Wednesday, August 10

তিন হাজার বছর পূর্বের গ্রামের সন্ধান

 তিন হাজার বছর পূর্বের গ্রামের সন্ধান

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: বিবর্তনের দীর্ঘ ইতিহাসের ধারায় আমরা এখন আধুনিক যুগে বাস করছি। হাতের কাছে পেয়েছি কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ভার্চুয়াল পৃথিবী এবং আরো কতো কিছু। কিন্তু পূর্বের যুগের মানুষদের এতো বিলাসিতা ও আরাম- আয়েশ ছিল না। কিন্তু কেমন ছিল তাদের জীবন ধারা এটা জানার আগ্রহ রয়ে যায়।
 
যদিও সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে তাতে ধুলা জমেছে, মাটিতে চাপা পড়েছে। কিছুদিনের জন্য হারিয়েও গেছে লোক চক্ষুর আড়ালে। কিন্তু মিলিয়ে যায়নি একেবারে। তাইতো মানুষের অতীত কীর্তিকলাপ, দৈনন্দিন জীবনের কথা জানতেই ইতিহাস খুঁড়ে খুড়ে বের করা হয়েছে। কেননা মানুষ যেখানেই গেছে, সেখানেই রেখে গেছে তার পদচিহ্ন।

সেই চিহ্ন ধরে পিছাতে পিছাতে চলে গেছে সেই সুদূর অতীতে। এই যেমন ইংল্যান্ডের কেমব্রিজশায়ারে ব্রোঞ্জ যুগের একটি গ্রামের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানকার মাটি খুড়ে বের কারা হয়েছে তিন হাজার বছর আগের সূতা। এটি পেচিয়ে বল আকারে রাখা, আরেকটি ববিনের চারপাশে পেচিয়ে রাখা। হাজার হাজার বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও সেগুলো এতো ভাল অবস্থায় আছে যে, তা দেখে ঐতিহাসিকরা অবাক হয়ে গেছেন।
 
সূতাগুলো পাওয়া গেছে পিটারবোরোর কাছে মাস্ট ফার্মের একটি পরিত্যাক্ত বসতিতে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজার হাজার বছর আগে ভয়ঙ্কর এক অগ্নিকাণ্ডের কারণে এ বসতি ছেড়ে চলে যায় লোকজন।

উদ্ধার করা জিনিসপত্রগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক ইউনিটের প্রত্নতাত্ত্বিকরা ফেসবুক পেজে দিয়েছেন। সূতাগুলো প্লান্ট ফাইবার থেকে তৈরি এবং যেভাবে সূতাগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে তা বিস্ময়কর বলাই যায়।
 
উদ্ধার করা এসব নিদর্শন থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এক সময় বেশ সমৃদ্ধশালী ছিল এখানে বসতিস্থাপনকারীরা। তারা মূলত ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাষাবাদে নিয়োজিত ছিল। হঠাৎ একদিন নাটকীয়ভাবে বসতিটি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। পিটার্সবরোর কাছে জলাভূমির প্রান্তে গড়ে ওঠা বসতিটি জ্বালিয়ে দেয় প্রতিপক্ষের যোদ্ধারা। তবে বসতিটি নির্মাণ করার খুব বেশিদিন পার না হতেই অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, গ্রামের বাড়িঘর যেন তেন ছিল না। যে কাঠামো পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যায়, ওগুলো ছিল পুরোদস্তুর একটি বাড়ি। সেখানে পাওয়া গেছে পলিমাটির তৈরি পুতি, নক্সা করা নেকলেস, ব্রোঞ্জের তৈরি ড্যাগার, বড় একটি কড়াইয়ের হাতল, ব্রোঞ্জের তৈরি লাঠি ইত্যাদি।

এছাড়া লাইম গাছের বাকলের তৈরি পোশাক ও পশমের কাপড়। কাঁচের তৈরি পুতি, জেট ও অ্যাম্বার, মাটির জগ, কাপ, গামলাও পাওয়া গেছে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে।
 
ধারণা করা হয়, ওগুলো আমাদানি করা হয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, এমন কি, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। প্রত্নতাত্তিক স্থানটি মূলত পম্পোলি নামে পরিচিত। সেই সময়কার অপেক্ষাকৃত সম্পদশালী লোকের বাস ছিল সেখানে।

কাপড় ছাড়াও মোটা পশমের তৈরি কার্পেট ও দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখার মতো কাপড় বা কাপড় জাতীয় জিনিস তিন হাজার বছর আগের জীবন-যাপনের অবস্থা স্মরণ করিয়ে দেয়।

কাঠ মাটিতে পোতা হয়েছে লম্বভাবে। কিন্তু কাঠগুলোকে এখনো অনেক তাজা মনে হয়। ভবনের বেশিরভাগ পুড়ে গেছে আগুনে। ঘুনে না ধরায় এমন মনে হয় যে, এ বসতি বেশি দিন আগের নয়। আর এই বিষয়টিই মূলত ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্লেষকদের।

খননকাজে নিয়োজিতদের ওয়েবসাইটে বলা হয়, কাঠগুলো পুড়ে যাওয়ার পরও মাইক্রোসকোপ দিয়ে পরীক্ষা করার সময় দেখা যায় যে, ওগুলো এখনো সবুজ রয়েছে।

সাইটে আরো বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সামনে আরো তথ্য জানা যখন জানা যাবে, তখন বিষয়টি অনেকাংশে খোলাসা হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়