কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টুরেন্টের জিম্মিদশা থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া ৩২ জনের মধ্যে ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিম। কিন্তু পরে তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নেয়া হয়। এরপর থেকে তার বিষয়ে কোনো তথ্য গণমাধ্যমে আসেনি।
অবশেষে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানালেন, হাসনাতকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হচ্ছে না কেউই। সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসনাত করিমের বাবা রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি কৌশলে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেন।
হাসনাত করিম কি বাসায় ফিরেছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এখন ব্যস্ত আছি।’ শুধু হ্যাঁ বা না বলার অনুরোধ করলেও তিনি কোনো জবাব না দিয়ে ফোনটি কেটে দেন।
২ জুলাই হলি আর্টিসান বেকারির জিম্মি সঙ্কটের অবসান ঘটে সেনাকমান্ডোর নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে। ওই দিন রাতেই একটি ভিডিও পাওয়া সামাজিক মাধ্যমে। রেস্টুরেন্টের পাশের একটি ভবন থেকে ডি কে হোয়াং নামের দক্ষিণ কোরীয় এক নাগরিক তার ফেসবুক পাতায় মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিওটি প্রকাশ করেন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ন্যাড়া মাথার চেক গেঞ্জি ও জিন্স পরা এক ব্যক্তি ওই রেস্টুরেন্টে অস্ত্রধারীদের সাথে ঘোরাফেরা করছেন। তার আচরণ দেখে মনে হচ্ছে যেন তিনি সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করছেন। রেস্টুরেন্টের কাচের তৈরি ফটকটিতে তাকে বেশ কয়েকবার এসে ঘুরে যেতে দেখা যায়। দুই অস্ত্রধারীর সঙ্গে ছাদেও দেখা গেছে তাকে।
ওই দিন রেস্টুরেন্টটিতে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন হাসনাত করিম। বাবা রেজাউল করিম জানিয়েছিলেন, ছেলের জন্মদিন উদযাপনে গিয়েছিলেন তিনি।
কোরীয় নাগরিকের ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়ার যায় তিনিই হাসনাত করিম। এরপর থেকেই তাকে ঘিরে নানা সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে।
ডিবি পুলিশ হাসনাতকে তার স্ত্রী ও সন্তানসহ হেফাজতে নেয়। পরে স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে দেয়া হলেও তাকে আটকে রাখা হয়। তবে পরবর্তীতে হাসনাত করিম ডিবি নাকি অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতে আছেন তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি। পুলিশও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হচ্ছিল না।
অবশেষে হামলার ২৬ দিন পর গত ২৬ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেন, হাসনাত করিম পুলিশের কাছেই আটক আছেন। যদিও আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে আটক করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হয়। অথচ হাসনাতকে কোনো আদালতে তোলা হয়নি।
এখানে উল্লেখ্য যে, রেস্টুরেন্টে যৌথ অভিযান থেকে শুরু করে হতাহতদের শনাক্ত ও পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর এবং জঙ্গিদের লাশের ময়নাতদন্ত সব কিছু করা হয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে।
২০১২ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে চাকরিচ্যুত হোন হাসনাত করিম। ওই বছর জুনের শেষ নাগাদ তাকেসহ চার জন শিক্ষককে একই অভিযোগে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে একদল অস্ত্রধারী ঢুকে বিদেশিসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে। সকালে সেনাবাহিনির নেতৃত্বে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ওই রেস্টুরেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তাবাহিনী।
এ সময় ৩২ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের মৃতদেহ এবং ৬ জঙ্গির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়