নিজস্ব প্রতিবেদক:
অবৈধ ভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে গত মঙ্গলবার ভারতের আসাম প্রদেশের করিমগঞ্জ পুলিশের হাতে এক সঙ্গীকে হত্যা সহ জঙ্গি সন্দেহে ৪ বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করে ভারতের পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজনের বাড়ী কানাইঘাট উপজেলার সাতবাঁক ইউপির চাপনগর গ্রামে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কানাইঘাটের একজন দালালের মাধ্যমে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে সৌদিআরবে যাবার উদ্দেশ্যে চাপনগর গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের পুত্র কানাইঘাট বাজারের অভিজাত মার্কেট তবারক ম্যানশনএ স্টার পয়েন্ট এর সত্ত্বাধীকারী ব্যবসায়ী সাইদ আহমদ (২৮) জকিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম শাহজালালপুর গ্রামের কাজী মাসুক আহমদের ছেলে কাজী সুমন আহমদ (২৭), পূর্ব শাহজালালপুর গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে ছাব্বির আহমদ (২৫), জকিগঞ্জ সদর ইউপির আনারসী গ্রামের সৌদি প্রবাসী মুছব্বির আলী ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩০) এবং তাদের সঙ্গী ভারতে গিয়ে রহস্য জনক ভাবে মৃত্যুবরণ কারী জকিগঞ্জ কসকনকপুর ইউপির নিয়াগুল গ্রামের মুজম্মিল আলীর ছেলে আব্দুল আহাদ (৪০) কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী ডোনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে গত ১৪ আগস্ট ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি হয়ে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে আসাম প্রদেশের কালিগঞ্জ এলাকায় গিয়ে সেখানের এক যুবকের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশকারী এ ৪ বাংলাদেশীকে তাদের সঙ্গী আব্দুল আহাদ (৪০) এর লাশ ফেলে দেওয়ার সময় ভারতের করিমগঞ্জের নিলামবাজার এলাকা থেকে করিমগঞ্জ পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর ভারতীয় পুলিশ এ ৪ বাংলাদেশীকে জঙ্গি সংগঠন আইএস ও জামাতুল মুজাহিদী জেএমবি’র সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে এবং তাদের সহযোগী আব্দুল আহাদকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার করে। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে দেশের পুলিশের বরাত দিয়ে গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এদিকে ভারতের পুলিশের হাতে গ্রেফতার কানাইঘাটের ব্যবসায়ী সাইদ আহমদকে নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তোলপাড় চলছে। সাঈদ আহমদের বিরুদ্ধে ভারতীয় পুলিশ জঙ্গি সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ এনেছে তা একেবারে বানোয়াট বলে ফেইসবুকে শত শত মন্তব্য করা হচ্ছে। সাঈদ আহমদের পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, সাঈদ আহমদ কোন ধরনের জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত নয়। সে কানাইঘাট বাজারের স্টার পয়েন্ট এর সত্ত্বাধীকারী ও একজন সফল ব্যবসায়ী। এবং কানাইঘাটের সাংস্কৃতিক গ্রুপ সিঙ্গার গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত। জানা যায়, অনুমান ১০ দিন পূর্বে কানাইঘাটে এক দালালের মাধ্যমে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে সৌদি আরবে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ী সাইদ আহমদ জকিগঞ্জের আরো ৩ যুবকের সাথে কানাইঘাটে ডোনা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করে। এদিকে কোন জঙ্গি সংগঠনের সাথে ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত কানাইঘাটে সাঈদ আহমদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় নি। সে কোন ধরনের জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত নয় বলে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন। কানাইঘাট থানায় তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগও নেই। সাঈদ আহমদের দুই ভাই সৌদি আরবে থাকেন। বর্তমানে বাংলাদেশে সৌদি ভিসা প্রসেসিং বন্ধ থাকায় মূলত সাঈদ আহমদ দালালদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে সৌদি আরবে যাবার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ভারতে পাড়ি দেয় বলে জানা গেছে। সাঈদ আহমদের ছোট ভাই ব্যবসায়ী আবুল বশর জানান, সৌদি আরবে যাবার উদ্দেশ্যে তার ভাই দালালদের মাধ্যমে ভারত যায়। কোন ধরনের জঙ্গি সংগঠনের সাথে তার ভাই জড়িত নয়। ভারতীয় পুলিশ তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ এনেছে তা মিথ্যা বলে জানান। এ ব্যাপারে তিনি বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সাতবাঁক ইউপির চেয়ারম্যান জেলা আ’লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশ জানিয়েছেন, সাঈদ আহমদ তার ইউনিয়নের নাগরিক। সে কোন জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত নয়। দালালদের মাধ্যমে সৌদি আরবে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে সে ধরা পড়েছে। যারা প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে সাঈদ সহ অন্যান্যদের ভারতে প্রবেশ করিয়েছে এইসব দালালদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে এ ৪ বাংলাদেশী ভারতীয় পুলিশের হেফাজতে ১৪ দিনের রিমান্ডে রয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়। এব্যাপারে কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) কামাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত কানাইঘাটের সাঈদ আহমদ কোন জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে কি না সিলেটের পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান স্যার আমাদের নির্দেশ দেন। আমরা তদন্ত করে সাঈদ আহমদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত মর্মে কোন ধরনের সম্পৃক্ততা পাই নি। তার বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় কোন ধরনের অভিযোগও নেই।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়