সিলেট, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০১৬ :: রাজধানীতে ১৪২ তলাবিশিষ্ট বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে কমপক্ষে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। একটি সেভেন স্টার হোটেল ছাড়াও ভবনে থাকবে বিশাল কনভেনশন সেন্টার, সুইমিং পুল, গলফ ক্লাব ও স্টেডিয়াম। থরে থরে সাজানো থাকবে আধুনিক শৈলীর ফ্ল্যাটগুলো। বিশ্বের অন্যতম নজরকাড়া এই ভবন ‘আইকনিক টাওয়ার’ বানাবেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি ড. কালীপ্রদীপ চৌধুরী। তাঁর নিজের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপের সঙ্গে শিগগিরই এ ভবন বানানোর বিষয়ে চুক্তি হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দত্তরাইল গ্রামের জমিদার পরিবারের সন্তান এই কালীপ্রদীপ। তাঁকে দেশে বিনিয়োগে উৎসাহ দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন। গতকাল রবিবার রাতে ড. এ কে আবদুল মোমেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কালীপ্রদীপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছেন দেখে আমি তাঁকে আমাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। তিনি (কালীপ্রদীপ) স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান। সরকার দুটো স্থানে জমি দিতে চাইছে। তিনি চেয়েছেন ১০০ একর, সরকার দিচ্ছে ৪৮ একর। বাকি জমি তিনি কিনতে চান।’
দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ ওই টাওয়ার নির্মাণের জায়গা এরই মধ্যে ঠিক করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক); তৈরি হয়েছে নকশাও। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ে কেপিসি গ্রুপের সঙ্গে ভবন নির্মাণের জন্য চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কালীপ্রদীপও উপস্থিত হন। প্রক্রিয়াগত জটিলতায় চুক্তি সই হয়নি। বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কালীপ্রদীপ তাঁর স্বপ্ন নিয়েই কথা বলছিলেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। ড. কালীপ্রদীপ বাংলাদেশে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভবন ছাড়াও তাঁর নিজ এলাকায় হাসপাতাল ও একটি উন্নতমানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চান।
কালীপ্রদীপ বলেন, ‘স্বপ্ন দেখছি। এখনই সব প্রকাশ করতে চাই না।’ গত রাতে তিনি বিশেষ কাজে ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
নিজের শ্রম-মেধায় অর্থ রোজগার করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট ৪৬টি বিশ্বমানের মেডিক্যাল কলেজ গড়েছেন ড. কালীপ্রদীপ চৌধুরী। জনশ্রুতি আছে, ক্যালিফোর্নিয়ার মোট জমির শতকরা ৬০ ভাগের মালিক তিনি। আটটি দেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা আছে তাঁর। ক্যালিফোর্নিয়ায় আছে সাড়ে তিন বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশাল বাড়ি। বাড়ির একটি অংশেই আছে ২৩টি বেডরুম। ভারতে আছে ১৬টি চা বাগান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে আছে বন্ধুত্ব। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান, জর্জ বুশ, সিনিয়র বুশ ছিলেন তাঁর নিয়মিত ডিনারের সঙ্গী। তাঁর কম্পানি কেপিসির নামে ক্যালিফোর্নিয়ায় আছে কেপিসি সিটি। ক্যালিফোর্নিয়ায় ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের শেয়ারহোল্ডার তিনি। এবার মাতৃভূমিতে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান।
কালীপ্রদীপের জন্ম সিলেটের ঢাকাদক্ষিণের দত্তরাইলে। পৈতৃক সম্পত্তির ৩৫ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করবেন বিশ্বমানের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু প্রথম দিকে তাঁর উদ্যোগে বাধা তৈরি হয়েছিল জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে। জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা চাইছিলেন এটি সিলেটের ঢাকাদক্ষিণে না হয়ে রাজধানী ঢাকায় হোক। আর স্থানীয় একটি চক্রও নিজেদের স্বার্থহানির আশঙ্কায় বিরোধিতা করেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও তাঁর সহোদর এ কে এম আবদুল মোমেন সহযোগিতা করছেন কালীপ্রদীপের স্বপ্ন পূরণে। ঢাকাদক্ষিণেই হবে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টি।
সিলেটের ঢাকাদক্ষিণে জমিদারবাড়িতে গত শুক্রবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। মুহিত বলেন, ‘ঢাকাদক্ষিণের সুসন্তান ড. কালীপ্রদীপ চৌধুরী দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য ঢাকার পূর্বাচলে প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪২ তলা ভবন। কেপিসি সেন্টার হবে দেশের সর্ববৃহৎ কনভেনশন সেন্টার। ড. কালীপ্রদীপ একজন স্বপ্নচারী ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাবেন এবং একই সঙ্গে আমারও স্বপ্ন একটি বৃহত্তম কনভেনশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। আমি আশা করি, ২০১৯ সালে কেপিসি টাওয়ারের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে।’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের যে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন, তাতে তিনি এ প্রকল্প সম্পর্কে বলেন, ‘আমি আমার একটি স্বপ্নের কথা বলতে চাই। আমার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক ও জনবান্ধব একটি প্রকল্প সম্পর্কে সবাইকে বলব। আপনারা জানেন, পূর্বাচল ও এর নিকটস্থ এলাকা নিয়ে একটি স্বতন্ত্র মহানগর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ মহানগরে পিপিপির আদলে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’
সৌজন্যে : কালেরকন্ঠ
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়