Tuesday, August 30

সিজারিয়ান না নরমাল ডেলিভারি, কোনটি ভালো

সিজারিয়ান না নরমাল ডেলিভারি, কোনটি ভালো
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: বর্তমানে গর্ভবতী মায়েরা বেশীরভাগ সিজার করে বাচ্চা জন্ম দিতে পছন্দ করেন। সিজারিয়ান করানো খুব সাধারণ ব্যাপার হলেও এটা একটা বড় অপারেশন তাই এর নিজস্ব কিছু ঝুঁকি থাকে। এজন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণ ছাড়া ডাক্তার সিজারিয়ান করানোর পরামর্শ দেন। গর্ভাবস্থায় কোনো জটিল সমস্যা যদি সৃষ্টি না হয় তাহলে ভ্যাজাইনাল বার্থ বা নরমাল ডেলিভারি নিরাপদ। নরমাল ডেলিভারি শুধু বর্তমান গর্ভাবস্থার জন্যই ভালো নয় বরং পরবর্তীতে গর্ভধারণের জন্যও ভালো।

কখনো কখনো মা ও বাচ্চার জীবন রক্ষার্থে সিজারিয়ান করতে হয়, সেই পরিস্থিতিতে প্রশ্নাতীত ভাবেই সিজারিয়ান করানোটা হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ। আবার এমনও হতে পারে যে, আপনি কোন বিশেষ দিনে বিশেষ উপায়ে বাচ্চার জন্ম দিতে চান তখন ডাক্তার আপনাকে সিজারিয়ান করানোর পরামর্শ দেন। তবে আপনার এই সিদ্ধান্ত আপনার স্বাস্থ্য ও জীবনধারায় বিশেষ প্রভাব ফেলে। আর বর্তমানে চারজনের মধ্যে একজন শিশু সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম নেয়। BBC ও Guardian এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

পরিকল্পিত সিজারিয়ানে মায়ের সুবিধা সমূহ-
# প্রসব বেদনা সহ্য করতে হয় না
# অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয় না
# ভ্যাজাইনাল ইনজুরি হয় না

পরিকল্পিত সিজারিয়ানে মায়ের অসুবিধা সমূহ-
# অনেকদিন হাসপাতালে থাকতে হয়
# শিশুর জন্মের পরও ব্লিডিং হলে অনেক ক্ষেত্রে গর্ভ অপসারণ করে ফেলতে হয় একে হিস্টেরেক্টমি বলে।

# হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
# ইউটেরাইন ইনফেকশন এর ঝুঁকি বাড়ে।
# অপারেশনের পরে ব্যাথা হয় যা প্রায় কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

পরবর্তীতে সন্তান ধারণের সময় এক্টোপিক বা টিউবাল প্রেগনেন্সি, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, প্লাসেন্টা অ্যাক্রিটা এবং প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন এর সমস্যাগুলো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পরিকল্পিত সিজারিয়ানে বাচ্চার অসুবিধা সমূহ-
# ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে রাখতে হয়
# শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা থাকে
# ব্রেস্ট ফিডিং এর অভ্যাস গড়ে উঠতে দেরি হয়

The Australian study তাদের এক গবেষণায় দেখেছে যে, সিজারিয়ান করানো মায়েদের মধ্যে মানসিক প্রতিকূলতার প্রভাব প্রাকৃতিক প্রসবের মায়েদের চেয়ে বেশি হয়।

প্রাকৃতিক প্রসবের সুবিধা -
# নরমাল ডেলিভারি হলে মা কয়েক ঘন্টা পরই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে পারে।

# এ অবস্থায় ভালোভাবে বাচ্চার জন্ম হয়ে গেলে বাচ্চা শান্ত থাকে।

# বাচ্চার জন্মের পর মা শারীরিক ও মানসিক শক্তি লাভ করে। এর মাধ্যমে সে শান্তি ও অর্জনের বিস্ময়কর অনুভূতি পায়।

# নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চাকে যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জন্ম নিতে হয় তাঁতে বাচ্চার ফুসফুস শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার জন্য প্রস্তুত ও শক্তিশালী হয়।

প্রাকৃতিক প্রসবের অসুবিধা -
# নরমাল ডেলিভারি অস্বস্তিকর ও কষ্টকর।

# নরমাল ডেলিভারি নোংরা মনে হতে পারে। শরীর থেকে অনেক ঘাম, অ্যামনিওটিক তরল, রক্ত এবং বাচ্চার জন্মের পর প্লাসেন্টা বা নাড়ি বের হয়।

# ইনজুরি হতে পারে। অনেক সময় সেলাই লাগতে পারে।

সফল ভাবে বাচ্চা প্রসবের জন্য যে কাজ করা প্রয়োজন এবং যে কাজ করা ঠিক না সেগুলো জেনে নিন।  প্রাকৃতিক ভাবে বাচ্চা প্রসবের জন্য একজন স্বাস্থ্য কর্মী বা ধাত্রীর প্রয়োজন। যিনি পুরো কাজটাকে সুন্দর ও সফল ভাবে সম্পন্ন করাতে পারবেন। প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষ গুলো জীবাণু মুক্ত করে নিতে হবে।

# বিজ্ঞানীদের মতে সদ্যজাত বাচ্চার নাড়ীতে প্রচুর আয়রন থাকে যা জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে বাচ্চার শরীরে উৎপন্ন হয়না। তাই জন্মের অন্তত ২ মিনিট পরে নাড়ী কাটা ভালো যাতে শিশু অনেক বেশি আয়রন নিয়ে নিতে পারে।

# জন্মের পরপর বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চাকে বুকের দুধ দিলে বাচ্চা এবং মা উভয়ের জন্যই ভালো। বুকের দুধ বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এবং মাকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে, বাচ্চা ও মায়ের বন্ধন দৃঢ় হয়।

যুক্তরাজ্যের National Institute for Clinical Excellence এর মতে, ‘সকল মহিলাদেরই অধিকার আছে বাচ্চার জন্মের পদ্ধতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার। কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সঠিক পরামর্শ দেয়াও জরুরি’।

মহিলাদের জন্য বাচ্চার জন্মের দিনটা অনেক মোহনীয় ও স্মরণীয় একটি দিন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়