Saturday, August 20

বৃষ্টি এলো টাপুর টুপুর নদে এলো বান...

বৃষ্টি এলো টাপুর টুপুর নদে এলো বান...
দিনাজপুর প্রতিনিধি: বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের দিয়ে দেয়া অনেক পুরোনো প্রথা। অনাবৃষ্টির কারণে নতুন করে তাই দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ব্যাপক আয়োজনে ধুমধাম করে ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়েছে। বিয়েতে গ্রামবাসীসহ প্রায় ৫০০ আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এই বিয়ের অনুষ্ঠান। সকলের মনের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলেই অনাবৃষ্টি কেটে যাবে। হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে এ আযোজন করা হলেও বিয়েতে পালন করা হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের নিয়ম-কানুন। এই ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে বিরল উপজেলার ভারাডাঙ্গী বেতুড়া পশ্চিম পাড়া গ্রামের মানুষ।

আয়োজকরা জানায়, ভাদ্র মাস এলেও বৃষ্টির দেখা নেই। জমি শুকিয়ে গেছে। চারা রোপণ করা জমিগুলো পানির অভাবে শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। এ কারণে যাতে বৃষ্টি আসে সেজন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়।

বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন চলছিল সাতদিন আগে থেকে। গ্রামের যুবকরা সাতদিন আগে থেকে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেচে-গেয়ে অর্থ, চাল, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, তেল ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এ সময় প্রতিটি বাড়িতে ব্যাঙের বিয়ে খেতে আসার দাওয়াতও দেয়া হয়।

শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় ব্যাঙের বিয়ে। কলার গাছ ও ফুল দিয়ে সাজানো বিয়ের আসরে সকাল থেকে গ্রামবাসী আসতে শুরু করে। বাজানো হয় মাইক। রং মেখে, কাদা মেখে শুরু হয় নাচ-গান। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বর হৃদয়ের মা ডাবু বালা ও কনে স্বপ্নার মা শেফালী রানী রায় বর কনেকে নিয়ে হাজির হয় মাড়োয়ায়। এসময় পাশেই চলছিল রান্না-বান্নার কাজ। শুরু হয় নাচ-গান। গ্রামের মানুষ বরকনেকে দেখে টাকাসহ বিভিন্ন প্রকার উপহার দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে যায়।

মাড়োয়ার আশপাশে চলে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ। শুকনার মধ্যে লাগানো হয় ধানের চারা। এ যেন এক অন্য রকম উৎসব। মুসলমান-হিন্দু সকল সম্প্রদায়ের সকল বয়সের মানুষের মিলন মেলা।

এ ব্যাপারে টেনিয়া বর্মন (৮৩) জানান, অতীতেও এভাবে ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়েছে। ভগবান জলও দিয়েছে। এবারও সে আশা থেকেই এই আয়োজন করা হয়েছে। গতবার ব্যাঙের বিয়ের দিন দুপুর থেকেই বৃষ্টি হয়েছিল। এ বছর এখনো বৃষ্টি হয়নি। দেখা যাক ভগবান কি করে।

গোপালপুর গ্রামের শ্যামল চন্দ্র রায় জানান, আমরা গ্রামবাসী সবাই মিলে সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার জন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি। ভগবান অবশ্যই দেখছেন আমার বৃষ্টির জন্য এই আয়োজন করেছি। অবশ্যই বৃষ্টি হবে। এটা আমাদের সকলের বিশ্বাস।

এলাকার আরেক প্রবীণ মানুষ সামছুল হক জানান, অনেক বছর ধরে দেখে আসছি অনাবৃষ্টি হলেই গ্রামের হিন্দু- মুসলিম সবাই মিলে ব্যাঙের বিয়ে দেয়। অনেক সময় বৃষ্টিও হয়েছে। তাই আত্মবিশ্বাস হয়ে গেছে ব্যাঙের বিয়ে দিলেই বৃষ্টি হবে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের কথা শুনবে।

বিরল ভান্ডারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহেশ চন্দ্র রায় জানান, সাতদিন ধরে এ আয়োজন চলছে। এলাকার যুবারা মূলত এই আয়োজন করেছে। বিকেলে গরুর গাড়িতে করে কনের বাসায় যাওয়া হবে। কনেকে শ্বশুরবাড়িতে আনার জন্য।

দিনাজপুরে এখন চলছে অনাবৃষ্টি। ক্ষেতে পানি না থাকায় কৃষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে হাহাকার। মানুষ বিকল্প ব্যবস্থায় সেচ দিয়ে আমন চারা রোপণ করছে। জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বৃষ্টি না হলে জমির আমন চারা নষ্ট হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়