কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
হবিগঞ্জে উপবৃত্তির টাকা বিতরণে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ১২শ’ টাকার স্থলে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। আবার অনেককে একেবারেই দেয়া হয়নি। এমন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন শিক্ষক, অভিভাবক কমিটির নেতাদের কিছু অংশ, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা অফিসের একটি চক্র।
এ অবস্থায় শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা বিভিন্ন দফতরে অভিযোগও দিতে শুরু করেছেন। অপরদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকরা। অনেক বিদ্যালয়ে আবার কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি দেখিয়ে উপবৃত্তি দেয়া হয়েছে। বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমড়ি দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নজরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর সাঙ্গর গুরুগৃহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিন ঘুরে এবং শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
বিথঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আনিকা ও রকিব জানায়, তারা কোনো টাকা পায়নি। আর ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী স্মৃতি চৌধুরী জানায়, সে পেয়েছে ৫৪০ টাকা। তাদের কথা শুনে ক্লাসের অসংখ্য শিক্ষার্থী একযোগে টাকা কম পাওয়ার কথা জানায়।
তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমির চন্দ্র দাশ দাবি করেন, টাকা কম পাওয়া বা না পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তার বিদ্যালয়ে ২য় থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই ১২০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। কেউই কম পায়নি। আর কেউ বাদও যায়নি।
টাকা কম দেয়ার কথা অস্বীকার করে কুমড়ি দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কামরুন্নাহার বলেন, এ গ্রামে দুটি মেধা বিকাশ নামক কিন্ডারগার্টেন আছে। কিন্ডারগার্টেনগুলোর কিছু শিক্ষার্থী তার বিদ্যালয়েও ভর্তি আছে। যেহেতু তারা ভর্তি আছে তাই তাদেরই উপবৃত্তি দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বানিয়াচং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, কাদেরকে উপবৃত্তি দেয়া হয়েছে সে শিক্ষার্থীদের তালিকা তার অফিসে নেই। শুধু কোনো বিদ্যালয়ে কত টাকা দেয়া হয়েছে তা আছে। অনিয়মের বিষয়টিও তার জানা নেই। ব্যাংক কিভাবে টাকা বিতরণ করেছে তা তারাই জানে। যেহেতু বিতরণের দায়িত্ব তাদের।
সোনালী ব্যাংক বানিয়াচং শাখার ব্যবস্থাপক তামিম সিদ্দিক জানান, তাদের কাছে শিক্ষার্থীদের তালিকা নেই। তারা শুধু টাকা নিয়ে গিয়ে বিদ্যালয়ের তালিকা দেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা বিতরণ করেছেন। তারা নিজেরা উপস্থিত থেকে সব টাকা বিতরণ করেছেন। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূর ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। অনিয়মের কথা জানতেও পেরেছেন। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন।
তিনি বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর মাঝে উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে তার একটি তালিকা উপজেলা শিক্ষা অফিস, একটি সোনালী ব্যাংক এবং একটি বিদ্যালয়ে থাকে। কিন্তু কেন তারা অস্বীকার করল তাদের কাছে তালিকা নেই তাও খতিয়ে দেখা হবে। ব্যাংক থেকে কোনো টাকা শিক্ষকদের হাতে দেয়ার কোনো বিধান নেই। শিক্ষকদেরও তা নেয়ার কোনো বিধান নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, উপবৃত্তির টাকা বিতরণের জন্য যে সময় দেয়া হয়েছিল, সে সময়ের মাঝে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সবগুলো বিদ্যালয়ে গিয়ে টাকা বিতরণ করা সম্ভব ছিল না। তাই তারা গিয়ে প্রধান শিক্ষকদের হাতে টাকা দিয়ে চলে যায়। আর প্রধান শিক্ষক পরে টাকা বিতরণ করেন। এমন অবস্থার কারণেই মূলত দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে যদি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং ম্যানেজিং কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে উপস্থিত রেখে টাকা বণ্টন করা হতো তবে দুর্নীতি অনেকটাই কম হতো। এমন সুযোগও থাকতো না বলে তারা মনে করেন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম - See more at: http://www.sylhetview24.com/news/details/Sylhet/68361#sthash.bpqz0grp.dpuf
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়