Friday, May 27

রমজানের প্রস্তুতি


জহির উদ্দিন বাবর: পবিত্র মাহে রমজানের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে রমজানের প্রস্তুতি। রাসূল (সা.) রজবের চাঁদ দেখেই দোয়া পড়তেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।’ রাসূল (সা.) রমজানকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এ দু’মাসে। শাবান মাস এসে গেলে রাসূল (সা.)-এর আমলে বিশেষ পরিবর্তন আসতো। রমজান যতই ঘনিয়ে আসতো তাঁর আমলের মাত্রা ততই বেড়ে যেতো। সাহাবায়ে কেরামকে (রা.) রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিতেন। শবে বরাত অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাদের কাজে-কর্মে ও আমলে রমজানের একটা আমেজ এসে যেতো। রমজান মাস মুমিনের জীবন সাজানোর শ্রেষ্ঠ সময়। মোবারক মাস রমজানে রয়েছে প্রত্যেক মুমিন বান্দার জন্য সফলতার হাতছানি। দীর্ঘ এগার মাস পাপের খনিতে ডুবে থাকলেও এ মাসে তাদের জীবনকে নিষ্কলুষ করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। রাসূল (সা.) আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান পাওয়ার পরও তার জীবনের গোনাহসমূহ ক্ষমা করাতে পারল না, সে বড়ই দুর্ভাগা!’ রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতÑএকজন বিশ্বাসীর পরম কাক্সিক্ষত। একমাত্র রমজানেই তার এই প্রত্যাশার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি সম্ভব। সম্ভাবনার এই রমজানকে হেলায়-খেলায়, গতানুগতিক ধারায় কাটিয়ে দেয়া সুস্থ বিবেকের কাজ নয়। আর রমজানে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংযোজন ঘটাতে হলে প্রয়োজন পূর্ব পরিকল্পনা-যা এখন থেকেই করতে হবে। আগে থেকেই প্রস্তুতি না থাকলে রমজানের ফয়েজ ও বরকত পরিপূর্ণ হাসিল করা সম্ভব নয়। রমজানের পূর্বপ্রস্তুতিকল্পে প্রথমেই প্রয়োজন সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু আত্মাকে নিষ্কলুষ করা। রমজানের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, আত্মিক উৎকর্ষ। এই উৎকর্ষের ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য আত্মাকে ধুয়ে-মুছে পাক-সাফ করতে হবে। দীর্ঘ এগার মাসের পাপাচারের কারণে অন্তরে যে কালিমা লেপন হয়েছে তা দূর করতে হবে। কুপ্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরতে হবে। সামনের দিনগুলোতে উৎপাত যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। সব ধরনের পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় মানসিকতা এখন থেকেই তৈরি না করলে রমজান এসে গেলে তা আর সম্ভব হবে না। অনেকেই মনে করেন, এখন যত ইচ্ছা পাপ করতে থাকি রমজান এলে সব ঠিক করে নেব। কিন্তু তা ঠিক নয়। গোনাহ ত্যাগ করার জন্য অনুশীলন প্রয়োজন হয়। পূর্বপ্রস্তুতি ও অনুশীলন ছাড়া যেমন কোনো পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে সফলতার আশা করা যায় না, তেমনি রমজানের পূর্বে কঠোর অনুশীলন ছাড়া এর যথার্থ দাবি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পাপাচার ত্যাগ করার মনোবৃত্তিই পাপকার্য থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় সহায়ক। গোনাহও করবে, আবার রোজাও রাখবেÑতা হতে পারে না। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন. ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা, অগোচরে নিন্দা তথা পাপকার্য থেকে বিরত রইল না তার রোজা অর্থহীন উপবাস ছাড়া আর কিছুই নয়।’ রমজানের চাঁদ উদয় হলেই একদল ফেরেশতা ঘোষণায় লেগে যান। তারা বলেন, ‘হে কল্যাণের পথিক অগ্রসর হও। আর হে অমঙ্গলের হোতা, তুমি তোমার কুকর্মের রাশ টেনে ধর।’ রমজানের অঘোষিত এই আহবানে সাড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। রমজানে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি রাখতে হবে হালাল রিজিকের প্রতি। আর এর জন্য প্রয়োজন হালাল উপার্জন। অন্তত একটি মাসে হালাল রিজিকের প্রতি যতœবান হই। যে লোকমাটাই মুখে যাবে, তা হালাল হওয়া চাই। এমন যেন না হয় যে, রোজা তো রেখেছি আল্লাহর জন্য, কিন্তু ইফতার করছি হারাম বস্তু দ্বারা। অনেক লোক আছেন যাদের আয়ের উৎস মূলত হারাম নয়, কিন্তু যতœবান না হওয়ার কারণে হারামের সংমিশ্রণ হয়ে যায়। তাদেরকে এর প্রতি যতœশীল হতে হবে। আবার অনেক লোক আছেন যাদের আয়ের উৎস পুরোটাই হারাম। তাদের জন্য হারাম থেকে বেঁচে থাকাটা খুবই কঠিন। তবে সম্ভব হলে তারা এক মাসের জন্য ছুটি নিয়ে নেবেন এবং অন্য কোনো হালাল পেশা গ্রহণ করবেন। তা না হলে অন্তত কারো কাছ থেকে ঋণ নিয়ে হলেও নিজের এবং পরিবারের লোকদের জন্য রমজান মাসে হালাল রিজিকের ব্যবস্থা করা উচিত। এটা রমজানের দাবি। মানুষের জীবনে ব্যস্ততার কোনো অন্ত নেই। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তাদের কোনো না কোনো ব্যস্ততা থাকেই। এই ব্যস্ততার কারণে অনেকেই রমজানের পূর্ণাঙ্গ হক আদায় করতে পারেন না। তাদের জন্য উচিত হলো রমজানের পূর্বেই সব ঝামেলামুক্ত হওয়া। অন্তত রমজানের এক মাস যেন কাজের চাপ কিছুটা কম থাকে সে ব্যবস্থা করা। মানুষের সাধ্যের বাইরে কিছু নয়। ইচ্ছা করলে সবকিছু বাস্তবায়ন করাই তাদের পক্ষে সম্ভব। কেউ কেউ রমজানে অধিক খরচের দোহ্ইা দিয়ে ইনকামের সোর্স বাড়িয়ে দেন। সবকিছু বাদ দিয়ে টাকা রোজগারের ধান্দায় লেগে যান। এটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়। সংযম হচ্ছে রমজানের প্রধান শিক্ষা। সবকিছুতেই এই শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে রমজান আমাদের জীবনের জন্য কোনো ফায়দা বয়ে আনবে না। আমরা কেউই চাই না দুর্ভাগা হিসেবে নিজেকে দেখতে। তাই আসুন, আসন্ন রমজানকে সফল জীবন গঠনের ধাপ হিসেবে গ্রহণ করে এখন থেকেই এর পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আগামী রমজান হোক আমাদের সফলতার চূড়ান্ত ধাপÑএই প্রত্যয় নিয়ে তাকে স্বাগত জানাই।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়