীন বাংলার মাটিতে ‘জঙ্গিবাদে’র আস্তানা গড়ে উঠে। সময়ের ব্যবধানে নানা সময়ে, নানা স্থানে, নিরীহ মানুষের উপর চলে ‘গ্রেনেট’ ও ‘বোমা’ হামলা ! নিহত হয় সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ স্তব্ধ হয়ে পড়ে। এসব ‘গ্রেনেট’-‘বোমা’ হামলার আক্রমণে মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা দেখে। অনাঙ্খাক্ষিত মৃত্যুর এ মিছিলে দেশের প্রতিথযশা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, বিচাররক, এমন কী সংষ্কৃতিক কর্মীদের নাম একের পর এক আসতেই থাকে। বোমা ফাটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয় বাঙালির প্রাণের উৎসব ১লা বৈশাখের ‘ছায়ানটের’ বৈশাখী উৎসবের আয়োজনে।
মানবিকতার এই বিপর্যেয়ের শিকার স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও। এতো... একবার নয়, ১৯ বার। নিশ্চয়ই, বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। ২০০৪ সালের সারা দেশে ‘জঙ্গিবাদ’ বোমা হামলা ও গোপালগঞ্জে পুলিশের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’তে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভায় দলের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর ‘গ্রেনেট’ হামলা চালানো হয়। হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগের ২২জন নেতাকর্মীকে। সৃষ্টিকর্তার পরম কৃপায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা কোন রকম বেঁচে যান সেদিন। প্রায় ৩শত নেতাকর্মী গুরুতরভাবে আহত হয়। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট বিশ্ব রাজনীতিতে এক ‘কালো অধ্যায়’ সৃষ্টি করে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক হিংসার কারণে, ক্ষমতার মসনদে বসার অভিলাসে; তৎকালিন, বিএনপি-জামায়ত জোট সরকার এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করে। দিনের আলোতে সকলের সামনে, আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলকে নেতৃত্বশূন্য করবার জন্য ‘গ্রেনেট’ মেরে হত্যা করতে চায়; বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। সে দিন বিশ্ব বিবেক রক্তাক্ত হলেও সেই সময়ের সরকারে বসা বেগম খালেদা জিয়ার রক্তের ‘হলি খেলা’ থেমে যায়নি। এত বড় হত্যাকাণ্ডের বিচারে সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ না নিয়ে থাকলেও বেগম খালেদার বিএনপির-সরকার ২১শে আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সকল আলামত নষ্ট করার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছিল। ‘জর্জ মিয়া’ নাটকের আড়ালে প্রকৃত খুনিদের রক্ষা করবার ব্যবস্থা করে ‘হাওয়া ভবনে’র কুশিলব বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া। জাতীয় শোকের এই ছায়াকে বিএনপি নামধারী রাজনীতিবিদেরা তাদের রাজনৈতিক সফলতা বলে মনে করে। বুকের জমাট বাধা কষ্ট, গভীর থেকে গভীর তর হয় সাধারণ মানুষের মনে। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা; বাংলার মাটিতে এটিই তো প্রথম নয়। বিএনপি-জামায়াতের সহায়তায় সরাসরি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টার উদ্যোগ নেয়া হয় ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িতে। যেখানে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে প্রথম হামলার ১৬ বছর পর। অর্থাৎ, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনার সভা মঞ্চে ‘বোমা’ পেতে। যে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯২০ সালে। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগকে নিশ্চিন্ন করা যায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ গণ-মানুষের দল। আদর্শের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাসী। জীবণকে বাঁজি রেখে এই আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব-মানচিত্রে স্থান পেয়েছিল। আর সেই মহান নেতাকে হত্যা করেছিল যে সকল ঘাতকরা; তাদেরকে ‘ইনডেমনিটির’ মতো কালো আইন পাসের মধ্যদিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রমাণ করেছিলো; তিনিই বঙ্গবন্ধুর হত্যার মূল কূশিলব। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর পচাত্তর পরবর্তীতে, পথ হারানোর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলো জিয়াউর রহমান। যেখানে বঙ্গবন্ধুর নামটিও উচ্চারণ করা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ ছিল। র্দীঘ ২১ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন।
বাংলাদেশ আবার ও লাল-সবুজের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা, বঙ্গবন্ধুর হত্যারকারী খুনিদের ও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখিন করার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যা বাংলার জনগণের র্দীঘ দিনের দাবি ছিল। সত্য ইতিহাস বলবার, লিখবার, পরিবেশ তৈরি করলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বুকের জমাট ব্যথা নিয়ে যে সকল শহীদের সন্তানেরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন; যে স্বাধীনতার স্বপ্নের দেশে সু-শাসন একদিন ফিরে আসবে। সেই আশাহীন শহীদ পরিবারকে আশার আলো দেখালেন। আর এভাবেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা বাস্তবায়ন করে চলেছেন স্বপ্নের ‘বাতিঘর’ হয়ে। বঙ্গবন্ধুর কন্যার আদর্শিক শক্তি ভাঙ্গবার ক্ষমা নেই কোন অবৈধ শক্তিতে উঠে আসা ক্ষমতা লোভী নেতাদের। যে কারণেই ২১শে আগস্টসহ জঙ্গি হামলার মধ্যদিয়ে ১৯ বার বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখনও চলছে ষড়যন্ত্র। গুপ্তহত্যা, টার্গেট কিলিং, সংখ্যালঘু হত্যা, সন্ত্রাস ও ভয়ভীতি পরিবেশ সৃষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করার। আবারও বিএনপি উর্বর করে তুলছে জঙ্গিবাদের বিষবৃক্ষ। এখন নতুন করে ইসলাম বিরোধী পথ অনুসরণ করে, নতুন প্রজন্মকে বিপদগামী করে তোলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননত্রেী শেখ হাসিনা অটল। ‘জঙ্গিবাদকে জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা দিয়ে ইতিমধ্যে প্রশংসনিত হয়েছেন দেশে-বিদেশে। আমরা দেখেছি গত ১লা জুলাই জঙ্গি হামলার বিষয়টি অত্যন্ত বিচক্ষণ নেত্রীত্বে মোকাবেলা করতে। কোন মহৎ আদর্শেও ব্যক্তিত্বে মানবহত্যার মতো অপরাধের চিন্তাও করতে পারে না। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার সকল অপচেষ্টা, বার বার বাংলার জনগণ ব্যর্থ করে দিয়েছে। জঙ্গিবাদেও বিরুদ্ধে গোটা দেশের মানুষ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। রুখে দাঁড়াবেই বাংলাদেশ। কারণ বঙ্গবন্ধু আমাদের জানিয়ে গেছেন..
‘মরতে যখন শিখেছি, তখন কেউ
আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না’
অতএব সমিকরণ বলে, একাত্তরের পরাজিত শক্তি + পচাত্তরের বঙ্গবন্ধুর ঘাতকেরা + ২১ শে আগস্ট গ্রেনেট হামলার কুশিলব ও আজকের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, হত্যার পেছনে, এক ও অভিন্ন শক্তি। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। সময় এসেছে, এদের মুখোশ খুলে দেবার।
বিচারের কার্যক্রম চলছে ২১ আগস্টসহ সকল হত্যাকাণ্ডের। র্দীঘসময় অতিক্রম হলেও এই সকল মামলা ঝুলে থাকায় জনমনে অসন্তুষ্টির দানা বেধেঁছে। তাই দ্রুত প্রকৃত আসামিদের শাস্তির আওতায় আনা খুবই প্রয়োজন।
বাস্তবতা হল, ২১ শে আগস্টে ‘গ্রেনেট’ হামলায় নিহত পরিবারের স্বজন ও চিরতরে পঙ্গু হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর দীর্ঘশ্বাস বাংলাদেশের আকাশ-বাতাশকে ভারি করে তুলছে। এই অভিসাপ থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করণে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
লেখক- সংসদ সদস্য
খবর বিভাগঃ
মতামত
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়