Sunday, July 3

ধর্মীয় উদ্ধৃতি না দেয়াটাই কাল হল ইশরাতের

ধর্মীয় উদ্ধৃতি না দেয়াটাই কাল হল ইশরাতের

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: গুলশান হামলায় নিহত তিন বাংলাদেশির মধ্যে একজন ইশরাত আখন্দ। গত ১ জুন কয়েকজন বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন ঢাকার ‘হলি আর্টিসান বেকারি ক্যাফে’তে।

সেদিনই তার খোঁজ না পেয়ে ফেইসবুকে পোস্ট করেন ইশরাতের বন্ধু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আইআইএম কলকাতার অতিথি অধ্যাপক শ্রী অলোক কুমার। শনিবার দুপুরে অলোক কুমার তার ফেসবুকে উৎকণ্ঠার সঙ্গে একটি পোস্ট করেন। তিনি লেখেন যে ইশরাত তার আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার সন্ধ্যায় কয়েকজন ইতালিয়ান ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। তার পর থেকে তার আর কোনও খবর নেই।

এর কয়েক ঘণ্টা পরেই অলোক কুমার ফেসবুকের মাধ্যমেই জানান যে জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন ইশরাত। জঙ্গিদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন তিনি। অলোক কুমার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ক্যাফেতে উপস্থিত বেশিরভাগ মুসলিম বাংলাদেশিদেরই ছেড়ে দেওয়া হয় যারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে কোরান থেকে উদ্ধৃত করেন।

কিন্তু ইশরাত হিজাব পরেননি এবং নিজেকে আলাদা করে কিছু প্রমাণও করতে চাননি। তাই তাকে প্রাণ দিতে হল।     

ইশরাত আখন্দ একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান মহীয়সী নারী। ঢাকার ওসমান গনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই কৃতী ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল সায়েন্সে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেন। এর পর অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-এর ডিগ্রি নিয়ে তিনি শুরু করেন তার কর্মজীবন। এছাড়া শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যময় ছিল তার জীবন।

বর্তমানে তিনি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হিউম্যান রিসোর্স ডিরেক্টর পদে ছিলেন। ইশরাত আখন্দ বাংলাদেশের শিশুশ্রম বিরোধী অ্যাক্টিভিস্টদের একজন। তার একক প্রচেষ্টায় একটি বিরাট মানবাধিকার-বিরোধী শিশুশ্রম নেটওয়র্ক বন্ধ হয়। শুধু তাই নয়, সেই শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, তাদের পরিবারগুলোকে আর্থিক সাহায্যের সংস্থান করে দেওয়ার মতো জটিল এবং দুরূহ কাজগুলোও তিনি করেছেন।

মাত্র ৩৫ বছর বয়সে চলে গেলেন ইশরত। ধর্ম, ধর্মের অনুশাসন, তার প্রয়োগ— এই সবকিছুর প্রতি প্রশ্ন তুলে চলে গেলেন পৃথিবী থেকে। ফেসবুকে ইশরাতের শেষ পোস্ট তার মৃত্যুর দিন অর্থাৎ ১ জুন, বিকাল ৪.৪৮ মিনিটে। বিখ্যাত লেখক এবং মোটিভেশনাল স্পিকার রবিন শর্মার তোলা একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন তিনি। রবেন আইল্যান্ডের যে সেলে নেলসন ম্যান্ডেলা বন্দি ছিলেন, সেই সলিটারি সেলের একটি ভিডিও।

তার মৃত্যুতে ভারতীয় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে শেক প্রকাশ করে খবর বেরিয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতিমনা মানুষদের সঙ্গে বেশ ভালো সর্ম্পক ছিল তার। ভারতীয় বন্ধুরা বাংলাদেশে আসলে সব ধরনের সহযোগিতা করতেন ইশরাত।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়